ঐতিহ্যগত দর্শনগুলির মধ্যে একটি হলো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শক্তিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। পাশাপাশি শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতা অর্জন করা।
হুই পরিবারের সদস্যরা ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও চীনা ঐতিহ্য-সংস্কৃতির মিশেলে নিজেদের অনন্য করে তুলেছিলেন। হুইরা মার্শাল আর্টসে একটি মিশ্র প্রক্রিয়ার ধরন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। তারা মার্শাল আর্টসে নতুন গ্র্যান্ড মাস্টারদের জন্ম দিয়েছিল। উশু-কুংফুর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছা তাদের জন্য কোনো ব্যাপার ছিল না। বরং বলতে গেলে হুই-সন্তানদের জন্য এটি একপ্রকার নস্যি বিষয়।
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য দুইজন হুই গ্র্যান্ড মাস্টারের কথা আলোচনা করা হলো, যারা মার্শাল আর্ট অঙ্গনে বেশ চর্চিত ও সুবিদিত।
প্রথম ও সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ড মাস্টার ম্যা জিয়াঁদা
হুই মার্শাল আর্ট জগতের অন্যতম একজন হলেন, মুসলিম গ্র্যান্ডমাস্টার মা জিয়াঁদা। ম্যা জিয়াঁদার জন্ম ১৯৩৩ সালে। চীনের হেবেই প্রদেশে। তিনি মার্শাল শিল্পীদের বিশিষ্ট হুই পরিবারের ষষ্ঠ প্রজন্মের সন্তান। চীনা মার্শাল আর্টকে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দেওয়া মুষ্টিমেয় গ্র্যান্ড মাস্টারদের ‘নবম দুয়ান’ ছিলেন। তিনি প্রথম ও সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে এই র্যাঙ্কটি অর্জন করেছিলেন।
তার বাবা ও চাচা তাকে পাঁচ বছর বয়সে মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছিলেন। গ্র্যান্ডমাস্টার ম্যা জিয়াঁদা প্রচুর ঐতিহ্যবাহী উশু-শৈলী, বক্সিং ও মঙ্গোলিয়ান কুস্তি (শুয়াজ জিয়ান) এবং ফেন্চিং (অসি-তরবারি চালনা) শিখেছিলেন।
অনুমান করা হয়, যে তিনি কর্মজীবনে প্রায় ১০ হাজার শিষ্য-শিক্ষার্থীকে মার্শাল আর্ট শিখিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রখ্যাত জা চানজুন ও জেট লিও রয়েছেন।
১৯৮০ সালে তিনি মার্শাল আর্ট কোচ এবং জেট লি অভিনীত ‘দ্য শাওলিন টেম্পল’ চলচ্চিত্রের প্রধান কোরিওগ্রাফার হন। তারপরে তার বিশেরও বেশি শিক্ষার্থী উ ইয়ং, ‘মার্শাল হিরো’ উপাধি অর্জন করেছিলেন। এই উপাধী-পুরস্কারটি এমন অ্যাথলেটদের দেওয়া হয়, যারা চীনের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষ তিনে একাধিক স্থান অর্জন করেছেন।
পরবর্তীকালে ম্যা জিয়াঁদার দুই পুত্রই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। বলা যায়, এটি পারিবারিক উত্তরাধিকারের মতো একটি সম্পদ তাদের জন্য।
‘লায়ন অব চাইনিজ কুংফু’ ওয়াং জি-পিং
আরেকজন মুসলিম গ্র্যান্ডমাস্টারের কথা অবশ্য উল্লেখ্য; তার নাম ওয়াং জি-পিং। তিনি ১৮৮১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ১৯৭৩ অবধি বেঁচে ছিলেন। তার জীবনকালে তিনি ‘লায়ন অব চাইনিজ কুংফু’ উপাধি পুনরুদ্ধার করে ছিলেন। তার বাবা ও দাদা উভয়েই বিখ্যাত মার্শাল-আর্টিস্ট ছিলেন। তারা জি-পিং-কে মার্শাল আর্ট নিরুৎসাহিত ছিলেন। কারণ তারা চান নি যে, যে সমস্যার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছিল সে অভিজ্ঞতা জি-পিংয়েরও হোক। অন্যদিকে ওয়াং জি-পিং আর্টসে নিদারুণ অনুরাগী ছিলেন। এমনকি সাত বছর বয়সে নিজেই প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন।
তিনি সারা দেশে ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি উশু মাস্টার ইয়াং হং শিউয়ের অধীনে যাত্রা শুরু করেন। ভ্রমণের সময় তিনি ইয়াং হং শিউ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
লড়াইয়ের ময়দানে অনেকে তাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস করেছিলেন; তবে কেউ তাকে পরাজিত করতে পারেননি। জার্মান শ্রমিকদল, একদল জুডো খেলোয়াড় ও সুলিভান নামের আমেরিকান তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেও জয়লাভ করতে পারেনি।
১৯৪৯ বিপ্লবের পরে তিনি একজন বীর হিসেবে সম্মান লাভ করেন। এছাড়াও সাংহাইয়ের মাল্টিপিসিপাল পিপলস কংগ্রেসের ডেপুটি পদে, ন্যাশনাল উশু অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও অল-চীন স্পোর্টস ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন।
ম্যা জিয়াঁদা ও ওয়াং জি-পিং মুসলিম গ্র্যান্ডমাস্টারদের সুদীর্ঘ তালিকার দুইটি নামমাত্র। বিশ্বের অনেক মার্শাল আর্টিস্ট কেবল তাদের প্রশংসা করে না; বরং তারা তাদের জন্য অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের উৎস। তাদের অবদান, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও কীর্তি ইতিহাসে সবসময় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা ও প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯
এমএমইউ