ঢাকা: মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স.) ছিলেন মানবতার পথপ্রদর্শক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কাজে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর শিক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।
শনিবার (২১ নভেম্বর) ফেডারেশন অব চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) আয়োজিত ‘এফবিসিসিআই ক্লাউড স্কলার কনক্লেভ অন লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অব প্রফেট, মেসেঞ্জার অব পিস হযরত মোহাম্মদ (স.)’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইন্দোনেশিয়ার আল আযহার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আসেপ সাইফুদ্দিন, নাইজেরিয়ার ইসলামিক স্কলার শেখ আবুবকর এস মোহাম্মদ এবং তুরস্কের দ্যা ইকোনমিক পলিসি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও হিতিত ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ডিভাইনিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. হিলমি ডেমির।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, বিশ্বজুড়ে সব সমাজ ও সংস্কৃতিতে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের অতুলনীয় গুরুত্ব রয়েছে। ইসলাম এমনই এক ধর্ম, যা শান্তি ও সৌহার্দ্যের নির্যাস ধারণ করে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা মুসলিম এবং ইসলামের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, কুৎসামূলক, বৈষম্যমূলক এবং বর্ণবাদী মনোভাব ও আচরণের মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়ার ক্রম বৃদ্ধি দেখতে পারছি। অথচ আমাদের নবী (স.) সব ধর্মের অনুসারীদের প্রতি সহনশীলতা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে অগ্রদূত ছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের কর্মকাণ্ডে আমাদের নবী (স.) দ্বারা চর্চিত ও শিক্ষণীয় সততা, ন্যায়পরায়ণতা, নৈতিকতা, সহনশীলতা এবং ন্যায়ের মত স্বর্গীয় গুণাবলীর প্রতিফলন থাকা উচিত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতি হিসেবে আমাদের প্রস্তুতির কারণে আমরা পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করতে পেরেছি। আমরা এই প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। বরং আমরা এই মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিচ্ছি। এই যুদ্ধ জিততে বৈশ্বিকভাবে সামষ্টিক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, একতাই আমাদের শক্তি এবং এটাই আমাদের চুড়ান্ত বিজয়ী করবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, মহানবী (স.) মানুষকে বাড়িতে, সমাজে ও অন্যান্য ধর্মের প্রতি মানবিক হওয়া, কাজে দায়িত্বশীল হওয়া এবং সম্পর্কের প্রতি যত্মশীল হওয়ার বৈশ্বিক বার্তা দিয়ে গেছেন। যা জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মত আধুনিক বিভিন্ন সনদে অনুসৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, নেতৃত্ব ও দূরদর্শিতায় হযরত মোহাম্মদ (স.) এর শিক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে, যা গতিশীল অর্থনীতি, সামাজিকভাবে নারীর সমঅধিকার, স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৫ পর্যন্ত জাতীয় উন্নয়ন কৌশলে ফুটে উঠেছে। এ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে মধ্যম আয়ের দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ব্যক্তির পারলৌকিক মুক্তি ছাড়াও সমাজে ধর্মের তিনটি ভূমিকা আছে। প্রথমত আচার ও বিশ্বাস ভাগাভাগির মাধ্যমে ধর্ম মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ধরে রাখে। দ্বিতীয়ত ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখে। সবর্শেষ এটি অস্তিত্ব সম্পর্কীয় যে কোন প্রশ্নের উত্তর ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দেয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ কমতে থাকায় বিশ্বব্যাপী অসহিঞ্চুতা এবং অন্য ধর্মের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন বাড়ছে। হযরত মোহাম্মাদ (স.) এ ধরনের মানবসৃষ্ট সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার আসেপ সাইফুদ্দিন বলেন, ইসলামে মহামারী মোকাবেলাসহ সব সমস্যার সমাধান আছে। রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য কোয়ারেন্টিন খলিফা উমর ইবনে খাততাব (রা.) এর সময়ে প্রথম কার্যকর করা হয়।
নাইজেরিয়ার ইসলামিক স্কলার শেখ আবুবকর এস. মোহাম্মদ বলেন, আইয়ামে জাহিলিয়াতের সময় নারীদের সঙ্গে বিরুপ আচরণ করা হত। মহানবী হয়রত মোহাম্মদ (স.) এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। তিনি নারীদের স্বাধীনতা ও মুক্তির অনুমোদন করে এমন সমাজের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন, যা তার আগে কেউ করেনি।
তুরস্কের ড. হিলমি ডেমির বলেন, ইসলাম পরিবেশের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মানুষের ভূমিকা ঠিক করে দেয়। মানুষের সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে এমন প্রাকৃতিক আইনেরও বিধান দেয়। টেকসই উন্নয়নের বস্তুগত দিকের চেয়ে আধ্যাত্মিক দিক বেশি প্রাসঙ্গিক, যা লোভ নয় বরং সন্তুষ্টি, তাড়াহুড়ো নয় বরং ধৈর্য, অতিরিক্ত নয় বরং পরিমিত, একপক্ষীয় নয় বরং নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতা ও দুর্নীতি নয় বরং সহযোগিতা ও সমতার মাধ্যমে অর্জন করা যায়।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ। এফবিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজনু, মীর নিজাম উদ্দিন, নিজাম উদ্দিন রাজেশ ও পরিচালকবৃন্দ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
জিসিজি/এইচএমএস