আমাদের সমাজে কত রকম মানুষ, কত রকম মুসলমান। কেউ নামায পড়ে, কেউ পড়েনা, কেউ ভাল কাজ করে, কেউ খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে।
এতসব কাজের মধ্যে যে কাজটি আজকাল অহরহ চোখে পড়ে, তা হচ্ছে হাসির ছলে না বুঝে ইসলাম বা মুসলমানদের কোনো বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা।
বন্ধুদের আড্ডায় আপনিও হয়তো শুনেছেন, ওই দেখ, হুজুরের কি সুন্দর ছাগলা দাড়ি!! সবার সাথে আপনিও হয়তো হেসে ফেললেন হো হো করে।
কথা কথায় কারো অক্ষমতা বোঝাতে ‘মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত’ কথাটি আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি। কখনো ভেবে দেখেছেন, এ কথায় কাকে ঠাট্টা করা হল- আল্লাহর ঘর মসজিদ নাকি মোল্লা মৌলভীকে?
আমাদের নাটক সিনোমাতেও কখনো কখনো না বুঝে ইমাম বা হুজুর চরিত্র রূপায়ন করা হয় কোনো একটি নেতিবাচক বিষয়ের সাথে সম্পর্ক রেখে, এতে দর্শকদের মনে জন্ম নিতে পারে বিরূপ ধারণা।
প্রিয় পাঠক, আল্লাহ পাকের কাছে যে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং তিনি যেগুলোর কারণে বান্দার সব আমল বাতিল করে দিতে পারেন, এসবের অন্যতম হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম বা ইসলাম সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করা।
শুধু কি আমল বাতিল হয়ে যাওয়া, বরং কোনো কোনো কথা ও ঠাট্টা তো আপনাকে ইসলাম থেকে বের করে দেবে আপনার অজান্তেই।
এজন্যই আলেমরা বলেন, নামাজ না পড়া কুফুরি নয়, কিন্তু নামাজ বা নামাজীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কিংবা তামাশা করা কুফুরি। মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল, তারা মুসলমানদের নিয়ে হাসি তামাশা করতো, তাদের বোকা ভাবতো। আল্লাহ পাক তাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তারাই বোকা অথচ নিজেরা তা জানে না। ’ (সূরা বাকারা-১৩)
ইমাম ইবনে কুদামাহ লিখেছেন, যে আল্লাহকে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গালি দিল, কিংবা যে আল্লাহ বা তার রাসুল কিংবা দ্বীনের কোনো বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করল, সে কাফের হয়ে গেল। (আল মুগনী)
ইমাম নববী বলেন, স্বেচ্ছায় কিংবা কেউ যদি স্পষ্টভাবে এমন কোনো কথা বলে যা আল্লাহ ও তার রাসুলের কোনো বিধানকে তুচ্ছ করে, তা অবশ্যই কুফুরি।
ইমাম কুরতুবী লিখেছেন, মজা করার জন্য হোক বা সত্যি সত্যি হোক, ইসলামের কোনো সাধারণ বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা করাও কুফুরি। এতে কারো দ্বিমত নেই।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, দ্বীনের যে কোনো স্পষ্ট বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফুরি। যে এমন করল তার ইমান ধ্বংস হয়ে কুফুরিতে পরিণত হল।
আর তাই কোনো একজন সাধারণ মানুষ, যে দাড়ি রেখে দ্বীনের ওপর চলতে সচেষ্ট, যে নারী পর্দা রেখে চলতে চায়, তাকে যদি এ কারণে কেউ তুচ্ছ ভাবে কিংবা তামাশার দৃষ্টিতে দেখে, তবে নিশ্চয়ই বিষয়টি গিয়ে দ্বীনের সীমারেখা পর্যন্ত পৌঁছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক বিষয়।
অনেক নামাযী মানুষ কিংবা দাড়িওয়ালা হয়তো অপকর্মে লিপ্ত, তার কর্মের জন্য সে নিজেই দায়ী। ধর্মের লেবাসধারীর অপকর্মের দায়ভার কোনো মতেই ধর্মের নয়। তাই তার ধর্মকে গালমন্দ করা বৈধ নয়, কারণ এটি তার স্বভাবের দোষ, তার নামায কিংবা আমলের এতে কোনো হাত নেই।
অহরহ পথে ঘাটে এসব বিষয় নিয়ে ‘মশকরা’ করায় মানুষ নিজের অজান্তেই তার দ্বীন থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যেতে পারে, সামান্য ‘বিদ্রুপে’ শেষ হয়ে যেতে পারে এতদিনের সব নেক আমল।
আল্লাহ পাক এমন লোকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা বলবে, আমরা একটু হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে নিয়ে এবং তার আয়াতসমূহ ও তার রাসুলকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছ? তোমরা কারণ দেখিয়ো না, তোমরা তো তোমাদের ঈমানের পরও কুফুরি করে ফেলেছো। ’ (সূরা তওবা-৬৫-৬৬)
পবিত্র কুরআনে অভিশপ্ত জাতিদের যেসব ঘটনা বিবৃত রয়েছে, তারা তাদের নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতো, নবীর অনুসারীদের নিয়ে পথে ঘাটে বিদ্রুপ করতো, আল্লাহ পাক তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন, পরকালেও তাদের এর বদলা দিবেন আল্লাহ।
মদীনার মুনাফিকদের অবস্থাও ছিল একই রকম। যা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবের বিবরণে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত।
খুব সংক্ষেপে কিছুটা হলেও আপনি হয়তো এর ভয়াবহতা অনুমান করতে পেরেছেন। আর তাই আজ থেকে সব বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা নয়, ইসলাম এবং এর সাথে সম্পর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য নয়, সামান্য একটু হাসির জন্য নিজের সব ইমান আমল বিকিয়ে দেওয়া কোনো সচেতন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০২২
এসআই