বাগেরহাট: বাগেরহাটে অর্ধশত বছর বয়সী মৃত মেহগনি গাছের ওপরে মুসলিম ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন শরীফের রেহেল ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। নান্দনিক এই ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দর্শনার্থীরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চত্বরে এ ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এম এ মতিন। ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মতিন। এরপর থেকে ইউনিয়ন পরিষদকে জনকল্যাণমুখী এবং শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গড়তে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেন তিনি।
ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে আধুনিক মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদের ম্যাপ, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেন তিনি। এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে থাকা অর্ধশত বছর বয়সী রেইনট্রি অর্থাৎ মেহগনি গাছ মারা যায়। বিশালাকৃতির মৃত মেহগনি গাছটিকে বিক্রি না করে সৃজনশীল কিছু করার উদ্যোগ নেন চেয়ারম্যান। পরিষদের সব সদস্যের সম্মতিতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মৃত গাছের ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন শরীফের রেহেলের ভাস্কর্য তৈরির সিদ্ধান্ত নেন সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এম এ মতিন। খুলনা ও বরিশাল এলাকার ৫ জন কাঠমিস্ত্রি ৯ মাসের চেষ্টায় তৈরি করেছেন ১৫ ফুট উচ্চতার রেহেলটি। এদের সঙ্গে কয়েকজন রাজমিস্ত্রিও কাজ করেছেন কিছুদিন। নান্দনিক রেহেলটিতে কোরআন শরীফের দুইটি আয়াত, কালিমায়ে তাইয়্যেবা ও শাহাদৎ লেখা রয়েছে।
গাছের চার পাশে ঘিরে দেওয়া হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। সুসজ্জিত আলোক সজ্জায় রাতের আঁধারেও উপভোগ করা যায় রেহেলের সৌন্দর্য। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লি ও দর্শনার্থীরা আসেন নজরকাড়া রেহেলটি দেখতে। আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী এই ভাস্কর্য দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। যাত্রাপুর ইউনিয়ন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সদ্য বিদায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মতিন ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরকে অনেক অর্থবহ করে সাজিয়েছেন। চত্বরে একটি মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, ম্যাপ ও পরিষদে প্রবেশদ্বারে একটি আধুনিক গেট তৈরি করেছেন। সর্বশেষ চত্বরে মৃত মেহগনি গাছের ওপর কোরআন শরীফের রেহেলের একটি সাদৃশ্য তৈরি করেছেন। এটির এক পাশে কালেমা তাইয়্যেবা, সূরা ফাতিহাসহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত লিখেছেন। যা দেখলে মানুষের মধ্যে পরকালের চিন্তা-ভাবনা আসে। এই ধরনের সৃজনশীল কাজ স্বাভাবিক দেখা যায় না। ব্যতিক্রমী এই ইসলামিক ভাস্কর্য দেখতে অনেক লোক আসেন এখানে। কচুয়া থেকে রেহেলের ভাস্কর্য দেখতে আসা সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদে একটি কাঠের রেহেল ভাস্কর্য তৈরি হয়েছে। তাই দেখতে এলাম। ভাস্কর্যটির রং, শরীরের লেখা ও নির্মাণ শৈলী আমাদের মুগ্ধ করেছে। কাঠের ওপর এমন আকর্ষণীয় নির্মাণ শৈলী সহজে দেখা যায় না।
যাত্রাপুর বাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমিন বলেন, প্রতিদিন অনেক মানুষ রেহেল দেখতে আসেন। আমাদের খুবই ভালো লাগে।
রেহেল ভাস্কর্য দেখতে আসা শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম বলেন, কাঠের ওপর এত সুন্দর ভাস্কর্য হয় এখানে না এলে তা বুঝতাম না। বন্ধুদের সঙ্গে এখানে এসে আমাদের খুব ভালো লেগেছে।
সদস্য বিদায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ মতিন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১১ সালে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে আমি এখানের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এরপর থেকে ইউনিয়নবাসীর কল্যাণসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেছি নীরবে। পরিষদ চত্বরে মসজিদের সামনে থাকা দীর্ঘদিনের পুরনো একটি রেইনট্রি গাছ হঠাৎ করে মারা যায়। গাছটি না কেটে এটিকে সৃজনশীল কাজে লাগানোর চেষ্টা করি আমরা। একপর্যায়ে সবার সম্মতিতে এই গাছের ওপর সৌদি আরবের কোরআন গেটের আদলে কোরআনের রেহেলের ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু করি আমরা। ৫-৬ জন শ্রমিক ৮-৯ মাস চেষ্টা করে এই রেহেলের ভাস্কর্য তৈরি করে। এই কাজ সমাপ্ত করতে পেরে আমি আনন্দিত। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই।
এমএ মতিন আরও বলেন, ভাস্কর্যটি তৈরি হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এখানে দেখতে আসেন। ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। এই ভাস্কর্যটিকে কেন্দ্র এই চত্বরটি এক সময় দর্শনীয় স্থানে রূপ নেবে বলে আশাবাদী তিনি।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বেগ এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিদায়ী চেয়ারম্যান এমএ মতিন ইউনিয়ন পরিষদকে অনেক ভালোভাবে সাজিয়েছেন। কাঠ দিয়ে রেহেলের ভাস্কর্য তৈরির ফলে পরিষদের সৌন্দর্য অনেক গুণে বেড়েছে। এজন্য তাকে আমি স্বাগত জানাই। এই রেহাল দেখতে প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থীরা আসছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে আরও বেশি দর্শনার্থী আসেন। ইউনিয়ন পরিষদকে জনকল্যাণমুখী ও দর্শনার্থীবান্ধব করে আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২২
এএটি