ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় নির্মাণ করা হয়েছে নয়ন জুড়ানো একটি ইকো মসজিদ। মসজিদটির নাম বায়তুর রহমান জামে মসজিদ।
পরিবেশবান্ধব ব্যতিক্রমধর্মী এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মাটির তৈরি ফলক বা টালি দিয়ে। টালি দিয়ে তৈরি করায় এর নির্মাণশৈলী এবং পুরো চত্বরের দৃশ্য দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার। এছাড়া টালি দিয়ে নির্মাণ করায় মসজিদের ভেতরে সব সময় শীতল থাকে। ফলে এখানে নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
এটি স্থানীয় সমাজসেবক ও ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নির্মিত। জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের খাটরার নীলচক এলাকায় প্রায় তিন শতাংশ জমির ওপর এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এ মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়।
জানা যায়, খাটরা নামের গ্রামটিতে ব্রিটিশ আমলে নীল চাষ হতো। তাই তো দৃষ্টিনন্দন বায়তুর রহমান জামে মসজিদটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সে জায়গাটা এখনও "নীলচক" নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে এ অঞ্চলের নীলচাষ বন্ধ হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি গ্রামটিতে। এছাড়া এখানকার অধিকাংশ মানুষ অস্বচ্ছল। এজন্য মসজিদ-মাদরাসাও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে অন্য কোনো মসজিদও সেভাবে চোখে পড়ে না। এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতেই নামাজ আদায় করতেন। তাদের কথা জানতে পারেন স্থানীয় মোহাম্মদ আরিফুর রহমান। পরে তারই পরিকল্পনা ও অর্থায়নে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি পরিচালনার জন্য রয়েছে একটি কমিটি। যারা এখানে নামাজ আদায় করেন, তাদের ভেতর থেকেই শুধু রাখা হয়েছে এ কমিটিতে।
মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ অঞ্চলে তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাই গরমে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে কষ্ট হয়। এ কথা মাথায় রেখে টালির ছাদ দিয়ে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ টালির ছাদ থাকায় প্রচণ্ড গরমেও মসজিদের ভেতরে ঠাণ্ডা থাকে। মুসল্লিদের কষ্ট কম হয়।
মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহেদ আলী মাতুব্বর বাংলানিউজকে বলেন, এ মসজিদটিতে একসঙ্গে ১০০/১২০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে শৌচাগার, টিউবওয়েল ও ইমামের থাকার ঘর থাকলে ভালো হয়।
মসজিদটি ইমাম হাফেজ মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যতিক্রম দৃষ্টিনন্দন মসজিদটিতে নামাজ পড়াতে পেরে ভালো লাগে।
মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১ সালের মে মাসে আমার মা মারা যান। বাবা মারা গেছেন ২০০৭ সালে। বাবা-মায়ের জন্য সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে কিছু করার চিন্তা করছিলাম। পরে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম এ এলাকায় একটি মসজিদ দরকার। তাই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য আমাদের কল্যাণমুখী ফাউন্ডেশন (আলহাজ্ব সাইদুল-কোহিনুর ফাউন্ডেশন) থেকে মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মাতা-পিতার রুহের মাগফিরাত কামনা করে এ পরিবেশবান্ধব মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করি। মসজিদটি পরিবেশবান্ধব করে নির্মাণের উদ্দেশ্য হলো- যাতে আল্লাহ তায়ালার বান্দারা সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে প্রাণভরে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন, তাকে স্মরণ করতে পারেন।
ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, এ উপজেলায় যে এ রকম একটি দৃষ্টিনন্দন ও ইকো মসজিদ রয়েছে, তা জানতাম না। এখন শুনে অনেক ভালো লাগছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২২
এসআই