ঝালকাঠি: ঝালকাঠিতে ২০১৮ সালে পাঁচটি মসজিদ নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে।
জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে দুটি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে প্রকল্পের নির্ধারিত সময় পার হয়েছে। ফলে ঝালকাঠি সদর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ঝালকাঠি জেলা ও সদর উপজেলা পর্যায়ে দুটি, রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও নলছিটিতে একটি করে মোট পাঁচটি মডেল মসজিদ নির্মাণের কার্যাদেশ পায় চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪৩ শতক জমির ওপর নির্দিষ্ট নকশায় প্রতিটি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে চারতলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। কাঁঠালিয়া উপজেলা মডেল মসজিদের জায়গা নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। পাঁচটি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এর মধ্যে রাজাপুর মডেল মসজিদটি গত বছরের জুনে উদ্বোধন করা হয়েছে। নলছিটি মডেল মসজিদের কাজ এক বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমানে চলমান রয়েছে। জেলা পর্যায়ের মসজিদটি নির্মাণ হবে ঝালকাঠি শহরের কলেজ মোড়ে। সেখানে নিচু জমি ভরাট করে ঠিকাদার নির্মাণকাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সদর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা মডেল মসজিদের জায়গা নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। ঝালকাঠি কলেজ মোড়ে খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক সড়কের পাশে জেলা পর্যায়ের মডেল মসজিদের জন্য ৪৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর এক হাজার গজের মধ্যেই মানপাশা টেম্পো স্ট্যান্ডের পাশে সদর উপজেলার মডেল মসজিদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। দুটি মসজিদের অবস্থান কাছাকাছি হওয়ায় সদর উপজেলার মডেল মসজিদটি শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্থানান্তর করা হয়।
বাসস্ট্যান্ডের কাছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের একটি পরিত্যক্ত জায়গা নির্ধারণ করে গণপূর্ত বিভাগ কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেই জায়গা নিজেদের কাজে লাগবে বলে গণপূর্তকে জানায়। এতে সদর উপজেলার মসজিদ নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কাঁঠালিয়া উপজেলা মডেল মসজিদের জায়গা নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কাঁঠালিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের একজন সার্ভেয়ার ভাণ্ডারিয়া-কাঁঠালিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে ৪৩ শতক জমি মেপে মসজিদের জায়গা অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করে দেন কিন্তু পরে দেখা যায়, ওই জমি ৪০ শতাংশ সড়কের এক পাশে এবং অন্য ৩ শতাংশ সড়কের আরেক পাশে। জমির মালিক আলাদা, খতিয়ান ও দাগ আলাদা। এতে জমি অধিগ্রহণের কাজ আটকে আছে। তিন-চার বছরেও উপজেলা সদরের মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থান নির্বাচন না হওয়াটা দুঃখজনক বলেছেন শহরের গুরুধাম এলাকার আইনজীবী কামাল হোসেন টিটু। তিনি বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন এত দেরি হচ্ছে? কাদের গাফিলতির জন্য এত দেরি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কাঁঠালিয়ার লঞ্চঘাট এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, পাশের উপজেলা রাজাপুরে মডেল মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে। আমাদের উপজেলার মসজিদের কাজ আটকে আছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় উপজেলাবাসী নান্দনিক স্থাপনার মসজিদটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ’
সদর ও নলছিটি মডেল মসজিদ নির্মাণকাজের ঠিকাদার শানু গাজী বলেন, সদর উপজেলার মসজিদের জায়গা পেলেই কাজ শুরু করা হবে। নলছিটি মডেল মসজিদের কাজে বেশি জনবল নিয়োগ করে দ্রুত শেষ করা হবে।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাবিল হোসেন বলেন, ‘ভবিষ্যতে খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেন হলে আমাদের বর্তমান অফিস ভবনটি বাসস্ট্যান্ডের পাশের ওই জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। এ জন্য মডেল মসজিদের জন্য জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। সড়ক বিভাগ বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে। ’
গণপূর্ত বিভাগের ঝালকাঠি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে মসজিদের স্থান নির্ধারণ, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে নির্মাণকাজে কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়েছে। জমি নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কটি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা এপ্রিল ০৬, ২০২২
আরএ