ঈদ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব দিবস এবং ইসলামের একটি ধর্মীয় দিবস। ধর্মীয় দৃষ্টিতে রয়েছে এর বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব।
অন্যদিনের চেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা এ দিনের বিশেষ সুন্নত। দেহের অবাঞ্চিত পশম পরিষ্কার করে, দাঁত মেসওয়াক করে, ভালোভাবে গোসল করা এ দিনের প্রস্তুতির বিশেষ অংশ।
সাধ্যের মধ্যে উত্তম পোশাক পরিধান এ দিনের অন্যতম সুন্নত। তবে পোশাক নতুন হওয়ার ব্যাপারে শরিয়তের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নতুন-পুরাতন যেকোনো ধরণের পোশাক হলেই চলবে। তবে উত্তম হওয়াটা কাম্য। উত্তম পোশাক বলতে প্রথমেই বুঝাবে এমন ধরণের পোশাক যা মহানবী (সা.)-এর পোশাকের মতো হবে। যে পোশাকের ডিজাইন মহানবী (সা.)-এর পোশাকের ডিজাইন থেকে যত দূরে হবে সে পোশাক ততো বেশি অনুত্তম পোশাক বলে বিবেচিত হবে।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পোশাক কেমন ছিল, সে বর্ণনা হাদিস গ্রন্থসমূহের পোশাক অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, টুপি ও পাগড়ি দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা নবী করিম (সা.) ও তার প্রিয় সাহাবিদের পোশাকের অবিচ্ছেদ্য সুন্নত। বিনা ওজরে ঈদের দিন টুপির প্রতি অবহেলা ও শিথিলতা প্রদর্শন করে খালি মাথায় ঈদগাহে যাওয়ার দ্বারা নিছক সুন্নতের প্রতি অনাগ্রহই প্রকাশ পায় না, বরং সেই সঙ্গে সমাজ, সময় ও পরিবেশের ব্যাপারে অসচেতনতাও বিকটভাবে প্রকাশ পায়।
পোশাকের সুন্নতি ডিজাইন সঠিক থাকা সাপেক্ষে পোশাকের গুণগত মান উত্তম হওয়াটাও পোশাক উত্তম হওয়ার অংশ। তাই আল্লাহতায়ালা যাদের সামর্থ্য দিয়েছেন তারা তাদের সামর্থ্য অনুপাতে ভালো মানের পোশাক পরে ঈদগাহে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। এর দ্বারা আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ পাবে।
সুবাস ব্যবহার করাও ঈদের সুন্নত।
ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খাওয়া নবীজীর (সা.) সুন্নত। সংগ্রহে খেজুর না থাকলে যেকোনো মিষ্টান্ন দ্রব্যই খাওয়া যেতে পারে। তাও সংগ্রহে না থাকলে যেকোনো ধরণের খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।
তবে যাদের খেজুর খরিদ করার সামর্থ্য আছে, তাদের উচিৎ নবী করিম (সা.)-এর সুন্নত পালনের প্রস্তুতি হিসেবে ঈদের দিনের জন্য আগেই খেজুর খরিদ করে রাখা। যেন এ সুন্নতের ওপর আমল করা সম্ভব হয়।
ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, এক পথ দিয়ে ঈদগাহে যেয়ে অন্য পথে বাড়িতে ফিরে আসা এগুলোও ঈদের সুন্নত। ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিম্নস্বরে এ তাকবির বলতে থাকা সুন্নত। তাকবিরটি হলো-
اَلله اَكْبَر اَلله اكْبَر لَا اِلهَ اِلَّا الله اَلله اَكْبَر اَلله اَكْبَر وَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
সকাল সকাল ঈদগাহে যেয়ে নামাজান্তে ইমামের খুৎবা মনোযোগের সঙ্গে শোনাও সুন্নত। ফেতরা আদায় না করে থাকলে ঈদের নামাজের আগেই ফেতরা দিয়ে শেষ করতে হয়।
মনে রাখতে হবে, এ দিনটি আসমানের মালিকের পক্ষ থেকে ঘোষিত বিশেষ উৎসবের দিন। তাই এ দিনে মুখ গোমরা করে না রেখে, হাসিমুখে থাকতে হয়।
শরিয়ত অনুমোদিত উৎসবমুখর যেকোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উৎসবের আমেজ সবার ভেতর ছড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ শরিয়তে রয়েছে। উৎসব উপভোগ করার জন্য নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, তাদের খোঁজ খবর নেওয়া, তাদের দাওয়াত করা এগুলোও মুসলমানদের আবহমান কালের ঈদ সংস্কৃতির অংশ ও মুসলিম ঐতিহ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২২
এসআই