কিন্তু খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে লজ্জাজনক পরাজয় উড়ন্ত জাপার ধপাস পতন হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, টানা তিনটি নির্বাচনে ভালো ফলাফলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গাভাব চলে এসেছিল।
জনগণ আর প্রার্থী খুঁজবে না, শুধু লাঙল মার্কা দেখেই ভোট দেবে- বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ঠিক তখনই খুলনা সিটি করপোরেশনে লজ্জাজনক পরাজয়ে বেলুনের ফুটোর মতো চুপষে গেছে জাতীয় পার্টি। হুঙ্কার দিয়ে নির্বাচনে নামলে শেষ পর্যন্ত জামানতও রক্ষা করতে পারেননি জাপা প্রার্থী। চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন ভোটারের মধ্যে জাপার মেয়র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান মুসফিক পেয়েছেন মাত্র এক হাজার ৭৭ ভোট।
জাপার এমন লজ্জাজনক পরাজয়ে দলের মধ্যেই চলছে নানা রকম বিশ্লেষণ। বিশেষ করে ‘হায়ার’ করা নেতা দিয়ে নির্বাচন করার বিপক্ষে সরব কর্মীরা। অনেক নেতাই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরশাদকে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, খুলনায় পরাজয়ের পর পার্টির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো সভা সমাবেশেও এ নিয়ে কথা বলেননি পার্টি চেয়ারম্যান। তবে নির্বাচনের দুইদিন পরেই খুলনা মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
একজন অজনপ্রিয় নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে সরব হয়েছেন খুলনার নেতারা। কেন্দ্র বুঝতে না পারলেও স্থানীয় নেতারা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন নির্বাচনের ফল।
যে কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এসএম শফিকুর রহমান মুসফিককে যখন দলে যোগদান করানো ও মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করার পর পদত্যাগ করেন খুলনা মহানগর জাপার সভাপতি সম্পাদকসহ ২৬ নেতা।
তখন পদত্যাগকারীরা মুসফিককে ‘খুনি’ হিসেবে উল্লেখ করে দলে নেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই অভিযোগ, আমলে নেয়নি কেন্দ্র। বরং গণপদত্যাগের পরে খুলনা মহানগর কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সদস্য সচিব করা হয় সমালোচিত মুসফিককে।
তৃণমূল নেতাদের অনেকেই বলেছেন, ওই সময় তৃণমূলের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালেন এরশাদ নিজেই। যে আগুনে জাপা পুড়েছে।
সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাদের নানা অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেছেন, পার্টিতে তৃণমূলে কার কি অবদান সেটা মূল্যায়ন করা হয় না। এরশাদের বাসা ও অফিসে যাতায়াত করলে, বিশেষ কিছু নেতার সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে দ্রুত প্রমোশন হয়ে যায়। তৃণমূলের নেতারা চেনেনই না এমন অনেকে কেন্দ্রীয় নেতা বনে যাওয়ার নজিরও রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
তৃণমূলের নেতারা বলছেন, শুধু খুলনা নয়, এমন অনেক জেলা রয়েছে যেখানে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে হায়ার করা লোকের হাতে দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে খুলনার মতো আরও পরাজয় দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে পার্টি প্রধানকে।
জাপা সূত্র বলছে, পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে এতদিন যারা আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন তারাও এখন নড়ে বসেছেন। যদিও অনেকেই মনে করেন জাপার এতসব শোডাউন বেশিরভাগেই ভাড়া করা ও লোক দেখানো। কোনো কোনো জায়গায় কিছু কাজ হয়েছে তাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
এ বিষয়ে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ করে একটা লোক দলে এসে অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এটা দেখা হবে। দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দিয়ে নতুন করে কমিটি করা হবে।
‘তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মন মতো প্রার্থী না হওয়ায় তারা মাঠে নামেনি, দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। যে কারণে খুলনায় যথেষ্ট জনসমর্থন থাকার পরও এমন খারাপ ফল হয়েছে। কারণ জাপা ক্ষমতায় থাকার সময়ে খুলনার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জনগণ সে কথা এখনও ভুলে যায়নি। ’
ফলাফল বিপর্যয়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় অনেক রয়েছে। আশা করি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
এসআই/এমএ