ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

এরশাদের ভারত সফরে বরফ কি গলবে!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৮
এরশাদের ভারত সফরে বরফ কি গলবে! হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ

ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ভারত সফর মান ভাঙানো নাকি সম্পর্ক উন্নয়নের। এমন আলোচনাই ঘুরে ফিরে আসছে রাজনৈতিক মহলে।

অনেকে মনে করছেন— এরশাদ যা দেখিয়েছেন তারপর আর সম্পর্ক উন্নয়নের প্রশ্নই আসে না। একটা বিষয় হতে পারে, ক্ষততে কিছুটা প্রলেপ দেওয়া।

এরশাদের সেই বৈরী আচরণের সময় ভারতে ক্ষমতায় ছিলো কংগ্রেস। এখন যেহেতু বিজেপির সরকার ক্ষমতায় তাই বলে-কয়ে যদি কিছুটা বরফ গলানো যায়!

এক্ষেত্রেও হতাশাবাদী রয়েছেন। তাদের মত, বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে যতটা বৈদেশিক নীতির হেরফের হয়, ভারতে তেমনটা নয়। কংগ্রেস সরকারের পতনে বিএনপির লোকজন বেশ উল্লসিত ছিলো; তারা ভেবেছিলো—এবার আর আওয়ামী লীগের রক্ষা নেই।

বিএনপি মনে করতো, কংগ্রেস সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে এক তরফা নির্বাচন করে পার পেয়েছে আওয়ামী লীগ। যেহেতু ভারতে ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে পালিয়ে বাঁচা ছাড়া উপায় থাকবে না আওয়ামী লীগের। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর হাবভাবে তার কোন ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি।

বরং ক্ষেত্রবিশেষে কংগ্রেসের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ নীতি। দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময় তারই নমুনা। সে কারণে এরশাদের ভারত সফর খুব একটা ফলদায়ক হবে—এমন আশা করতে পারছেন না খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাই। তারাও শঙ্কিত আদৌ বরফ গলবে কিনা!

কেন এরশাদে নাখোশ দিল্লি
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বেঁকে বসেন এরশাদ। ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। এরপর জাতীয় পার্টির মধ্যে দুটি ধারা তৈরি হয়। এরশাদের নেতৃত্বে কিছুসংখ্যক নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নিজ নিজ আসন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তারা।

আরেকটি ধারা সামনে আসে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে। তারা নির্বাচনে থেকে যান। এ সময় বেশ কয়েকদিন বারিধারার বাসায় অনেকটা নজরবন্দি ছিলেন এরশাদ। আর সেই সময়ে এরশাদের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং।

চল্লিশ মিনিট স্থায়ী ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে  বক্তব্য রাখেন এরশাদ। সেদিন তিনি বলেন, “তারা (ভারত) আমাকে বলেছে, আমি নির্বাচন না করলে দেশে উগ্রপন্থি-মৌলবাদীদের উত্থান হতে পারে। জবাবে আমি বলেছি, আমরাও মনে করি, এ রকম হতে পারে। আমরাও চাই না সেটা হোক, কিন্তু সরকারই এ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এর দায় সরকারকেই নিতে হবে। ”

এরশাদের সেই বক্তব্যের পর অনেকেই নড়েচড়ে বসেছিলেন। জাতীয় পার্টির সিনিয়র অনেক নেতাই তখন রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, প্রেসের সামনে এভাবে কথা বলা ঠিক হলো না। এটা কোনো কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। এ জন্য অনেক মাসুল দিতে হতে পারে।

এরপর গঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে। নির্বাচনের পর এরশাদ নিজে বিরোধী দলীয় নেতা হতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী রওশন এরশাদের কাছে পাত্তা না পেয়ে আওয়ামী লীগের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। শেষে নাকি ভারতের মাধ্যমেও দূতিয়ালি করার চেষ্টা করেন তিনি। তখন ভারত নাকি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলো, এরশাদে তাদের আস্থা নেই।

বহাল তবিয়তে বিরোধী দলীয় নেতার আসনে রওশন এরশাদ। এমনকি জি এম কাদেরকেও ভারত আস্থায় নিতে পারছে না। কারণ, বিগত নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে এরশাদের সঙ্গে একাট্টা ছিলেন জিএম কাদেরও।

কেন এরশাদ সেদিন বেঁকে বসেছিলেন
এ বিষয়ে কোনদিনই খোলাসা করা হয়নি এরশাদ কিংবা দলের পক্ষ থেকে। তবে একাধিক সিনিয়র নেতা মনে করেন, একটি প্রভাবশালী দেশের কূটনৈতিকের পরামর্শে তিনি এমন অবস্থান নিয়েছিলেন। আর এতে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারী ও তৎকালীন দলের ট্রেজারার মেজর (অব.) খালেদ আক্তার। কেউ কেউ খালেদ আক্তারের বিশেষভাবে লাভবান হওয়ার গন্ধও খোঁজেন।

সবশেষ ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই দলের শীর্ষ পর্যায়ের ৪ নেতাকে নিয়ে ভারত সফর করেন এরশাদ। এর আগে এপ্রিল মাসে জন্মস্থান ভারতের কুচবিহার ও ২০১৬ সালের ১৮ জুন চারদিনের সফরে দিল্লি ভ্রমণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি।

ওই সফরকে ব্যক্তিগত বলা হলেও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব, লোকসভার ডেপুটি স্পিকার, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, সাবেক সেনাপ্রধান ও বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালক জেনারেল (অব.) নির্মল চন্দ্র ভিজ, রাজ্যসভার ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এরশাদ।

রোববার (২২ জুলাই) জাতীয় পার্টির ৪ শীর্ষ নেতাকে নিয়ে দিল্লি সফরে গেছেন এরশাদ। সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভারত সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা রকম গুঞ্জন।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪. ২০১৮
এসআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।