ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয় পার্টি

জীবনের ‘শেষ’ নির্বাচনে জয় চান রওশন 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
জীবনের ‘শেষ’ নির্বাচনে জয় চান রওশন  আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জাপা জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। ছবি: বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: বয়স আশি পেরিয়েছে আগেই। তবে বলা চলে, বয়সকে হার মানিয়েই রাজনীতিতে পথ চলছেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। 

রাজনীতির দীর্ঘ পরিক্রমায় একাধিকবার সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছেন। এখনও এমপি ময়মনসিংহ-৪ আসনের, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা।

জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় ‘উত্তীর্ণ’ রওশন এরশাদ এবার ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে জীবনের শেষ নির্বাচন করতে যাচ্ছেন!  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের জন্মভিটার এই আসনটিতে লাঙল প্রতীক নিয়েই বিজয় কেতন উড়াতে চান তিনি, এগিয়ে নিতে চান দেশকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার কাজে অবদান রাখতে নিজ নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেছেন রওশন।  

এমনকি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগিতা ছাড়া ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দেওয়া নিজের জন্য কঠিন বলেই মনে করেন তিনি।  

বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বর্ধিত সভায় রওশন এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স হয়েছে। হয়তো এরপর আর ইলেকশন করা সম্ভব হবে না। আরো কিছু কাজ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। সবাই মিলে আমাকে সাহায্য-সহযোগিতা করলে আমরা এই বাঁধা (নির্বাচনের) উৎরাতে পারবো। ’ 

জাতীয় পার্টির দুঃসময়ে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে বিএনপির প্রয়াত একেএম ফজলুল হককে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ।  

এরপর অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদে রংপুরের একটি আসন থেকে ভোট করে সংসদ সদস্য হন।  

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটসঙ্গী হওয়ার পর তাদের ছাড়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বান্দ্বতায় ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে এমপি হন। এবারো মহাজোট প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকেই ভোটে লড়ছেন তিনি।  

তার সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ।  

জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থেকেও কাঙ্ক্ষিত আসন না পেয়ে ভেতরে ভেতরে অসন্তুষ্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে গত সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে ময়মনসিংহে আসেন রওশন এরশাদ।  

এরপর কয়েক দফা তিনি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচনী ছক সাজান। ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাফেজ রুহুল আমিন মাদানীকে সমর্থন দিয়ে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। রওশনের এই সিদ্ধান্ত ‘তুষ্ট’ করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের।  

সূত্র মতে, চার জেলার সমন্বয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডসহ দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত প্রাণের দাবিসমূহ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিজ কৃতিত্বের দৌলতে আদায় করে ময়মনসিংহবাসীকে উপহার দেওয়ার বিষয়টি ভোটের মাঠে ‘ফোকাস’ করতে বলেছেন রওশন এরশাদ।  

নিজের নির্বাচনী লিফলেটেও গুরুত্ব দিয়ে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই ময়মনসিংহের একাধিক স্থানে তার পথসভা করারও কথা রয়েছে।  

জেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ভোটের মাঠে ব্যক্তি ইমেজে সবার চেয়ে এগিয়ে রওশন এরশাদ। তার সততা ভোটারদের কাছে ইতিবাচক। মহাজোটের নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও ইমেজ এই দুইয়ের সমন্বয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটে হাসবেন রওশন এরশাদই।  

রওশনের নির্বাচনী খরচ বহন করবে কারা? 
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রওশন এরশাদের নির্বাচনী খরচ বহন করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম এবং সদ্য সাবেক ধর্মমন্ত্রীপুত্র মোহিত উর রহমান শান্ত।  

জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় রওশন বলেছেন, ‘আমি শামীম ও শান্তকে বলেছি, আমার ওভাবে টাকা-পয়সা নেই। ওরা আমার সন্তানের মতো। ওরা বলেছে বিষয়টি দেখবে। আপনাদের (দলীয় নেতা-কর্মী) সেটা বুঝতে হবে। আমাকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। ওরা সবাই মিলে যদি সাহায্য-সহযোগিতা করে তাহলে আমরা এই বাঁধা উৎরাতে পারবো।  

বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম, সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন অ্যাডভোকেট, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো: ইকরামুল হক টিটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮ 
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।