ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

পথশিশুদের আনন্দময় একদিন

স্টাফ ও ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১২
পথশিশুদের আনন্দময় একদিন

ঢাবি : পথশিশু মানেই ভেসে ওঠে বেদনায় পীড়িত অপুষ্ট মলিন মুখ। শতছিন্ন জামা-কাপড় আর দু’পয়সার জন্য জনে জনে ঘুরে বেড়ানো নাছোড়বান্দা।



তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। বর্ণিল জামা-কাপড় পরে র‌্যালিতে বের হয়েছে একদল পথশিশু। সবার মাথায় ক্যাপ, মুখে ঝলমল করছে আনন্দের আভা। র‌্যালিতে তারা মুক্ত কণ্ঠে গান গেয়ে বিশ্ববাসীকে শোনালো তাদের দাবির কথা...‘আমরা তোমাদের সন্তান, আমরা চাই অধিকার’।

শিশুদের এই সম্মিলিত কণ্ঠ জানান দিল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পথশিশু দিবস-২০১২। দিবসটি উপলক্ষে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) বৃহস্পতিবার বিকেলে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে।

র‌্যালিটি জাতীয় জাদুঘর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেপার্জিত স্বাধীনতা মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।

পরে সেখানে আলোচনা সভা ও পথশিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজের বিভিন্নস্তরের প্রতিনিধিসহ শিশুরা উপস্থিত হন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাষাসৈনিক, পরমাণুবিজ্ঞানী ও কবি ড. জসিম উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, পথশিশুদেরকে বৈষম্যের দৃষ্টি দিয়ে দেখা উচিৎ নয়। সকল শিশুর মত সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মধ্যেও আছে প্রচুর সম্ভাবনা। আমাদের উচিত, সরকারি এবং বেসরকারিভাবে এ সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশ তথা সমগ্র জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসা।

আলোচনা সভায় বিশিষ্ট নাট্যব্যাক্তিত্ব রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘পথশিশু শব্দটি নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। শিশুরা পথের শিশু হবে কেন?’

তিনি বলেন, ‘এরকম একটি দিনের স্বপ্ন দেখতে চাই, যে দিন তাদের নামের সামনে ‘পথ’ শব্দটি থাকবে না। ’

সামাজের প্রচলিত কাঠামোকে তিনি পথশিশুদের দুর্ভোগের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘শিশুদের এ অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো। রাষ্ট্র যদি সুনির্দিষ্ট পলিসি তৈরি করে, আমরা যদি আমাদের চারপাশের শিশুদের কথা মনে রাখি তাহলে পথশিশু বলে কেউই থাকবে না। ’

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, প্রত্যেকটি শিশুর মাঝে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। এই পথশিশুদের পরিচর্যা করলে তারা বনসাঁই থেকে বটবৃক্ষে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, টিআইবি’র মতে, বাংলাদেশ একদম ছোটখাট দুর্নীতিই হয় ছয় হাজার কোটি টাকার। এ টাকা দিয়ে পথশিশুদের জন্য কয়েক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র ও কয়েক শ’ স্কুল তৈরি করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পিএসটিসি’র নির্বাহী পরিচালক মিলন বিকাশ পাল, প্লান বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ইউনিট ম্যানেজার আব্দুল মান্নান, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলম তালুকদার প্রমুখ।

আলোচনা শেষে পথশিশুদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুগ্ধ হন উপস্থিত সবাই। নাচ আর গানে তারা মাতিয়ে তোলে পুরো টিএসসি এলাকা।

এর আগে আন্তর্জাতিক পথশিশু দিবস উপলক্ষে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাজধানীর ১০ হাজার পথশিশুকে ১০ হাজার টি-শার্ট বিতরণ করেছে রেস কমিউনিকেশন নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটি পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে।
   
আন্তর্জাতিক পথশিশু দিবসের ৠালি ও সংবাদ সম্মেলন শেষে রেস কমিউনিকেশন কর্মীরা টি-শার্ট নিয়ে বের হন। তারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে পথশিশুদের মাঝে এ সমস্ত টি-শার্ট বিতরণ করেন। বিকাল পর্যন্ত বিতরণ কর্মসূচি চলাকালে সংগঠনের কর্মীদের হাত থেকে টি-শার্ট পেয়ে খুশিতে ঝলমল করে ওঠে পথের ধারে পড়ে থাকা অবহেলিত পথশিশুরা।

এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে পথশিশুদের নিয়ে একটি ৠালি বের করে রেস কমিউনিকেশন। ৠালির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। ৠালিটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গিয়ে শেষ হয়।

সেখানে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে ৮০ লাখ পথশিশু রয়েছে। এদের সঠিক তদারকি না করা হলে তারা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেশের সমৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় অন্তরায় হতে পারে তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিটিজেন রাইটস্ মুভমেন্ট’র মহাসচিব তুসার রেহমান, এনায়েতুর রহিম, আয়োজক সংগঠনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম রিয়াদুল হক প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময় : ১৭৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১২
এমএইচ/এসকেএস
সম্পাদনায় : আরিফুল ইসলাম আরমান, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।