ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

দুখুমিয়ার গল্প

ইচ্ছেঘুড়ি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১২
দুখুমিয়ার গল্প

সংসারের নানা দু:খ কষ্টের মধ্যে জন্ম নেয়া সন্তানটির নামা রাখা হয় দুখু মিয়া। ছোট্ট সেই দুখু মিয়া একদিন অনেক বড় হয়েছিলেন।

দেশজুড়ে তাঁর খ্যাতি। সে খ্যাতির কারণে আজও আমরা তাকে চিনি। ছোট্ট সেই দুখু মিয়াই হচ্ছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

ছেলেবেলা খুব সুখে কাটেনি তাঁর। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কাজী ফকির আহমদ ছিলেন মসজিদের ইমাম এবং মা জাহেদা খাতুন গৃহিনী। দশ বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়ে শোক কাটানোর পাশাপাশি ধরতে হয় সংসারের হাল। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাজে সাহায্য করা, প্রতিবেশীর বাড়ি দেখাশুনা করা আর মসজিদে আযান দিয়েই কেটে যায় ছেলেবেলা। সেই সঙ্গে নাম জোটে ‘দুখুমিয়া’।

কি মন খারাপ হয়ে গেল? এই দুখুমিয়াই একদিন লিখে ফেললেন, ‘অমা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?, খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা- নাক্ ডেঙাডেং ড্যাং। ’ লেটোর দলে গান গেয়ে, রুটির দোকানে কাজ করে কিভাবে তিনি এমন হাজারো মজার মজার ছড়া-কবিতা লিখে গেছেন তা আজও এক বিস্ময় !
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ তুমুল হইচই ফেলে দেয় চারদিকে। প্রতিটি লেখাতেই ছিল বিদ্রোহের আগুন ফুলকি। যা কাঁপিয়ে দেয় ব্রিটিশ শোষণের ভীত। ‘বিদ্রাহী’ কবিতাটির জন্য তিনি জেলও গিয়েছেন।

নজরুল কিন্তু শুধু কবিই ছিলেন না। একই সাথে তিনি গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবীদ, সৈনিক, দার্শনিকও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে সবসময়।

ছোটদের বড্ড ভালোবাসতেন কবি। লিখেছেন, ‘নতুন দিনের মানুষ তোরা আয় শিশুরা আয়, নতুন চোখে নতুন লোকের নতুন ভরসায়। ’ এছাড়াও বছর ঘুরে ঈদ এলেই ঘরে ঘরে যে গানটি বেজে ওঠে সেটিও ‘দুখুমিয়া’রই লেখা ! ‘রমজানের ওই রোযার শেষে এলো খুশির ঈদ...’।

কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ডিলিট উপাধি ছড়াও পেয়েছেন ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘পদ্মভূষণ’।
 
সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখাতেই তিনি দিয়ে গেছেন শিল্পের ছোঁয়া। বাংলা সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক প্রভৃতি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় শতাধিক। লিখেছেন দু’হাজারেরও বেশী গান।

বাংলা কাব্য তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। এদেশেই তিনি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) মৃত্যুবরণ করেন।


বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১২

সম্পাদনা: আরিফুল ইসলাম আরমান, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।