ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

অ্যাডভেঞ্চার অব মন্টিক্রিস্টো: গুপ্তধনের খোঁজে

মূল: আলেকসাঁন্দ্র দুমা, ভাবানুবাদ: শর্মিষ্ঠা পণ্ডিত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৩
অ্যাডভেঞ্চার অব মন্টিক্রিস্টো: গুপ্তধনের খোঁজে

আলেকসাঁন্দ্র দ্যুমা ছিলেন ফ্রান্সের বিখ্যাত একজন ঔপন্যাসিক। তাঁর অধিকাংশ বই ফরাসি দেশের ইতিহাস নিয়ে লেখা।

তার বইগুলো পড়লে জানা যায় দু’তিনশ বছরের ফরাসি ইতিহাস। দ্যুমার বিখ্যাত একটি অ্যাডভেঞ্চার ‘কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো’। ইচ্ছেঘুড়ির পাঠকদের জন্য এ উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব মন্টিক্রিস্টো: গুপ্তধনের খোঁজে’ নামে উপস্থাপন করা হলো।

ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম নায়ক নেপোলিওনের কথা আমরা সবাই জানি। বিপ্লবের পর তিনি ফ্রান্সের সম্রাট হন। কিন্তু কিছুদিন রাজত্ব করার পর অন্যান্য দেশের রাজাদের কাছে হন পরাজিত। তাকে এলবা নামে একটি দ্বীপে কড়া পাহারা সহ দেওয়া হয় নির্বাসন।

এসময় ফ্রান্সের দক্ষিণ মারসেলজ নামে শহরে এদমন্দ বলে একটি ছেলে বাস করতো। তার বয়স ১৮/১৯। এদমন্দ কাজ করতো জাহাজে। খুব মিষ্টি স্বভাবের কারণে তাকে ভালবাসতো সবাই। এদমন্দের সংসারে ছিলো শুধু বুড়ো বাপ, যাকে সে খুব ভালবাসতো।

মারসিদিস নামে এক সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের  কথা চলছিল। এসময় যে জাহাজে সে কাজ করতো, তার ক্যাপ্টেনের হলো খুব অসুখ। মারা গেলেন তিনি। মারা যাওয়ার আগে এদমন্দকে দিয়ে গেলেন জাহাজের ভার। সেইসঙ্গে দিলেন একটি চিঠি। বললেন, সে যেন চিঠিটা নিরাপদে প্যারিসে পৌঁছে দেয়।

ফ্রান্সের কিছু লোক তাদের প্রিয় নেতা নেপোলিয়নকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ করছিলো। ক্যাপ্টেন ছিলো তাদেরই একজন।

যে খামটি তিনি এদমন্দকে দিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিলো এ বিষয়ক কাগজপত্র। কিন্তু জাহাজের এক দুষ্টু কর্মচারী এসব কথা জানতো। তার নাম ছিল দাংলার।

ক্যাপ্টেন যখন এদমন্দকে চিঠিটা দিচ্ছিল, তখন দাংলার আড়াল থেকে সব দেখে ফেলে। তার আশা ছিলো বুড়ো ক্যাপ্টেন মরলে সেই হবে নতুন ক্যাপ্টেন। কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে এদমন্দকে ক্যাপ্টেন করায় সে হিংসায় ছটফট করতে লাগলো। তখন সে গেল মারসেলজ শহরে। সেখানে ফারনান্দ নামে আরেক দুষ্টু লোকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে পুলিশের কাছে বেনামি খবর পাঠালো। সে জানালো এদমন্দ নেপোলিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে। শুধু তাই না, তার কাছে এসব কাগজপত্রও আছে।

এদিকে এদমন্দের সঙ্গে মারসিদিসের বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেল। এদমন্দ ভেবেছিলো বিয়েটা হয়ে গেলে সে প্যারিসে গিয়ে  ক্যাপ্টেনের চিঠিটা দিয়ে আসবে। কিন্তু বেচারা এদমন্দ বিয়ে করতে বের হবে এমন সময় পুলিশ এসে তাকে আটক করলো। তার কাছে পাওয়া গেল চিঠিটা। ফ্রান্সের আদালত এদমন্দের ন্যায় বিচার করলেন না।

শাস্তি হিসেবে  বহু দূরের এক পার্বত্য কারাগারে তাকে আজীবন আটক রাখার নির্দেশ দিলেন। এদমন্দ নায়বিচারের জন্য বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে লাগলো। কিন্তু ফল কিছুই হলো না। সে যখন হতাশ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো আত্মহত্যা করবে, তখন ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা।

ওই কারাগারে বন্দি ছিলেন ফারিয়া নামক এক পাদরি। তিনি ছিলেন ভীষণ জ্ঞানী মানুষ। তাকেও তুচ্ছ একটা কারণে বন্দি করা হয়েছিলো। তিনি হতাশ না হয়ে চেষ্টা করছিলেন কারাগার থেকে পালাবার।

পালানোর জন্য তিনি লোহার থালা ভেঙে তার টুকরো দিয়ে তিনি বানিয়েছিলেনেএকটি অস্ত্র। আর তা দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তৈরি করেছিলেন বাইরে বের হওয়ার একটি পথ। কিন্তু হিসেবের ভুলে সেই সুড়ঙ্গ বাইরে না গিয়ে সোজা এদমন্দ এর ঘরে এসে পোঁছালো।

এ ঘটনায় প্রথমে এদমন্দ খুব ভয় পেয়ে গেলো।   কিন্তু দীর্ঘদিন পরে একজন মানুষের মুখ দেখে কিছুটা খুশিও হলো। ফারিয়া তার এতোদিনের চেষ্টা ব্যর্থ হলো দেখে প্রথমে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু দমে যাওয়ার লোক তিনি নন। এদমন্দ আত্মহত্যা করতে চাইছে দেখে তিনি তাকে বকাঝকা করলেন অনেক।

পরে তিনি নিজের দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বললেন, কোনও অবস্থাতেই মানুষের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়। চেষ্টা ধৈর্য আর আশায় পৃথিবীতে অনেক কিছুই করা যায়।

ফারিয়া গোপনে সুড়ঙ্গ দিয়ে এদমন্দ এর ঘরে যাতায়াত করতে লাগলেন। তাকে শেখাতে লাগলেন লেখাপড়া। এভাবে কেটে গেল বেশ কয়েক বছর।

এক সময় ফারিয়াও মারা গেলেন। তার মৃত্যুতে এদমন্দ খুবই কষ্ট পেল। কিন্তু হটাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। ওখানে কেউ মারা গেলে তার সমাধি হতো না। দেহটা চট দিয়ে মুড়ে পাথর বেঁধে ফেলে দেওয়া হতো সাগরে। যখন কারাগারের লোকেরা ফারিয়ার দেহ চট দিয়ে বেঁধে রেখে গেল, তখন এদমন্দ সেলাই খুলে ফারিয়ার দেহটা বের করলো। শুইয়ে রাখলো নিজের বিছানায়।   চাদর দিয়ে তাকে ঢেকে দিল। পরে সে নিজে চটের ভেতর ঢুকে, ভেতর থেকে সেলাই করে দিলো।

পরদিন সকালে কারাগারের রক্ষীরা এসে চটমোড়া দেহটাকে ফারিয়ার দেহ মনে করে পাহাড়ের ওপর থেকে ফেলে দিলো সাগরে। এদমন্দ জলে পড়ে তলিয়ে গেল অনেকখানি। বুদ্ধি করে সে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল ধারালো একটা লোহার টুকরো। সেই লোহার টুকরোর সাহায্যে সেলাই খুলে সে বেরিয়ে এলো।

পরে অনেক কষ্টে প্রায় দুই ঘণ্টা সাঁতার কেটে সে পৌঁছালো সাগরের মাঝে থাকা এক দ্বীপে। এভাবে প্রায় চৌদ্দ বছর পর এদমন্দের মুক্তি ঘটলো।

পরদিন সকালে এদমন্দ সেই পাহাড়ের ওপর উঠে দেখতে পেলো দূর দিয়ে একটা জাহাজ যাচ্ছে। সে হাত নেড়ে জাহাজের লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করলো। শেষে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে চিৎকার করতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর জাহাজের এক কর্মচারী তাকে দেখতে পেয়ে তুলে নিলো জাহাজে। এদমন্দ তাদের জানালো সে একটা জাহাজে কাজ করতো। জাহাজটা কাল ঝড়ে ডুবে গেছে। অনেক কষ্টে সে ভেসে ছিলো। এখন তার একটা কাজ দরকার। জাহাজের ক্যাপ্টেন কথামতো জাহাজে এদমন্দকে চাকরি দিলেন।

ফারিয়া মরবার সময় এদমন্দকে একটা গুপ্তধনের খোঁজ দিয়ে যান। অনেক বছর আগে কার্ডিনাল স্পাদা নামে একজন ধনী লোক ছিলেন। তিনি অসৎ উপায়ে সংগ্রহ করেছিলেন অনেক ধনরত্ন। মরার আগে সে ধন মন্টিক্রিস্টো নামে একটা দ্বীপে পাহাড়ের গুহায় গোপনে পুঁতে রেখে গিয়েছিলেন।

সেই গুপ্তধনের কথা জানতেন ফারিয়া। এদমন্দকে সেই ধনরত্নের কথা তিনি মরার আগে জানিয়ে যান। এদমন্দ তা ভোলেনি। কিছুদিন পর জাহাজ মন্টিত্রিস্টো দ্বীপের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। এদমন্দ হঠাৎ প্রস্তাব করলো যে, জাহাজ নোঙর করে এখানে শিকার করা হোক। যথারীতি জাহাজ নোঙর করে কয়েকজন নামলো। বন্দুক আর গুলি নিয়ে নৌকায় করে তারা দ্বীপে গেল শিকার করতে।

কিন্তু এদমন্দের এক বিপদ ঘটলো। পাথরের ওপর তেকে পড়ে ভেঙে গেল পা। জাহাজের লোকেরা তাকে ধরাধরি করে নিয়ে যেতে চাইলো জাহাজে। সে ঘোর আপত্তি জানাল। বুঝিয়ে সবাইকে পাঠিয়ে দিল জাহাজে। এদমন্দের অনুরোধে তারা কিছু খাবার, একটা বন্দুক, গুলিবারুদ আর শাবল রেখে চলে গেল।

এদিকে জাহাজ চোখের আড়াল হতেই এদমন্দ বেরিয়ে পড়লো সেই পর্বত-গুহার সন্ধানে। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার সময় পোঁছালো গুহার কাছে। গুহার মুখে একটা বড় পাথর চাপানো ছিলো। গোলাবারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও শাবলের আঘাত করে অনেক কষ্টে এদমন্দ সরালো সেই পাথর। ফারিয়া বলেছিলেন গুহার দ্বিতীয় ঘরে ধনরত্ন রাখা আছে। অনেক খুঁজে এদমন্দ দ্বিতীয় ঘরের দরজা বের করে তা খুললো। কিন্তু এ কি! ঘর সম্পূর্ণ খালি। কোথাও কিছু নেই। হটাৎ কি ভেবে এদমন্দ ঘরের একপাশে খুঁড়তে শুরু করলো। একটু খাঁড়তেই সে পেয়ে গেল পুরানো একটা কাঠের সিন্দুক। সিন্দুকে অবার ভারি তালা লাগানো।

শাবল দিয়ে তালাটা ভেঙে এদমন্দ সিন্দুকের ডালা খুললো। খুলে যা দেখলো তাতে সে অবাক! রাশি রাশি মণি-মাণিক্য, তাল তাল সোনা এবং অসংখ্য সোনার মুদ্রা। সব এখন তার।

সেই রাতে এদমন্দ গুহার মুখে শুয়ে রইলো। পরদিন সকালে উঠে কয়েকটা বাছাই করা হীরে পকেটে পুরে অপেক্ষা করতে লাগলো জাহাজের জন্য। একটু পরেই জাহাজ এসে ওকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো।

দেশে ফিরে একদিন সে গেল তার নিজ শহর মারসেলজে। অনেক দিন পর তাকে দেখে কেউ চিনতে পারলো না। সে খবর নিয়ে জানলো তার বাবা মারা গেছেন। আর মারসিদিস বিয়ে করেছে ফারনান্দকে। এসব শুনে তার খুব দুঃখ হলো।

ফারিয়া তাকে শিখিয়েছিলো কোনো খারাপ খবরেই বিচলিত না হতে। সে কথা মনে করে সে নিজেকে সামলে নিলো। তারপর হীরেগুলো বিক্রি করে কিনলো একটা জাহাজ। সেই জাহাজে করে গেল মন্টিক্রিস্টো দ্বীপে।   তুলে নিয়ে এলা

পুরো সিন্দুকটাই। এরপর আর কোনো চিন্তা রইলো না তার। সে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড়লোকদের একজন।

এরপর এদমন্দের নাম হয়ে গেলো ‘কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো’। সে হয়ে উঠল বিখ্যাত দাতা। যারা তার সর্বনাম করেছিলো

সেই দাংলার ও ফারনান্দকে খুঁজে বের করে সে দিলো শাস্তি।
কাউন্ট অব মন্টিত্রিস্টো দারুণ একটি উপদেশ দিয়ে গেছেন,

‘যত বিপদেই পড়োনা কেন, কখনো আশা ছেড়ো না। সুসময়ের জন্য অপেক্ষা করো। সুসময় নিশ্চয়ই আসবে। ’
বন্ধুরা, জীবনে চলার পথে তোমরাও এ উপদেশ সবসময় মনে রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৩
এসএ- ichccheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।