ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

চীনা পুরাণ অবলম্বনে

কুকুর ও রাজকন্যার বিয়ে

আসিফ আজিজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৩
কুকুর ও রাজকন্যার বিয়ে

চীনের পশ্চিম দিকের রাজ্যে তখন যুদ্ধ চলছে। রাজার মন-মেজাজ তো খুব খারাপ।

তার সৈন্যরা যুদ্ধ করতে পারছে না। বার বার পিছিয়ে আসছে। অবস্থা দেখে সেনাপতিরাও পেয়ে গেল ভয়। তারাও সামনে এগোতে সাহস পাচ্ছে না।

রাজা তখন এক মতলব আঁটলো। রাজ্যে ঘোষণা দিল, যে প্রতিপক্ষ রাজার মাথা তার কাছে এনে দেবে, তার সঙ্গে হবে রাজকন্যার বিয়ে। সে খবর পৌঁছে দিল যুদ্ধ শিবিরেও।

কিন্তু এতেও কোনো কাজ হলো না। ভীতু হয়ে বসে রইল সবাই।

এদিকে, বাইরে থেকে সব কথা শুনেছিল এক কুকুর। কুকুরটা আবার অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তার পূর্বপুরুষ তন্ত্র-মন্ত্র জানতো। পূর্বপুরুষের পাপের ফলেই সে আজ  কুকুর। তবে সে খুব বুদ্ধিমান।

এ ঘোষণা শোনা মাত্রই ছুটলো প্রতিপক্ষের যুদ্ধশিবিরের দিকে। সে জানতো কুকুরকে কেউ আটকাবে না। নে রাজ্যে পৌঁছে খুঁজে বের করলো রাজার ঘুমের ঘর। রাজা তখন ঘুমুচ্ছে। চুপি চুপি সুযোগ বুঝে কুকুর ঢুকলো রাজার ঘরে। বিছানার কাছে গিয়ে গলায় বসিয়ে দিল কামড়। কেটে ফেলল রাজার মাথা। মাথাটি মুখে করে এনে রাখলো তার রাজ্যের রাজার সামনে। রাজা তো দেখে হতবাক! যেটা কেউ পারলো না সেই কাজ কিনা একটা কুকুর করলো!

kingকিন্তু রাজা তার কথা রাখলো না। কুকুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে পারলো না কিছুতেই।

বুদ্ধিমান কুকুর তখন সুযোগ নিল মানুষ হওয়ার। কাজে লাগালো তার পূর্বপুরুষের জাদুমন্ত্র। রাজামশাইকে জানালো, কিছুদিনের মধ্যেই সে মানুষের রূপ পাবে। তবে সময় লাগবে দুইশ আশি দিন। আর এর জন্য সে যা বলবে তাই করতে হবে। রাজা এক কথায় কৃতজ্ঞতাবশত রাজি হয়ে গেল। বলল, বলো কি করতে হবে।

তখন কুকুর রাজাকে একটা ঘণ্টা দেখিয়ে দিল। বলল, এর মধ্যে আমাকে রেখে দুইশ আশি দিন পর আলগা করলে দেখেবেন আমি মানুষ হয়ে গেছি।

যে কথা সেই কাজ। কুকুর ঢুকে গেল ঘণ্টার নিচে। রাজা ঢেকে দিল তাকে। ভালোই চলছিল সব। দেখতে দেখতে কেটে গেল দুইশ দিন। কিন্তু বিপত্তি বাঁধালেন রাজা নিজেই। তার যেন কিছুতেই তর সইছিল না। খুব দেখার ইচ্ছা জাগলো যে কুকুরের কি অবস্থা তা দেখার জন্য।

দুইশ আঠারো দিন পর ঘণ্টাটা উঁচু করল। দেখলো কুকুরের পুরো শরীর মানুষের মতো হয়ে গেছে শুধু মাথা ছাড়া। দেখেই আবার তাড়াতাড়ি ঢেকে দিল। অপেক্ষা করলো দুইশ আশি দিন।

kingতারপর মহা উৎসাহ নিয়ে রাজা ঘণ্টা তুললো। কিন্তু যা দেখলো তা নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারলো না রাজা। দুইশ আঠারো দিন আগে কুকুরের যে রূপ দেখেছিলেন সে রূপেই রয়েছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। খুব হতাশ হলো রাজা।

কুকুর বলল, রাজামশাই গাছে ফল আসার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা কতে হয়। তারপর ফল হয়। ফল হচ্ছে না বলে গাছ কেটে ফেলা বোকামি।

রাজা তার ভুল বুঝতে পারলো। এবার আর কথার খেলাপ করলো না। কুকুরের মাথাওয়ালা ছেলের সঙ্গে রাজকন্যার বিয়ে দিলো। তারা সুখে সংসার করতে লাগলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।