ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ডিম ফুটে পৃথিবীর জন্ম!

আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৩
ডিম ফুটে পৃথিবীর জন্ম!

ডিম থেকে মুরগী, না মুরগী থেকে ডিম এ নিয়ে পৃথিবীতে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। যেমন পৃথিবীর জন্ম নিয়ে শেষ নেই নানা রহস্যের।

ডিমের খোলস ভেঙে পৃথিবীর জন্ম-এমন অদ্ভুত বিষয়ও শোনা যায় আদিম নানা সমাজের উপাখ্যানে।

এমন একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে পলিনেশিয়া অঞ্চলের দেশগুলিতে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুক চিরে যাওয়া ছোট বড় কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে পলিনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ। প্রায় কুড়ি হাজার বছর আগে নেগ্রিটস, আইনয়েডস ও বেড্ডয়েটস নামে তিনটি আদিম জাতি এসব অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। পলিনেশিয়ার লোককথায় তেন, তেঙ্গারোয়া, রঙ্গ ও তওহিরির কাহিনী বেশ প্রসিদ্ধ।

আমরা বলব পৃথিবীর জন্ম নিয়ে গড়ে ওঠা তেঙ্গারোয়া বা তারোয়ার কাহিনী।

Mayডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার মতো নাকি পৃথিবীর জন্ম হয়েছে! তরোয়ার ডিম্ব কাহিনী অনুযায়ী বিশ্বজগতের আদিস্রষ্টা তরোয়া। তরোয়া একা বাস করতেন রুমিয়া নামের এক ডিম আকৃতির খোলসের মধ্যে। তখন আকাশ, চাঁদ, সূর্য, পৃথিবী কিছুই ছিল না। কি মনে করে তরোয়া একদিন ভেঙে দিলেন তার ডিমের খোলস। বেরিয়ে পড়লেন বাইরে। তারপর সেই ডিমের খোলসের একভাগে তৈরি করলেন পৃথিবী, আরেক ভাগে আকাশ।

কিন্তু এই নিঃসঙ্গ একাকী জীবন বেশি দিন ভালো লাগলো না তরোয়ার। সৃষ্টি করলেন দেবতাদের। তারপর দেবতারা সৃষ্টি করলেন গাছপালা, লতা-গুল্ম ইত্যাদি। এসব কিছুই হয়েছে প্রায় অন্ধকারের মধ্যে। কারণ তুমুরাই ফিউনা নামের একটি অক্টোপাস তরোয়ারের সেই পরিত্যক্ত ডিমের খোলসটির দুই প্রান্ত টেনে ধরে রেখেছিল কাছাকাছি।

তরোয়ারের আদেশে পাতালের দেবতা রুয়া অক্টোপাসটাকে মেরে ফেললেও তার ধরে রাখা ফাঁস কিছুতেই আলগা করতে পারলো না। ফলে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতেই সবকিছু চলতে থাকলো। m1

দেবতা রু অক্টোপাসের টেনে ধরা আকাশটাকে আবার প্রাণপণে ওপরে উঠিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলেন। কিন্তু প্রচণ্ড পরিশ্রমের পরও পারলেন না তিনি। বরং হিতে বিপরীত হলো। রু এর শরীর বেঁকে চুরে শেষ পর্যন্ত টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তার শরীরের কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শূন্যে ভেসে থাকতে থাকতে পরিণত হলো মেঘে।

রু এর ব্যর্থতার পর একাজে হাত দিলেন আরেক দেবতা মাউই। মাউই আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে সামান্য যে ফাঁক ছিল তার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন একটা খোঁটা। তারপর ক্রমাগত দিতে থ‍াকলেন চাড়। এভাবে চাড় দিয়ে দিয়ে আকাশটাকে একটু উপরে তুলে ঠেকনা দিয়ে রাখতে সক্ষম হলেন। এবার সাহয্যের জন্য ছুটলেন দেবতা তেন এর কাছে।

mতেন এসে বড় বড় পৃথিবী ও আকাশের মাঝে বিশাল গুঁড়ির সাহায্যে ঠেকনা দিলেন। তারপর বিশাল আকৃতির একটি ঝিনুক দিয়ে খুঁড়তে লাগলেন আকাশটাকে। এভাবে আকাশ ও পৃথিবী আলগা হয়ে গেল। পৃথিবী ভরে উঠলো আলোয় আলোয়। ফাঁস আলগা হয়ে দুষ্টু অক্টোপাসটাও তখন পড়ে গেল সাগরের পানিতে। আর তার শরীররটা পরিণত হলো তবুয়াই নামে একটি দ্বীপে।

তেন এবার মন দিলেন পৃথিবীটাকে সুসজ্জিত করে তোলার কাজে। একে একে সৃষ্টি হলো অসংখ্য গ্রহ, তারা, চন্দ্র প্রভৃতি। সমুদ্রে ঘুরে বেড়াতে লাগলো বড় বড় মাছ, রংবেরঙের প্রাণী। এরপর পথিবীটাকে আরও রঙিন করতে দায়িত্ব পড়লো অন্য দেব-দেবীর উপর। সেসব কাহিনী শুনবো আরেকদিন।

পলিনেশিয়া অঞ্চলের পুরাণ ও লোকবিশ্বাস অবলম্বনে লেখা।
সূত্র: পৃথিবীর পৌরাণিক ইতিহাস

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৩
এএ-ichchheghuri@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।