ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বন্ধুর জন্য

অর্ণব রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৩
বন্ধুর জন্য

আবির স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ঘণ্টাখানেক হলো। মিন্টু এখনও স্কুলে এসে পৌঁছায় নি।

আবির ঢাকার একটি সরকারি স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে। মিন্টু তার ক্লাসের সবচেয়ে ভালো বন্ধু । তারা একই বেঞ্চে বসে সবসময়। তারা দুজনের কেউই কখনও স্কুল খুব একটা কামাই করে না।

কিন্তু গত দুদিন যাবত মিন্টু স্কুলে আসছে না। আজও হয়তো আসবে না। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ক্লাস শুরুর ঘণ্টা পড়লে আবির বাধ্য হয়ে ক্লাসে ঢুকলো। নাহ মিন্টু আজও এলো না। অথচ আজ মিন্টু এলে খুবই ভাল হতো। কারণ আজ তাদের স্কুলে ঈদ ও পূজার বন্ধ ঘোষণা করা হবে।

এরপর সারা ক্লাসে টিচাররা কি পড়াল তার কিছুই আবিরের  কানে ঢুকল না। পুরো ক্লাস সে আনমনা হয়ে রইল। অবশেষে ছুটির ঘণ্টা বাজল এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের ঈদ-পূজার বন্ধ শুরু হয়ে গেল। অন্য সবার সাথে আবিরও ক্লাস থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে না গিয়ে মিন্টুদের বাড়ির পথ ধরল।

মিন্টু কেন ক্লাসে আসছে না! এ বিষয়টা তাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর এ কারণেই সে মিন্টুর বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। মিন্টুর বাসার দরজা  খোলাই ছিল। খোলা দরজা দিয়ে মিন্টুর মাকে দেখা যাচ্ছিল। ভদ্রমহিলাকে এর আগে অনেকবারই দেখেছে আবির। তাই আজ তাকে দেখেই সে চিনতে পারলো। কিন্তু উনি কাঁদছেন কেন। আর ওইতো তার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে মিন্টু। সেও সম্ভবত কাঁদছে, কিন্তু কেন? আবির বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো।

মিন্টু তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো এবং সহসা আবির কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। মিন্টু একটু ধাতস্ত হওয়ার পর সে আবিরকে যা বলল তা হলো- দু’তিন দিন আগে হঠাৎ করে মিন্টুর বাবা মারা গেছে তাই মিন্টু এতদিন স্কুলে যায়নি। বন্ধুকে সান্ত্বনা দেবার কোনো ভাষাই আবিরের মুখে এলো না। তার মন একধরনের বিষাদে  ছেয়ে গেলো। সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে তারই এক বন্ধু ঈদের ঠিক কয়েকদিন আগে বাবা হারিয়েছে। বিষণ্ণ মন নিয়ে সে বন্ধুর বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো।  

বাসায় ঢুকেই আবিরের মনে হলো কেমন যেন উৎসব উৎসব ভাব বাসায়। মাকে খুব খুশি খুশি মনে হচ্ছে। বাবাও আজ তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছেন। মাকে জিজ্ঞোস করার আগেই বাসার ভিতর থেকে আবিরের ছোট মামা বেরিয়ে এসে আবিরকে কোলে তুলে নিলেন। ঘরের ভিতর গিয়ে আবির দেখতে পেল শুধু ছোট মামাই নন নানু, বড় মামা সবাই তাদের বাসায় এসেছে।

তার জন্য নতুন জামা, জুতাসহ অনেককিছু নিয়ে এসেছে। তাদের কাছ থেকে আরও জানা গেলো যে তারা এবারের ঈদটা আবিরদের সাথে  একসাথে কাটাবে। এই কথা শুনে আবিরের মন খুশিতে নেচে উঠলো। সেই রাতে আবির তার মামা, নানুদের সঙ্গে গল্প করে অনেক রাতে ঘুমুতে গেলো। খুব শিগগিরই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো আবির।

মনে মনে এই ভেবে ঘুমালো যে, সকালে উঠে যেন সে দেখে সব কিছু যেন দেখে আগের মতোই। আগের মতোই থাকে যেন মিন্টু।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৩
এএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।