ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মজার গল্প

লেজ বদল

আহমেদ রিয়াজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১১
লেজ বদল

সকাল সকাল ঘুরতে বেরিয়েছে বিলু। বিলু মানে বিড়াল।

মানে বিড়ালটার নাম বিলু। একটা ছোটখাটো বাগান পেরিয়ে যেতে হবে। বাগানের ওপাশ থেকে শুঁটকির গন্ধ আসছে। শুঁটকি ওর দারুণ প্রিয়। মনে হয় পুঁটি মাছের শুঁটকি। গন্ধ শুঁকেই ও বলে দিতে পারে, কোনটা কী মাছের শুঁটকি।

বাগানের ভিতরে একটা বুড়ো কাঁঠালগাছ। সেই জন্মের পর থেকে ও কাঁঠালগাছটাকে দেখে আসছে। গাছে আবার কাঁঠালও হয়। আগে আরো বেশি হতো। বুড়ো হওয়ার পর থেকে গাছটা কাঁঠাল ধরানো কমিয়ে দিয়েছে। তবে এই কাঁঠালগাছে আছে একটি কাঠবিড়ালী পরিবার। শীতের সকাল। পুঁচকে একটা কঠাবিড়ালী কাঁঠালগাছ থেকে নেমেই এক ঝলক তাকালো বিলুর দিকে। তারপর যে-ই দৌঁড় দিতে যাবে, অমনি ডাক দিয়ে বসল বিলু কোথায় যাস রে পুঁচকে কাঠবিড়ালী?

পুঁচকে কাঠবিড়ালী হঠাৎ থেমে গেল। অবাক হয়ে তাকালো বিলুর দিকে। তারপর কপালটা যতখানি সম্ভব কুঁচকে জানতে চাইল, আমাকে ডেকেছেন?
বিলু বলল, এখানে আর ক’টা কাঠবিড়ালী আছে?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, এই গাছে? এই গাছে ছানাপোনা মিলিয়ে আছে গোটা আষ্টেক...
বিরক্ত হল বিলু, ধ্যাৎ! তোকে কাঠবিড়ালীর হিসাব করতে কে বলেছে?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, এই যে আপনি জানতে চাইলেন না?
বিলু বলল, তোর সঙ্গে কথা বলাও ঝামেলার। তা যাওয়া হচ্ছিল কোথায়?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, একটু বাদামের খোঁজে।
বিলু বলল, এই বাগানে বাদাম গাছও আছে নাকি?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, তা আছে গোটা চারেক।
বিলু হাসতে হাসতে বলল, কথায় কথায় গোটা বলিস কি রে? কেউ কি আধা হিসাব করে নাকি?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, করে না আবার! খাবারের যখন অভাব থাকে, তখন আমরা আধা আধা করে বাদাম খাই।
বিলু অবাক হয়ে বলল, আধা করে খেতে হয় তোদের?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, খুব হয়।
বিলু ওর দিকে ভালো ভাবে তাকালো। একেবারে মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত। তারপর বলল, যেমন পুঁচকে শরীর, তেমন পুঁচকে পেট। এই পুঁচকে পেটে একটা বাদাম ঢোকানোই তো বেশ কষ্টের। কিন্তু তোর লেজটা তো দেখছি ইয়া বড়। তোর শরীরের চেয়েও বড়। কোথায় পেয়েছিস এত বড় লেজ?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, আমার বাবা দিয়েছেন। আমার বাবারও এত বড় লেজ। আমার দাদার লেজ আরো বড় ছিল। কেবল দাদার লেজটাকেই আমরা সবাই কম্বল বানিয়ে গায়ে দিয়ে ঘুমুতে পারতাম। এখন কেবল নিজের লেজ দিয়ে নিজেকেই ঢেকে রাখতে পারি।

কাঠবিড়ালীর লেজটার দিকে বেশ সময় ধরে তাকিয়ে রইল বিলু। সত্যি বেশ সুন্দর লেজ। অমন একটা লেজ থাকলে আর কিছুই লাগে না। শীতও পড়েছে বেশ। যদিও শীত বেশিদিন থাকে না। তবে যতদিন থাকে শরীর কাঁপিয়ে দেয়। রাতে ঘুমুলে মনে হয় শীতটা আরো বেশি লাগে। কাঠবিড়ালীর মতো অমন একটা লেজ যদি ওর থাকত! মানুষদের কী সুন্দর কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমুতে দ্যাখে ও। ওসব কম্বল নিশ্চয়ই কাঠবিড়ালীর লেজ দিয়ে বানানো। না হলে এত সুন্দর হয় কী করে?
বিলু বলল, তোর লেজটা আমাকে দিয়ে দে।

পুঁচকে কাঠবিড়ালী প্রথমে বুঝতে পারেনি। তাই আবার জানতে চাইল, কী দেবো?
বিলু বলল, তোর লেজ দেয়ার কথা বলছি। তোর লেজটা দিয়ে দে।
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, সেটা কী করে সম্ভব!
বিলু বলল, অসম্ভবের কী আছে? তোর একটা লেজ না থাকলে কিচ্ছু হবে না। রাতে শীত লাগলে পাশের কাঠবিড়ালীর লেজ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখিস। একটা লেজে তোদের দুজনার হয়ে যাবে- যা পুঁচকে একটু শরীর!

পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, তা না হয় হলো। কিন্তু লেজটা দেবো কিভাবে?
বিলু বলল, সেটা কোনো বিষয়ই না। আমি ছুরি নিয়ে আসছি। ছুরি দিয়ে কেটে দিবি।
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, আমি ব্যথা পাবো না?
বিলু বলল, তা না হয় একটু ব্যথা পেলিই। অপরের উপকার করতে গেলে একটু-আধটু এমন ব্যথা পেতে হয়।

পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, লেজটা তুমি কোথায় লাগাবে?
বিলু বলল, আমার লেজের জায়গায়।
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, তোমার তো তাহলে দুটো লেজ হয়ে যাবে। দুটো লেজ দিয়ে কী করবে তুমি?
বিলু বলল, ঠিক আছে। আমার লেজটা তোকে দিয়ে দেবো।
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, তাহলে আগে তোমার লেজটা আমাকে দাও। তারপর আমার লেজটা আমি তোমাকে দেবো।

বিলু তো মহাখুশি। যাক বোকা কাঠবিড়ালীটাকে শেষ পর্যন্ত রাজি করানো গেছে। বোকাটা ওর লেজের মর্ম নিশ্চয়ই বোঝেনি। বুঝলে কী আর দিতো। আমার এই লেজ নিয়ে কী করবে বুঝি না। দড়ির মতো চিকন একটা লেজ। না ঢাকা যায় চারটে পা, না ঢাকা যায় শরীর। লেজ থাকতেও শীতে কষ্ট করতে হয়। নিকুচি করি এমন লেজের!

নিজের লেজের ওপর ভীষণ ত্যাক্ত-বিরক্ত বিলু। পারলে তখনই লেজটা কামড়ে কামড়ে ছিঁড়ে ফ্যালে। কামড়ে ছিঁড়েই ফেলতো আরেকটু হলে। যখন মনে পড়ল এই লেজটা দিয়ে পুঁচকে কাঠবিড়ালীর বিশাল লেজটা পাবে, তখন লেজের ওপর রাগটা কমিয়ে ফেলল। এই লেজ এখন আর ওর নয়। ওই পুঁচকে কাঠবিড়ালীর। আর পুঁচকে কাঠবিড়ালীর সুন্দর লেজটা এখন ওর।

বিলু বলল, যাই। ছুরি দিয়ে লেজটা কেটে আনি। তুইও এ জায়গা ছেড়ে নড়িস না। আমি না আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবি।
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, তাহলে আমি বাদাম জোগাড় করতে যাবো না?
বিলু বলল, কত বাদাম চাই? আমি নিয়ে আসবো। যাই তাহলে। লেজটার দিকে নজর রাখিস। খবরদার লেজের যাতে কিছু না হয়। ওই লেজের মালিক এখন আমি, মনে আছে তো?
পুঁচকে কাঠবিড়ালী বলল, খুব মনে আছে।
তারপর বিলুর লেজ দেখিয়ে বলল, ওই লেজেরও যাতে কিছু না হয়। ওই লেজের মালিক কিন্তু আমি।
নাহ্! কাঠবিড়ালীটা কেবল পুঁচকে নয়, বেশ বোকাও। বোকা পুঁচকে কাঠবিড়ালীর কথা শুনে হাসতে হাসতে চলে গেল বিলু। চলে গেল মানে ছুরি জোগাড় করতে গেল।

বিলুর জন্য অনেকণ অপোয় বসে রইল পুঁচকে কাঠবিড়ালী। বিলু এলো না। সারাদিন বসে রইল। এলো না। ভাবতে লাগল পুঁচকে কাঠবিড়ালী, কোথায় গেল বিল্লিটা?
বিল্লিটা কিন্তু তখনই ছুটে গিয়েছিল একটা বাড়ির রান্নাঘরে। ও জানে ছুরি রান্নাঘরেই থাকে। তাই রান্নাঘরের আশপাশে বেশ ঘুর ঘুর করতে লাগল। রান্নাঘরে কেউ না থাকায় ও টুক করে ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারপর এটা ওটা উল্টিয়ে ছুরি খোঁজে। কিন্তু ছুরি আর পায় না। পাবে কেমন করে, ও তো ছুরিই চেনে না। কোনোদিন ছুরি দেখেনি। ও তো হল বিড়াল, ওর আবার ছুরি কী দরকার? তবু ও কাঠবিড়ালীর লেজের লোভে ছুরি খুঁজতে রান্নাঘরে হানা দেয়।

তোমরা হয়তো ভাবতে পারো, বিড়াল দুধ বা মাছের জন্য রান্নাঘরে ঢোকে? কিন্তু না। ও ঢোকে ছুরির জন্য। যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে একটা বিড়ালকে ধরে জিজ্ঞেস করেই দেখো না?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।