ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আজ জন্টুর অংক পরীক্ষা | মো. মনির হোসাইন

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৪
আজ জন্টুর অংক পরীক্ষা | মো. মনির হোসাইন

জন্টু সবসময় পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো করে নেয়। কিন্তু কোনো না কোনো অদ্ভুত কারণে জন্টুর সবসময় অংক পরীক্ষাই খারাপ হয়।

প্রথম সাময়িকে অংক পরীক্ষার দিন জন্টু যথারীতি পরীক্ষার হলে গেলো। প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর জন্টু খুশিতে গদ গদ হয়ে লিখতে শুরু করল। পুরো একশো নম্বর জন্টুর দখলে।
কিন্তু বিপত্তি বাঁধে এক ঘণ্টা পর। হঠাৎ জন্টুর পিঠ চুলকাতে শুরু করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে চুলকানি ছড়িয়ে পড়ল পুরো শরীরে। জন্টু মহা বিপদে পড়ে গেলো। পুরো শরীর চুলকাতে চুলকাতে জন্টুর পরীক্ষা দেয়াই দায় হলো। সেবার জন্টু অংক পরীক্ষায় পাস করেছে কিন্তু ভালো নম্বর পায় নি।

এরপর দ্বিতীয় সাময়িক অংক পরীক্ষায় আরেকটি উদ্ভট সমস্যার সম্মুখীন হয় জন্টু। সেদিনও পুরো প্রশ্নপত্রের সব অংক জন্টুর আয়ত্তে ছিল। জন্টু খাতায় একে একে সব অংকের সমাধান করছিল। হঠাৎ লক্ষ্য করল, সে প্রশ্নপত্রের অক্ষরগুলো ভালোভাবে দেখছে না। প্রতিটি অক্ষর তার কাছে ঘোলাটে লাগছে। অংক পরীক্ষার সময় স্বভাবত একটি সংখ্যার কমবেশি হলে পুরো অংক ভুল হয়ে যায়। মস্ত বিপদে পড়ল জন্টু। পিছনের বেঞ্চে বসা বন্ধুর সঙ্গে প্রশ্ন বদল করল। কিন্তু তাতেও লাভ হলো না। নতুন প্রশ্নেও সব ঘোলাটে লাগছে জন্টুর। বাইরে গিয়ে চোখে মুখে অনেকক্ষণ পানির ছিটে মেরে আবার হলে ঢুকল। এবারও কোনো লাভ হয় নি।

প্রশ্নপত্র আগের মতো ঘোলা দেখল জন্টু। ভাবল ছোখের বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। এসব করে কোনো লাভ নেই। কোনো মতে কয়েকটা অংকের সমাধান লিখে আসলেই হবে। অন্তত পাস নম্বর তো ওঠাতে হবে। এটা ভেবে জন্টু ধীরস্থিরভাবে কয়েকটা অংক করতে চেষ্টা করল। পরীক্ষার সময় যখন শেষের দিকে অসাবধানতা বশত তখন চোখ থেকে জন্টুর চশমা পড়ে গেল। রাগে ক্ষোভে জন্টুর নিচ থেকে চশমা না তুলে অংক করতে লাগল। খেয়াল করল এখন সে আর অক্ষর ঘোলাটে দেখছে না।

জন্টু এবার বুঝল তার চোখের দৃষ্টি ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। আগে চশমা ছাড়া জন্টু ঘোলা দেখত, এবার চশমা ছাড়া ভালো দেখছে। জন্টু কোনো কিছু না ভেবে এবার বাকি করে অংকগুলো করতে লাগল। কিন্তু ততক্ষণে পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে এসেছে। জন্টু স্যারের কাছে দুই মিনিট অতিরিক্ত সময় চাইল। স্যার কোনো সময় না দিয়ে জোর করে খাতা নিয়ে গেল। মোট কথা দ্বিতীয় সাময়িকেও জন্টুর অংক পরীক্ষা ভালো হলো না।

স্কুলে তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। আজ জন্টুর অংক পরীক্ষা। তাই সব কিছুতে জন্টু সতর্ক। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ল। মধ্যরাত রাত পর্যন্ত অংক করে ঘুমিয়েছে। তারপর আবার খুব সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা সেরে জন্টু আবার অংক করতে বসল। সবগুলো অংক আরেকবার করল। আজ জন্টু তার অংক পরীক্ষা কোনো কিছুতেই খারাপ হতে দেবে না। অংকগুলো শেষ করে জন্টু গোসল করতে গেল। গোসলে জন্টু সবসময় একটু বেশি দেরি করে। আজও তাই হলো।

গোসল থেকে বেরিয়ে জন্টু স্কুল ড্রেস পরলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈলাক্ত মাথা আছড়াতে লাগলো। জন্টুর মাথাটা বেশ বড়, আর নতুন চশমাও পরেছে মোটা ফ্রেমের। ডাক্তার চোখ পরীক্ষা করে নতুন পাওয়ারের চশমা দিয়েছে কিছুদিন আগে।

এত সতর্কতার পরেও স্কুলে পৌঁছাতে আজ জন্টুর একটু দেরি হয়ে গেলো। এতক্ষণে সবাই খাতা ও প্রশ্নপত্র পেয়ে গেছে। জন্টু তাড়াহুড়ো করে সিটে গিয়ে বসলো। স্যারের কাছে তখন একটি মাত্র খাতা আর প্রশ্ন ছিল। স্যার খাতা ও প্রশ্ন এগিয়ে দিল। প্রশ্ন পেয়ে তাড়াহুড়ো করে পড়তে শুরু করল জন্টু। আজকের প্রশ্নটা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে তার কাছে। বাসায় এত প্রস্তুতি নিয়ে আসা সত্ত্বেও অংকগুলো অনেক কঠিন মনে হচ্ছে। প্রশ্নগুলো বার বার পড়ছে। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে কয়েকটা অংকের সমাধান করতে পেরেছে কিন্তু তাতে পাস নম্বর কিছুতেই আসবে না।

এ দুরাবস্থা দেখে জন্টুর সিটের পাশের বড় ভাই তাকিয়ে একটু হেসে বলল, ‘কি কমন পড়ে নাই?’ জন্টু কিছু বুঝতে না দিয়ে বলল, ‘মোটামুটি সব কমন। কিছুটা ভুলে গেছি এই আর কি?’ জন্টুর হলে দুই শ্রেণীর সিট পড়েছে। জন্টুদের শ্রেণি অর্থাৎ সপ্তম শ্রেণি আর অষ্টম শ্রেণি। প্রতি সিটে একজন একজন করে সপ্তম শ্রেণি আর অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বসে।

দু’একটি অংক ছাড়া আর কিছু পারছে না জন্টু। খারাপ মন নিয়ে বসে আছে। সব অংকগুলোই একদম অপরিচিত লাগছে জন্টুর কাছে। পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে এলো। জন্টু নিজ উদ্যোগে খাতা জমা দেয় নি। স্যার এসে খাতা নিয়ে গেছে। জন্টু সবার পর হল থেকে বের হলো। খারাপ মনে জন্টু কোনো বন্ধুদের সঙ্গে কথা না বলে বাড়ি ফিরতে শুরু করল। পথে-ঘাটে যে দু’একজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো তারা সবাই বলেছে তাদের পরীক্ষা ভালো হয়েছে। জন্টুও উদাস মনে বলেছে আমারও ভালো হয়েছে।

অনেকখানি পথ এসে জন্টু পকেট থেকে প্রশ্নটি বের করে ভাঁজ খুললো। স্কুলের নামসহ পুরো প্রশ্নের প্রথম থেকে পড়া শুরু করল। হঠাৎ জন্টুর এক লাইনে চোখ আটকে যায়। সেখানে লেখা ছিল, “শ্রেনি: অষ্টম” !

কোনো চিন্তা না করেই স্কুলের দিকে দৌড় দিলো। স্কুলে পৌঁছে দেখলো স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। সবগুলো শ্রেনীকক্ষে তালা ঝুলানো !

লেখক: মো. মনির হোসাইন
মীনা অ্যাওয়ার্ড ২০১৪ প্রাপ্ত শিশু সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।