ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

জাতীয় কবির জন্মদিনে

মীম নোশিন ‍নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
জাতীয় কবির জন্মদিনে কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম। আমাদের জাতীয় কবি বা বিদ্রোহী কবি শুধু নন, ছোটদের ভালো বন্ধুও বটে।

তার লেখা বড়দের নয় শুধু, ছোটদেরও উৎসাহ-প্রেরণা জোগায়। নজরুলের লেখার সঙ্গে তোমাদের সবার পরিচয় আছে। তারপরও তোমাদের জন্য নজরুলের ‘ঝিঙেফুল’ কবিতাটি তুলে দিচ্ছি:
ঝিঙেফুল! ঝিঙেফুল!
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ঝিঙে কুল-
ঝিঙেফুল।
গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢল ঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলে দুল-
ঝিঙেফুল।
পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।
পউষের বেলা শেষ
পরি জাফরানি বেশ
করে তোল মশগুল-
ঝিঙেফুল।
শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুকুরে।
প্রজাপতি ডেকে যায়-
‘বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়। ’
আসমানে তারা চায়-
‘চলে আয় এ অকুল!’
ঝিঙেফুল।
তুমি বল- ‘আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মায়,
চাই না এ অলকায়-
ভালো এই পথ-ভুল। ’
ঝিঙেফুল।

একটা ছোট্ট ঝিঙেফুলের কী চমৎকার বর্ণনা, তাই না? নজরুলের প্রতিটি লেখাই এমন চমৎকার।

তোমাদের জন্য এমন সব দারুণ লেখা নিয়ে নজরুলের অসম্ভব সুন্দর একটা কবিতার বই আছে। কী নাম জানো? এই কবিতাটার নামে নাম। ‘ঝিঙেফুল’।

এখানে একসঙ্গে তুমি নজরুলের অনেক লেখা পেয়ে যাবে। এছাড়াও ছোটদের জন্য নজরুলের আরো কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: সঞ্চয়ন, ঘুমজাগানো পাখি, ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি।

‘পুতুলের বিয়ে’ নজরুলের লেখা ছোটদের জন্য অসাধারণ একটি নাটক।

নজরুলের লেখার কথা তো বললাম। কবি হিসেবেই তাকে চিনি আমরা, তার জীবন সম্পর্কে কতটুকু জানি? চলো একটু জেনে নিই।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে ( ১১ জৈষ্ঠ্য ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মা জায়েদা খাতুন। খুব ছোটবেলায় নজরুলের বাবা-মা মারা যান। তারপর শুরু হয় দারিদ্র্য এবং অন্যান্য প্রতিকূলতার সঙ্গে তাঁর লড়াই। ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করতে হয় বলে নজরুলের ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া। ’
 
গ্রামের মক্তব থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন নজরুল। মাত্র বারো বছর বয়সে যোগ দেন গ্রামের লেটো গানের দলে। গ্রামের মক্তবে কিছুদিন শিক্ষকতাও করেন তিনি। তারপর আসানসোলে রুটির দোকানে কাজ নেন।

সেখানে এক বাঙালি পুলিশ অফিসারের নজরে পড়ে যান তিনি। সেই অফিসার তাঁকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় নজরুল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সেনাবাহিনীর হাবিলদার হিসেবে যোগ দেন। এখানেই তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।

নজরুল কিন্তু এর মধ্যেও তার প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। সাংবাদিক হিসেবেও দেখিয়েছেন কৃতিত্ব। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে নবযুগ, লাঙ্গল ও ধূমকেতু পত্রিকা। নজরুলের প্রকাশিত প্রথম কবিতা ছিল ‘মুক্তি’। কিন্তু তাঁকে খ্যাতি এনে দেয় ‘বিদ্রোহী’ নামক কবিতা। এ কবিতার কারণে পরবর্তীতে তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।  

‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি রচনা করে নজরুল ব্রিটিশ শাসকদের ব্যঙ্গ করেছিলেন। এ কারণে রাষ্ট্রদ্রোহীতার দায়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবুও লেখালেখি ছাড়েননি নজরুল। একের পর এক কালজয়ী সব লেখা সৃষ্টি করেছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৪২ সালে নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বাকশক্তি হারান। বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মারা যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাকে দাফন করা হয়।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। তার প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।



বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।