ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভৌতিক সন্ধ্যায় বাবুর সাক্ষাৎ ॥ এমরুল হোসাইন

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৫
ভৌতিক সন্ধ্যায় বাবুর সাক্ষাৎ ॥ এমরুল হোসাইন

তুসি ওর ভাইয়ার সঙ্গে ঈদের শপিং করে শহর থেকে গ্রামে ফিরছিল। ঈদের সময় ট্রেনগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে কেন যেন খুব দেরি করে।

তাই গ্রামে ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো।

স্টেশনে পৌঁছে কোনোরকম ইফতার সেরে ভাইয়া তুসিকে বললেন,

তোকে যদি রিকশায় তুলে দেই যেতে পারবি না?

তুসি হয়ত বীরত্ব দেখানোর জন্যই কিংবা ঈদের নতুন জামা-কাপড় তাড়াতাড়ি মা ও বন্ধুদের দেখানোর জন্যই মাথা ঝাঁকিয়ে জবাব দিলো‍,

হুম, পারবো।

ভাইয়ার প্ল্যান ছিল দুপুর বা বিকেল নাগাদ ট্রেন পৌঁছালে বাড়ি গিয়ে ইফতার করে উপজেলা শহরে এসে চুল কালার করাবে, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা আর টুকটাক কিছু কেনার ছলে একটু ঘুরে বেড়াবেন। কিন্তু পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ভাইয়াকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হচ্ছে।

তুসি ভাবলো, দুই-আড়াই কিলোমিটারের রাস্তা। রিকশায় উঠিয়ে দিলে তার আর চিন্তা কী!

অন্যদিন হলে ভাইয়া তুসিকে একা কিছুতেই ছাড়তেন না। কিন্তু কাল বাদে পরশু ঈদ। আজকে না গেলে আর হয়তো ভাইয়ার চুল কালার করা হবে না। ভাইয়া তুসিকে রিকশায় তুলে দিলেন। মনটাও কেমন যেন কেঁপে উঠলো।
 
এক কিলোমিটারের মতো যাওয়ার পর হঠাৎ রিকশার চেইন পড়ে গেল। চেইন উঠিয়ে আবার প্যাডেল মারা শুরু করলো রিকশাওয়ালা। একটু পর হঠাৎ পুরোনো হয়ে যাওয়া রিকশার সামনের চাকাটি গর্তে পড়ে গেল। ভেঙে একদম চলার জো নেই।

রিকশাওয়ালা কী করবেন বুঝতে পারছেন না! শিশুটিকে এভাবে একা ছেড়ে দেবেন? আবার সঙ্গে করে যদি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসেন তবে আজ হয়তো আর রিকশাই ঠিক করা হবে না। আজ বাদে কাল ঈদ। ঈদের দিনে আর রিকশাই চালানো হবে না, জুটবে না ঈদ বোনাসও।

তুসিকে রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করলো-

তুমি একা যেতে পারবে না?

তুসি কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। কিন্তু হাতে নতুন জামা-কাপড়ের ব্যাগ। তরও যে সইছে না তার! অগত্যা রিকশাওয়ালাকে বলে হাঁটা শুরু করলো সে।

সোজা বড় রাস্তা দিয়ে হাঁটলে সময় বেশি লাগবে, তাছাড়া গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও পড়ছে। দ্রুত পৌঁছানোর জন্য মেঠোপথ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো সে। বাঁশঝাড়ের কাছে পৌঁছাতেই হঠাৎ পঁচা একটা গন্ধ নাকে ভেসে এলো। ভূতের গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো তুসির। গা ছমছম করছে। পাশ থেকে কে যেন বলে উঠলো,

তুসি এত দেরিতে ফিরলি? কখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।

তুসি মুখ ফিরে তাকাতেই দেখে ওর বন্ধু বাবু।
 
তুসি বললো, বাবু তুই? এখন এখানে?

বাবু বললো, তোকে নিতে এসেছি। চল্।

পঞ্চাশ গজের মতো হাঁটার পর হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো,

ওর সঙ্গে যেয়ো না তুসি!

হঠাৎ তুসির মনে পড়ে গেলো, বড় মামা পরশু ভাইয়াকে ফোন করে বলেছিললেন, বাবু পানিতে পড়ে মারা গিয়েছে!

তুসির গা হিম হয়ে এলো। পাশে তাকাতেই দেখে বাবুর দেহে মাথা নেই। তুসি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গেলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।