ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ইংরেজি ক্যালেন্ডার ও নববর্ষ

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৬
ইংরেজি ক্যালেন্ডার ও নববর্ষ

২০১৫ সালের ক্যালেন্ডারটা আর ঝুলবে না দেয়ালে। পুরনো ক্যালেন্ডারটা খুলে নতুন বছরের নতুন ক্যালেন্ডার ঝোলানোর সময় এসে গেছে।

ক্যালেন্ডারটা পাল্টানোর সময় কখনো কি ভেবে দেখেছ, কীভাবে এল ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকা? কীভাবেই বা ১জানুয়ারি হয়ে গেলো নিউ ইয়ার?

এসব কথা জানতে হলে বহু বছর পেছনে ফিরে তাকিয়ে জানতে হবে ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাসটা।

প্রথমে মানুষ দিন-তারিখ গণনা করত চাঁদের হিসাব করে। সেটাকে বলা হতো চন্দ্র বর্ষ। এরপর হিসাটা আরও সহজ করতে মিশরীয়রা আবিষ্কার করলো সূর্য দেখে বছর গণনা। সেটাকে বলা হয় সৌরবর্ষ। বছর গণনা তো হলো, কিন্তু তার হিসাবটা কীভাবে রাখা যায়? ভাবতে ভাবতে সুমেরীয়রা আবিষ্কার করে ফেললো ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জিকা।

এবার আসি নববর্ষের কথায়। নববর্ষ উদযাপনে পরিবর্তন আনার কৃতিত্বটা রোমানদের। তবে এক্ষেত্রে গ্রিকদেরও অবদান আছে। রোমানরা গ্রিকদের কাছ থেকে পায় ক্যালেন্ডার। তারা আবার শীতকালটাকে বছরের মধ্যে গুণত না। ফলে তাদের বছর হতো ১০ মাসে। পরবর্তীতে রোমান সম্রাট নুমা নতুন তিনটি মাস যোগ করেন বছরে- জানুয়ারি, মার্সিডানাস ও ফেব্রুয়ারি।

এরপর থেকে জানুয়ারি ও মার্চ মাসের প্রথম দিন- অর্থাৎ বছরে দু’দিন নববর্ষ হিসেবে উদযাপিত হতো। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সম্রাট জুলিয়াস সিজার  মিশরীয় সৌরবর্ষের বর্ষপঞ্জিকা সংস্কার করে একটি নতুন  বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করেন। তার নামানুসারে এই ক্যালেন্ডারের নামকরণ হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।

জ্যোতির্বিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সে বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝে ৬৭ দিন ও ফেব্রুয়ারির পর ২৩ দিন যুক্ত করে ক্যালেন্ডার সংস্করণ করেন জুলিয়াস সিজার।

জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিন রেখে মার্চ, মে, অক্টোবর ও কুইন্টিলিস মাস ৩১ দিনে এবং জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দু’দিন যুক্ত করে ৩১ দিন করে গণনা করা হয়। প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে একদিন যুক্ত করা হয়। এভাবেই আসে লিপইয়ার।

রোমানদের ফটকের দেবতা জানুস। তার নামানুসারেই জানুয়ারি মাসের নাম এসেছে। যেহেতু ফটকের দেবতার নামানুসারে জানুয়ারি মাসের নাম, তাই জানুয়ারি মাসকেই নতুন বছরের ফটক বা দরজা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এই কাজটিও করেন সম্রাট জুলিয়াস সিজার। তার সময় থেকেই জানুয়ারি মাসকে করা হয় বছরের প্রথম মাস। তাই ১ জানুয়ারি নববর্ষ উদযাপন করা শুরু হয়।

এভাবেই আসে ইংরেজি নববর্ষ। তবে ক্যালেন্ডারের গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এরপর আরও অনেক সংস্কার, পরিবর্তন-পরিবর্ধনের পর ইংরেজি ক্যালেন্ডার বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার আজকের রূপ ধারণ করেছে।

সম্রাট জুলিয়াসের নাম অনুসারে কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে জুলাই। সেক্সটিনিস মাসের নাম পাল্টে আরেক সম্রাট অগাস্টিনের নামানুসারে রাখা হয় আগস্ট।

কিন্তু এবার হলো আরেক মুশকিল। মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিস্টানরা ২৫ মার্চ নববর্ষ উদযাপন করতে শুরু করলো। খ্রিস্টধর্ম অনুযায়ী ২৫ মার্চ যিশুখ্রিস্টের মা তার অ্যাঞ্জেল গ্যাব্রিয়েলের কাছ থেকে তার সন্তান হওয়ার সংবাদ পান। এছাড়া খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতেও কোনো কোনো জায়গায় ছাড়া ছাড়াভাবে নববর্ষ উদযাপিত হতো।

৫৩২ অব্দে খ্রিস্টাব্দের সূচনা হয় একজন খ্রিস্টান পাদ্রির হাত ধরে।

১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংস্করণ করেন রোমদের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি। তখনই ১ জানুয়ারিকে নিউ ইয়ার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে ঘোষণা করা হয় যেসব বছর ৪০০ দিয়ে বিভক্ত হবে, সেই বছরগুলো হবে লিপইয়ার। জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের এই সংস্করণের পর পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।

এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই আমাদের আজকের ইংরেজি ক্যালেন্ডার, যেটা সারা বছর দেয়ালে ঝুলে আমাদের দিন-তারিখের হিসাব দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।