ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

তিতলির কানচোর

ইমরুল ইউসুফ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১১
তিতলির কানচোর

ইচ্ছেঘুড়ির বন্ধুরা, আমাদের বাড়িতে মুরগির একটি বাচ্চা আছে। বাচ্চাটিকে আমি আদর করে পুঁটি বলে ডাকি।

একদিন সে কী করলো জানো ‘পুঁটি মন খারাপ করে নেমে আসে উঠানে। হোঁৎকা ধাড্ডি মুরগিটার সঙ্গে দেখা। খোঁয়াড়ের সবচেয়ে বয়স্ক মুরগি সে। বয়সের ভারে শরীরে এক ধরনের আড়ষ্টতা এসে গেছে। উঠানে যখন শস্যদানা ছিটিয়ে দেয়া হয়, কম বয়সি মোরগ-মুরগির সঙ্গে পেরে ওঠে না সে। দেখা যায়, কয়েকটি দানা খুঁটে খেতে না খেতে সব শেষ। এ কারণে পুঁটির বয়সি মুরগিগুলোকে একদম সইতে পারে না সে। পুঁটিকে রাতুল পাত্তা না দেয়ায় খুব মজা পেল ধাড্ডি। খোঁচা মারার সুযোগটা হাতছাড়া করল না সে। বলল, কি রে পুঁটি, মনিবের ছেলের আদর পেয়ে পেয়ে দেমাগে তো মাটিতে পা পড়ে না, এখন কেমন হলো। ’

ওদিকে আমার ছোট্ট বন্ধু পরাগের কী হলো জানো? খেলাধুলা শেষে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। পরাগ তো ভয়ে অস্থির। বাবা জানতে পারলে আজ আস্ত রাখবেন না। মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরে ‘মায়ের সামনে পড়তেই গলা খাদে নামিয়ে তিনি বলেন, জলদি পড়তে বস গে, যা। তোর বাবা ছাতা হারিয়ে এসেছেন আজ। মেজাজ খুব গরম। চট করে হাতমুখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসে পরাগ। বুয়া চা বিস্কুট দিয়ে যায়। বাংলা স্যারের দেয়া রচনার কথা মনে পড়তেই পেটের ভেতর গুড়গুড় শুরু হয় ওর। মেলা নিয়ে রচনা লিখতে দিয়েছেন তিনিÑ নিজের দেখা গ্রামীণ মেলা। বইয়ের রচনা লিখলে হবে না। বাংলা স্যার খুব কড়া। পড়া না পারলে কান ধরে এমন মোচড় দেন, হাজারটা চরকি ঘুরতে থাকে চোখের সামনে। কিন্তু পরাগের গ্রামীণ মেলায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা মোটেও আনন্দের নয়। ’

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে রুপুন্তির যে অভিজ্ঞতা হলো তাও খুব আনন্দের নয়। কারণ তার প্রিয় পুতুল তিতলির একটি কান হারিয়ে গেছে। এজন্য তার সে কী কান্না। ‘বাবা মা ব্যাকুল হয়ে জানতে চান, কী হয়েছে সোনামনি? রুপুন্তি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, এই দেখো না, আমার তিতলির এক কান নেই। কে যেন কেটে নিয়ে গেছে। রুপুন্তির সবচেয়ে প্রিয় পুতুল তিতলি। খুব সুন্দর এক জাপানি পুতুল। ওর জন্মদিনের উপহার। ছোট খালা মণি দিয়েছেন। ওর কাছে খেলা বলতে এই পুতুল নিয়ে খুনসুটি। তিতলিকে মিছেমিছে খাইয়ে, গোসল করিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে মজা পায় ও। সেই পুতুলকে এখন কি বিচ্ছিরিই না লাগছে। কানকাটা পুতুল দিয়ে কি আর খেলা যায়? রুপুন্তির কান্না আর থামে না। খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল বাড়ি জুড়ে। কে করল এই নির্দয় কাজ কে? বাড়িতে রুপুন্তির বয়সি আর কেউ থাকলেও না হয় আঁচ করা যেত। কিন্তু ও তো একা। কোনো ভাইবোন নেই। তাহলে কি পূর্ণা কেটেছে কান?’

বন্ধুরা, তোমাদের এখন নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে তিতলির কান কে কেটেছিল? আর কেনই বা কেটেছিল। আরো জানতে ইচ্ছে করছে পুঁটি কেন মন খারাপ করে ঘর থেকে নেমে এসেছিল উঠানে। জানতে ইচ্ছে করছে মেলায় গিয়ে পরাগের কেন খারাপ লেগেছিল? গ্রামীণ মেলা রচনায় সে কী লিখেছিল। এসব প্রশ্নের উত্তোর হলে তোমাদের একটি বই পড়তে হবে। এখন নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে করছে বইটির নাম কী। হ্যাঁ বন্ধুরা বলছি। বইটির নাম তিতলির কানচোর। তোমাদের জন্য বইটি লিখেছেন লেখক বন্ধু শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া। লেখক মজার মজার ১২টি গল্প দিয়ে সাজিয়েছেন এ বইটি। গল্পগুলো হলোÑ একফালি তরমুজ, পুঁটি, জাহাজ মামার ছবক, শুইক্কা, দুষ্টুমি আর নয়, ওতা, নাপতেমো, ঈদের নতুন জামা, পোড়া মাটির ঝাঁজ, পটল ভাইয়ের চিকেন প স্যুপ, চৌকস এবং তিতলির কানচোর। এ গল্পগুলোর সঙ্গে মিলতাল করে ছবি এবং ৪ রঙা প্রচ্ছদ এঁকেছেন আঁকিয়ে বন্ধু মামুন হোসাইন। বইটি প্রকাশ করেছে ঢাকার তোপখানা রোডস্থ সিঁড়ি প্রকাশন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১১ সালে প্রকাশিত ৭৮ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য ১০০ (একশত) টাকা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।