ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মৎস্যমানব | আব্দুস সালাম

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৬
মৎস্যমানব | আব্দুস সালাম

রতনপুর গ্রামটি বেশ বড়। এই গ্রামে বেশ কিছু জেলে পরিবার বাস করে।

গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। জেলেরা এই নদীতেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রামের অনেকে গোসলও করে। বেশ কিছুদিন ধরে তাদের মুখে একটি কথা শোনা যাচ্ছে। নদীতে নাকি মাঝেমধ্যে এক মৎস্যমানব দেখা যায়। কিন্তু সে যদি মানুষ হয় তাহলে পানির মধ্যে কেমন করে ডুবে থাকে। কেনই বা সে পানির নিচে ঘুরে বেড়ায়। এ রকম নানান প্রশ্ন এখন গ্রামের মানুষের মুখে মুখে।

গ্রামের দু’চার জন এক জায়গায় হলেই মৎস্যমানবের কথা আলোচনা করে। তারা কীভাবে এ মৎস্যমানবকে দেখলো, তখন সে কী করছিল, আবার কখন ডুব দিলো এ নিয়ে নানান কথা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে।

গ্রামের জামাল মাঝি তো বলেই ফেললেন, তিনি মৎস্যমানবকে চেনেন। পাশের গ্রাম কোমরপুরের কাদা মিয়ার ছেলে আসলাম হোসেন ক’দিন আগে যখন নদীতে মাছ ধরছিলেন ঠিক তখন খুব কাছ থেকে তাকে দেখেছে। কিন্তু জামাল মাঝির কথা কেউই বিশ্বাস করলো না। মানুষ কি কখনো পানির মধ্যে বাস করতে পারে? সে অবশ্যই ভুল দেখেছে।

একই কথা যখন গ্রামের আক্কাছ আলী বললেন, ঠিক তখনই মানুষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হলো। গ্রামের লোকজনেরা এখন বিভ্রান্তিতে পড়ে গেলো। আবার কেউ কেউ মৎস্যমানবকে ভয়ও পাচ্ছেন। তারা নদীতে ঠিকমতো মাছ ধরতে পারছেন না, গোসল করতে পারছেন না, এমনকি নদীর পাড়ে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।

গ্রামের লোকজন এখন আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য চেষ্টা করছে। তারা গ্রামের কিছু গণ্যমান্য লোকদের কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলো। অবশেষে আসলাম হোসেনের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য গ্রামের শফিক এবং কাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হলো।

তারা দুজন একদিন সময়করে কোমরপুর গ্রামে গেলেন এবং প্রাথমিকভাবে আসলাম হোসেনের বিষয়ে কিছু খোঁজ-খবর নিয়ে গ্রামে ফিরলেন। তারা কী কী জানতে পেরেছেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা হলো।

আসলাম হোসেন ডাক্তারি পড়াশুনার জন্য বেশ কিছুদিন শহরে ছিলেন। ডাক্তারি পাস করে এখন গ্রামে বসবাস করছেন। সারাদিন ঘরে বসে চিকিৎসা সংক্রান্ত নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় বাবা-মা কখনও তাকে কোনো চাকরির জন্য চাপ দেন না। তারা সবসময় আসলামের কাজে সাহায্য করেন।

একদিন রতনপুর গ্রামের চেয়ারম্যান কোমরপুর গ্রামের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলেন। কোমরপুর গ্রামের চেয়ারম্যান ঘটনাটি বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলেন।

একদিন চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মৎস্যমানবের বিষয়ে আলোচনা করলো। চেয়ারম্যান তাদের বললেন, আসলাম ডাক্তারি পাস করেছে তা আমরা অনেকেই জানি। আমরা এও জানি যে, সে বাড়িতেই বিশেষ কিছু নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত থাকে। কিন্তু তাকে নিয়ে রতনপুর গ্রামে একটা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কেউ কেউ আসলাম হোসেনকে মৎস্য মানব মনে করছে। তারা নাকি আসলামকে পানির মধ্যে ডুবে থাকতে দেখেছে। এ বিষয়ে আসলামের মতামত জানতে পারলে উপকৃত হবো।

আসলাম হোসেন সবকিছু শুনে চেয়ারম্যানকে বললেন, রতনপুর গ্রামের লোকজন আসলে আমাকেই দেখেছে। আমিই পানির মধ্যে দীর্ঘ সময় ডুবে থাকি এবং নদীর মধ্যে একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করি। মাছের মতো কীভাবে পানির মধ্যে বসবাস করা যায় তা নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণা করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমি গ্রামের কোনো লোকের সঙ্গে কখনও আলোচনা করিনি। এমনকি আমার বাবা মার সঙ্গেও না। পানির মধ্যে কীভাবে বসবাস করা যায় তা নিয়ে এতোদিন যে গবেষণা করেছি তাতে আমি সফল।

আসলাম হোসেন মৎস্যমানবের বিষয়টি সবার সামনে খোলসা করবেন বলে গ্রামের চেয়ারম্যানকে জানালেন। একটি নির্দিষ্ট তারিখ ধার্য করে দুই গ্রামের আগ্রহী লোকদের নদীর পাড়ে আসার জন্য অনুরোধ করলেন।

সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটির জন্য অনেকেই অপেক্ষা করতে থাকলো। একসময় সবার সামনে নদীর পানিতে নেমে ডুব দিলেন। বেশকিছু সময় পানির নিচে অবস্থান করলো এবং পানির নিচে মাছের মতো ঘুরে বেড়ালেন।

এই দৃশ্য দেখে গ্রামের লোকেরা খুব খুশি হলেন। মৎস্যমানব নিয়ে তাদের মনের মধ্যে যে ভয় ছিলো তা সঙ্গে সঙ্গে দূর হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।