ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বেজি আর ব্রাহ্মণের বউ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
বেজি আর ব্রাহ্মণের বউ

অনেক কাল আগে এক গ্রামে থাকতেন এক ব্রাহ্মণ। নাম- দেব শর্মা।

সংসারে সে আর তার বউ ছাড়া কেউ ছিলো না। কিন্তু তারা ছিলেন খুব সুখী। তাদের প্রথম সন্তান জন্মের পর সংসারে নেমে এলো ‍আরও আনন্দ। ব্রাহ্মণ চাইছিলেন, এমন একটি পোষা প্রাণী পালবেন, যেনো প্রাণীটি তাদের সন্তানকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষাও করতে পারে, আবার তাকে সঙ্গও দেয়। ব্রাহ্মণ তার এ ভাবনার কথা বউকে জানালেন। বউ সম্মতি দিলে ব্রাহ্মণ গেলেন পোষা প্রাণী আনতে।  দেব শর্মা সারা গ্রাম ঘুরে, খুব খেটেখুটে একটি বেজি খুঁজে পেলেন। বেজি নিয়ে যখন তিনি বাড়ি এলেন, তখন তার বউ মনে মনে একটু বিরক্ত হলেন। কিন্তু ব্রাহ্মণ কষ্ট পাবেন বলে মুখ ফুটে কিছু বললেন না তাকে। বেজিটিকে সাদরে ঘরে রাখলেন বউ।  

ব্রাহ্মণ আর তার বউ দু’জনে মিলে সন্তানের সঙ্গে বেজিটিকেও লালন-পালন করতে লাগলেন। কিন্তু বউ বেজিটিকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলো না। বেজি ছেলের কোনো ক্ষতি করে বসতে পারে এই ভয়ে তিনি তার ছেলেকে কখনও বেজির কাছে একা রেখে যেতেন না।

একদিন ব্রাহ্মণ আর তার বউ ছেলেকে ঘরে রেখে বাইরে গেলেন। ব্রাহ্মণ বউকে নিশ্চিত করলেন, তাদের অবর্তমানে বেজি তাদের সন্তানের ভালোই দেখভাল করবে। বেজির দায়িত্বে ছেলেকে রেখে তারা চলে গেলেন। তারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর, ঘরে ঢুকলো এক কোবরা। কোবরাটি ছিলো শিশুর দোলনার কাছেই। আসন্ন বিপদ দেখে বেজি লাফিয়ে পড়লো কোবরার উপর। অনেকক্ষণ মারামারি করার পর কোবরাটিকে কামড়ে মেরে ফেললো বেজি।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর বেজি ব্রাহ্মণ আর তার বউয়ের পায়ের আওয়াজ পেলো। তাড়াতাড়ি করে যখন বেজি দরজার কাছে গেলো, তখন ব্রাহ্মণের বউ চিৎকার করে উঠলেন। কারণ, বেজির মুখে রক্ত লেগে রয়েছে দেখে তিনি ভেবেছিলেন- তারা নেই, এই সুযোগে বেজি তাদের ছেলেকে মেরে ফেলেছে। দ্বিতীয়বার না ভেবেই বউ একটি ভারী কলসি তুলে বেজির উপর ছুঁড়ে মারলো। সেখানেই মারা গেলো বেজি।  

এরপর দ্রুত ভেতরে গিয়ে ব্রাহ্মণের বউ তো অবাক! দেখলেন, তার ছেলে দোলনায় আরামে ঘুমাচ্ছে। তারপরই চোখ পড়লো দোলনার নিচে। সেখানে মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে একটি সাপ। এতোক্ষণে ব্রাহ্মণের বউ উপলব্ধি করলেন, আসলে তার ছেলেকে বাঁচাতেই সাপটিকে মেরে ফেলেছে বেজি। আর তাই বেজির মুখে রক্ত লেগে ছিলো।  
 
ব্রাহ্মণের বউ নিজের কৃতকর্মের জন্য কষ্টে ও অনুতাপে কাঁদতে লাগলেন। কারণ, বেজিটিকে তিনি বিশ্বাস করতে না পারলেও, সন্তানের মতোই লালন-পালন করেছিলেন। আর আজ নিজের হাতে তাকে হত্যা করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
এসএমএন/এসএনএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।