ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রহস্য দ্বীপ (পর্ব-১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৬
রহস্য দ্বীপ (পর্ব-১)

এনিড ব্লাইটন (১৮৯৭-১৯৬৮)
ব্রিটিশ শিশু সাহিত্যিক এনিড মেরি ব্লাইটন ১৮৯৭ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান ব্লাইটন-মেরি পলক নামেও পরিচিত।

ছোটবেলায় তিনি সঙ্গীত ও বই পড়ায় বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। বেকেনহ্যামের সেন্ট ক্রিস্টোফার হাইস্কুলে লেখাপড়া শেষ করার পর তিনি সঙ্গীত চর্চার ইতি টানেন। পরে ইপসুইচ হাইস্কুলে কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষকতার ওপর প্রশিক্ষণ নেন।

এনিড ব্রাইটন শিশুদের জন্য প্রচুর সংখ্যক বই লিখেছেন। তার চল্লিশ বছরের জীবনকালে তিনি প্রায় ৮শ’রও বেশি বই লিখেছেন। লেখার বিষয় হিসেবে বেশির ভাগ সময়ই তিনি বেছে নিয়ে ছিলেন শিশুতোষ রোমাঞ্চ, রহস্য বা যাদুআশ্রয়ী কল্পনা। তার উল্লেখযোগ্য গল্প হলো: দ্য ফেমাস ফাইভ, দ্য সিক্রেট সেভেন, দ্য ফাইভ ফাইন্ড-কোয়াটার্স, নোডি, দ্য উইসিং চেয়ার, মালোরি টাওয়ার্স এবং সেন্ট ক্লারে। ইনডেক্স ট্রান্সলেশনাম-এর মতে ২০০৭ সালে ব্লাইটন বিশ্বের পঞ্চম জনপ্রিয় লেখক। তাদের এ তালিকায় লেনিনের পর ও শেক্সপিয়রের আগে ব্লাইটনের নাম ঠাঁই পায়।

১.
অভিযানের শুরু

মাইক, পেগি, ও নোরা মাঠে বসে আলাপ করছিলো। ওরা সবাই ছিলো খুবই অসুখী। নোরা কাঁদছিলো। সেই কান্না কিছুতেই থামছিল না।
বসে থাকা অবস্থাতেই ওরা একটা মৃদু ডাক শুনতে পায়। কুউ-য়ে!
ওটা জ্যাক, মাইক বলে। চোখ মোছ। জ্যাক সান্ত্বনা দেবে!
ঝোপের ভেতর থেকে একটি ছেলে বেরিয়ে এসে ওদের সঙ্গে বসে। মুখটা জামের মতো বাদামি আর নীলচে চোখ দু’টি দুষ্টামিতে জ্বলজ্বল করছে।
হ্যালো! সে বলে। কী খবর, নোরা? আবারও কাঁদছো?
হ্যাঁ, কাঁদতে কাঁদতে, নোরা বলে, ভালোমতো পর্দা ধুতে পারিনি বলে হ্যারিয়েট খালা আজ সকালে আমাকে ছয়বার চড় মেরেছে। দেখো!
সে তাকে তার হাতটা দেখায়, চড় খেয়ে লাল হয়ে আছে।
এটা লজ্জার! জ্যাক বলে।
কেবল আমাদের মা-বাবা এখানে থাকলে ওরা আমাদের এভাবে থাকতে দিতে পারতো না, মাইক বলে। তবে যে করেই হোক আমার বিশ্বাস হয় না তারা এখনই ফিরে আসছে।
তারা গেছে কতদিন হলো? জ্যাক জিজ্ঞেস করে।
দু’বছরের বেশি, মাইক বলে। বাবা চমৎকার নতুন একটা প্লেন বানিয়েছে। তুমি তো তা জানই, আর তিনি সেটায় করে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। মাও তার সঙ্গে গেছে, কারণ সে প্লেনে চড়তে পছন্দ করে। তারা ওখানেই কাছাকাছি কোথাও আছে এবং এরপর তাদের সর্ম্পকে এর বেশি শোনা যায়নি!
আর আমি জানি হ্যারিয়েট খালা আর হেনরি খালুর ধারণা তারা আর কখনই ফিরে আসবে না। কথাটা নোরা বলে আবারও কাঁদতে শুরু করলো। আর তারা আগের মতো কখনই আমাদের আদর করবে না।

আর কেঁদো না, নোরা, পেগি বলে। তোমার চোখ দু‘টি ভয়ানক লাল হয়ে যাবে। এরপর থেকে তোমার বদলে আমিই কাপড় ধোবো।

জ্যাক নোরার কাঁধে হাত রাখে। সে তাদের সবার চেয়ে ওকেই বেশি পছন্দ করে। মাইকের জমজ হলেও ওই তাদের সবার থেকে ছোট। ওর মুখটা ছোট, আর মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো কালো চুল। মাইকও দেখতে হুবহু ওরই মতো, তবে সে খানিকটা বড়। পেগির চুলগুলো হলদে এবং সে ওদের এক বছরের বড়। জ্যাকের বয়স কারোরই জানা নেই। সে নিজেও তা জানে না। সে তার দাদার সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটা খামারে থাকে,এবং সারাদিন আস্ত একটা লোকের মতোই খাটা খাটনি করে, যদিও তার বয়স মাইকের চেয়ে খুব একটা বেশি হবে না।

এই শিশুরা মাঠে এসে ঘুরে বেড়াবার সময় সে তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলেছে। কেমন করে খরগোশ ধরতে হয় সেটা তার জানা। নদী থেকে কেমন করে মাছ ধরতে হয় তাও সে জানে। কোথায় মজার মজার বাদাম আর কালোজাম পাওয়া যাবে এর সবই তার নখদর্পণে। শিশুরা সবাই ভাবে সব কিছুই বুঝি ওর জানা, এমনকি ঝোপ জুড়ে উড়ে বেড়ানো সব পাখিদের নাম, আর ঘাসের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা সব সাপ ও এডার সাপের সঙ্গে তাদের পার্থক্য আর এধরনের সব কিছু।

জ্যাক সব সময় ছেঁড়া ফাড়া কাপড়-চোপড় পরে থাকে। তবে বাচ্চরা তাতে গা করে না। সে খালি পায় থাকে। সারা পায় ঝোপের কাঁটার আঁচড়ের দাগ। কখনই তাকে বিড়বিড় করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় না: কখনও চিৎকার চেঁচামেচিও করে না। সবকিছু নিয়ে তার মজা করা চাই এবং সে এই তিন অসহায় বাচ্চার খুব কাছের বন্ধু।

যেদিন থেকে হ্যারিয়েট খালা বুঝতে পেরেছে যে বাবা আর মা ফিরবে না, সেদিন থেকে সে পুরোপুরি ভয়ানক হয়ে উঠেছে, নোরা বলে।

[চলবে....]

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।