ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

অদম্য কিশোর মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব) | ইব্রাহিম নোমান

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
অদম্য কিশোর মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব) | ইব্রাহিম নোমান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

একাত্তর সালে দেশের জন্য লড়াই করেছিল অসংখ্য শিশু-কিশোর। বয়সের কারণে মুক্তিবাহিনীতে ওদের জায়গা হয়নি সহজে! কিন্তু ওদের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছেন অনেক বাঘা বাঘা...

আরও পড়ুন
অদম্য কিশোর মুক্তিযোদ্ধা (পর্ব-২) | ইব্রাহিম নোমান

অদম্য কিশোর মুক্তিযোদ্ধা (পর্ব-১) | ইব্রাহিম নোমান

একাত্তর সালে দেশের জন্য লড়াই করেছিল অসংখ্য শিশু-কিশোর। বয়সের কারণে মুক্তিবাহিনীতে ওদের জায়গা হয়নি সহজে! কিন্তু ওদের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছেন অনেক বাঘা বাঘা মুক্তিযোদ্ধাও! এমনও ঘটেছে, রাইফেলটাও ঠিক মতো তুলে ধরতে পারে না, তবুও মুক্তিযুদ্ধে এসেছে।

তবে শিশু-কিশোর মুক্তিযোদ্ধারা ছিল অসীম সাহসী। অসীম তাদের বুকের বল। এই কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সংবর্ধিত হয়ে তার হাত থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেছিল তারা। বেশ কয়েকজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

একে একে তুলে ধরা হলো তাদের কথা...


শহীদুল ইসলাম লালু

বীরপ্রতীক খেতাব পাওয়া আরেক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা লালু। পুরো নাম শহীদুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০। টাঙ্গাইলের দামাল কিশোর। অসীম সাহসের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতা করেন। লড়াই করেন গোপালপুর, ভুঞাপুর, মধুপুর ও নাগরপুরের বেশ কয়েকটি রণাঙ্গনে। অথচ মুক্তিযোদ্ধারা তাকে দলেই নিতে চাননি প্রথমে। ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন আর পাকিস্তানী বাহিনীর গোপন খবর এনে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। অনেক সময় তাঁর আনা তথ্য দিয়েই সাজানো হতো মুক্তিযোদ্ধাদের অপারেশন পরিকল্পনা। সবচেয়ে কমবয়সী বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছিলেন তিনিই। লালু ছিলেন একেবারে পুঁচকে এক মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি। টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা দেয়ার অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রপতির কাছে অস্ত্র জমা দিতে এলেন লালুও। কিন্তু ওই ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে তো রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান অবাক। মঞ্চ থেকে নেমে ক্ষুদে লালুকে কোলে নিয়ে মঞ্চে বসালেন রাষ্ট্রপতি। আহা! কত ক্ষুদেই না ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা লালু।

কিশোরী পুতুল

রাজশাহী অঞ্চলে পুতুল নামের ১৪ বছরের গ্রাম্য কিশোরী, ওদের বাড়িতে মাঝে মাঝে বিভিন্ন অস্ত্র রাখা হতো। মাঝে মাঝে মেয়েটি অস্ত্রগুলোতে লেগে থাকা কাদা পরিষ্কার করে দিত। এক মুক্তিযোদ্ধা মেয়েটিকে শিখিয়েছিল কিভাবে গ্রেনেড চার্জ করতে হয়। একদিন সেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা। হঠাৎই পাকবাহিনী ও এ দেশীয় দোসর রাজাকাররা আক্রমণ করে ওই বাড়িতে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষার্থে মেয়েটি ঘরের দোতলা থেকে পরপর দুটি গ্রেন্ড চার্জ করে বসে!
ততক্ষণে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুত হয়ে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। অসম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন কিশোর রমজান, নুর মোহাম্মদ, শশীলাল, বলাইদের মতো অনেক কিশোর।
স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখিত কিশোর মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও দেশজুড়ে বেশির ভাগ স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ইনফর্মার, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে তথ্য আদান প্রদান, শত্রুদের এলাকা রেকি করা, অস্ত্র গোলাবারুদ ও খাবার পৌঁছে দেয়ার কাজে কিশোর-তরুণরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
এদের মতো অনেক ক্ষুদে মুক্তিযোদ্ধা লড়াই করেছেন। কেউ লড়াই করেছেন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি। কেউ গোপন খবর এনে দিয়েছেন। কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের নানা কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। যুদ্ধ করতে করতে কেউ শহীদ হয়েছেন। দেশের জন্য, দেশের প্রয়োজনে তারা দেশের হয়ে কাজ করেছেন, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় পাওনা। এতেই তারা খুশি। আর কিছুই তাঁরা চান না। তাঁদের মধ্যেই ছিল সত্যিকারের দেশপ্রেম। আর সত্যিকারের দেশপ্রেম যাঁদের মধ্যে আছে, তাঁদের চেয়ে বড় আর কেউ নন। লাখো শহীদের আত্মদানে আজ আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি কনায় কনায় লুকিয়ে আছে স্বাধীনতাকামী সেসব মানুষের বীরত্বগাথা।
 
লেখক: শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।