ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আটকবর (পর্ব-১) | আব্দুস সালাম

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
আটকবর (পর্ব-১) | আব্দুস সালাম ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর ছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী। এই মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে আনিকার নানার বাড়ি। গ্রামটি দেখতে খুব সুন্দর। চারিদিকটা সবুজ গাছপালায় ঘেরা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদী। এই গ্রাম...

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক স্থান। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর ছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী।

এই মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে আনিকার নানার বাড়ি। গ্রামটি দেখতে খুব সুন্দর। চারিদিকটা সবুজ গাছপালায় ঘেরা। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদী। এই গ্রাম থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুজিবনগর কমপ্লেক্স। আনিকার গ্রাম খুব প্রিয়। সে তার বাবা-মার সঙ্গে ঢাকাতে থাকে। স্কুল ছুটি থাকলে বছরে দুই তিনবার সে নানার বাড়িতে বেড়াতে যায়। এখন তার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিছুদিনের জন্য স্কুল বন্ধ থাকবে। ছুটির কয়টা দিন সে গ্রামে কাটাতে চায়। তাই সে কয়েকদিনের জন্য নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলো।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে ঘুরতে আনিকার খুব আগ্রহ। আনিকার নানা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ভারতে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নানার কাছ থেকে আনিকা মুক্তিযুদ্ধের অনেক গল্প শুনেছে। নানা কীভাবে যুদ্ধ করেছেন, কীভাবে যুদ্ধে আহত হয়েছেন এবং কীভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন এসব অভিজ্ঞতার কথা আনিকা নানার কাছ থেকে শুনেছে। সে যখনই মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনে তখনই তার ভালো লাগে। আর সুযোগ পেলেই আনিকা নানার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় ঘুরতে যায়। এবারও সে এরকম কোনো একটি এলাকায় ঘুরতে যাবে।  

মুজিবনগরের আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এসব যুদ্ধের বর্ণনা আনিকা তার নানার কাছ থেকে বেশ কয়েকবার শুনেছে। মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতিবিজড়িত এলাকার মধ্যে আটকবর একটি অন্যতম এলাকা। আটকবর মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিকে ধারণ করে আছে। আমাদের প্রাণের, আমাদের আবেগের ইতিহাস জড়িত এখানে। আনিকা আটকবরের গল্প শুনেছে কিন্তু একবারও সেখানে তার যাওয়া হয়নি। তাই এবার আটকবরে নিয়ে যেতে আনিকা তার নানাকে অনুরোধ করলো। আর নানাও তার অনুরোধ রক্ষা করলো।

আটকবর মুজিবনগর উপজেলা হতে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শিবপুর গ্রাম থেকেও প্রায় একই দূরত্ব। এটি বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। আটকবর এলাকায় একটি মুক্তমঞ্চ আছে। আছে সুরম্য মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা, ফুলবাগান আর বিভিন্ন প্রজাতির ফলগাছ। এর খুব কাছেই রয়েছে জমিদার নফর পালের হাজার দুয়ারি ঘর, আর তার স্ত্রীর জন্য নির্মিত অপুরূপ ‘তালসারি সড়ক’। এসব এলাকা পরিদর্শন করবে বলে আনিকা বেশ আনন্দিত।  

পরেরদিন সকালবেলায় আনিকা তার নানার সঙ্গে আটকবরের উদ্দেশে রওনা হলো। তারা প্রথমে মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে উপস্থিত হলো। তারপর সেখান থেকে বাসযোগে আটকবরে পৌঁছালো। আটকবরে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। আটজন মুক্তিযোদ্ধা কীভাবে যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন সেইসব গল্প আনিকা তার নানার কাছে শুনতে চাইলো। নাতনীর আগ্রহ দেখে নানাও খুশি হলেন। নানা আটজন বীর মুক্তিযোদ্ধার শহীদ হওয়ার ঘটনাটি বলতে শুরু করলেন।

চলবে...

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।