ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

একজন সুখী রাজপুত্তুরের গল্প (প্রথম পর্ব)

মূল: অস্কার ওয়াইল্ড <br>অনুবাদ: সামিও শীশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১১
একজন সুখী রাজপুত্তুরের গল্প (প্রথম পর্ব)

শহরটির মাঝে উঁচু যে মূর্তিটি দেখা যাচ্ছে সে মূর্তিটি হচ্ছে একজন সুখী রাজপুত্তুরের। মূর্তিটি সোনার হালকা প্রলেপ দিয়ে ঢাকা।

সুখী রাজপুত্তুরের মূর্তির চোখ দুটিতে নীলকান্ত মণি বসানো, সেই চোখ দু’টি জ্বলজ্বল করছে। তার এক হাতে তলোয়ার ধরা, তলোয়ার ধরা মুষ্টি থেকে লাল রুবি রত্নের দ্যুতি ছড়াচ্ছে।

মূর্তিটি সুন্দর নিঃসন্দেহে। শহরের কাউন্সিলররা চান যে নগরবাসীরা তাদের রুচি আর শিল্পবোধের প্রশংসা করুক। তারা বলেন যে, মূর্তিটি বায়ুঘড়ির মতো সুন্দর। যদিও বায়ুঘড়ির মতো এর ব্যবহারিক দিকটি নেই।   কাউন্সিলররা খুব সচেতন যেন তাদের রুচি নিয়ে কেউ কোনো সন্দেহ না করেন।

রাতে যখন কোনো শিশু আকাশের চাঁদ ধরার জন্য জেদ করে তখন তার মা একটু ধমকে বলেন, ‘তুই সুখী রাজপুত্তুরের মতো হতে পারিস না? লক্ষ্মী রাজপুত্তুর তো কখনও কোনো কিছুর জন্য কাঁদে না। তুই কেন খালি কান্নাকাটি করিস?‍’

জীবনের প্রতি ত্যক্তবিরক্ত কোনো লোকও মূর্তিটির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যাক অন্তত দুনিয়াতে একজন মানুষ আছে যে পুরো সুখী। ’

চার্চ থেকে বেরুনো পরিষ্কার ঝক্ঝকে পোশাক পরা শিশু-কিশোরেরা মূর্তিটিকে দেখে বলে, ‘আহা! মনে হয় যেন সত্যিকারের এক ফেরেশতা দাঁড়িয়ে আছে। ’

এ কথা শুনে রসকষহীন গণিতের শিক্ষক বলেন, ‘তোমরা কি কখনও ফেরেশতা দেখেছো? না দেখে কী করে এমন কথা বলো?’

শিশুরাও চটপটে উত্তর দেয়, ‘দেখেছি তো। স্বপ্নে দেখেছি। ’

অতি যুক্তিবাদী গণিতের শিক্ষক ভদ্রলোক ভুরু কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি স্বপ্নের বিষয়টি মানতে পারেন না।

একরাতে একটি ছোট পাখিছানা এ শহরে উড়ে আসে। তার বন্ধুরা ছয় সপ্তাহ আগে মিশরে চলে গেলেও সে যায়নি। থেকে যাবার কারণ গত বসন্তে সে যখন উড়ে এসে নদীর ধারে বসে, তখন হালকা-পাতলা গড়নের চিকন কোমরের একটি নলখাগড়া দেখে। প্রথম দেখাতেই প্রেম।

পাখিছানার প্রেমের প্রস্তাবে নলখাগড়াটি ঈষৎ ঝুঁকে সম্মতি দেয়। পাখিছানাটি নলখাগড়ার চারপাশে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, পানিতে ডানা ঝাপটায়, নদীতে রুপালি মৃদু তরঙ্গ ওঠে। এই ছিল পাখিটির প্রেমের পূর্বরাগ, পুরো গরমকাল জুড়েই এই চলেছে।

অন্যান্য পাখিরা অবাক হয়, নিজেদের মাঝে কিচিরমিচির করে বলে, ‘এটা একটা বিদঘুটে সম্পর্ক। নলখাগড়াটির তো কোনো টাকাপয়সা নাই, আর কতজনের সাথে যে তার সম্পর্ক আছে কে জনো?’ এ কথা সত্যিই যে নদীতে অসংখ্য নলখাগড়া আছে। পরে, যখন শরৎকাল আসে তখন পাখিরা সবাই উড়ে যায়।

আর সব পাখিরা চলে যাবার পর পাখিছানা একা বোধ করে, সেই সাথে তার প্রেমেও ক্লান্তি আসে। পাখিছানা ভাবে, ‘সে এখন আর আমার সাথে কথা বলে না। সে কি ছলনাময়ী? সে এখন বাতাসের সাথে ছলাকলা খেলছে। যখন বায়ু বয়, তখন তার নাচানাচি বেড়ে যায়। ’ আরও ভাবে, ‘সে তো গৃহী আর আমি উড়ে উড়ে বেড়াই। আমার বউকেও তো আমার সাথে উড়ে বেড়াতে হবে। ’

শেষ পর্যন্ত পাখিছানা নলখাগড়াটিকে বলেই ফেলে, ‘তুমি আমার সাথে যাবে কিনা বল?’ কিন্তু নলখাগড়া মাথা নেড়ে না জানিয়ে দেয়, তার জীবন তার ঘরের সাথে নিবিড়ভাবে বাঁধা।

পাখিছানা রেগে বলে, ‘আমার কাছে তোমার আর কোনো দামই সেই। আমি পিরামিডের দেশে চললাম। বিদায়। ’ সে উড়ে যায়।

সারাদিন সে উড়ে, রাতে শহরটিতে পৌঁছে। নিজে নিজে বলে, ‘আমি কোথায় থাকব? শহরে নিশ্চয়ই সে ব্যবস্থা আছে। ’

(চলবে)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।