ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

একজন সুখী রাজপুত্তুরের গল্প (তৃতীয় পর্ব)

মূল: অস্কার ওয়াইল্ড <br>অনুবাদ: সামিও শীশ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১১
একজন সুখী রাজপুত্তুরের গল্প (তৃতীয় পর্ব)

পাখিছানা উড়ে উড়ে যায়। উড়তে উড়তে নদী পেরুবার সময় জাহাজের মাস্তুলে ঝুলানো আলো দেখতে পায়।

শহরের ইহুদিদের পাড়ার উপর দিয়ে যাবার সময় দেখে কয়েকজন ইহুদি টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে দরাদরি করছে। এসব পেরিয়ে সে গরীব মহিলাটির কুটিরে পৌঁছে। বাচ্চাটি জ্বরে কাতরাচ্ছে, মা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। পাখিছানা মহিলাটির হাতের কাছে রুবিটি রেখে চুপিচুপি উড়ে ঘর থেকে বের হয়। বেরুবার আগে পাখা দিয়ে বাচ্চাটির কপালে বুলিয়ে দেয়। বাচ্চটি বলে ওঠে, ‘‘আহা! কী আরাম লাগছে। জ্বর চলে যাচ্ছে। ’ বাচ্চাটি আরাম করে ঘুমিয়ে পড়ে।

পাখিছানা সুখী রাজপুত্তুরের কাছে ফিরে আসে। কাজ হয়ে গেছে সে খরব দেয়। তারপর বলে, ‘এটা আজব ব্যাপার। এখন এত ঠাণ্ডা, কিন্তু আমার বেশ গরম লাগছে। ’
‘তুমি একটা ভাল কাজ করেছে’ বলে সুখী রাজপুত্তুর। পাখিছানাও কারণটা ভাবতে শুরু করে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। কোন কিছু চিন্তা করতে গেলেই তার ঘুম আসে।

ভোরের আলো ফুটবার পর সে নদীতে গোসল করতে যায়। পাখিটি যখন নদীর পানিতে গোসল করছিল, তখন ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটছিলেন একজন অধ্যাপক। ঠাণ্ডার মধ্যে ভোরে গোসল এমন অদ্ভূত দৃশ্য দেখে তিনি বলেন, ‘এটি প্রকৃতির এক অদ্ভূত খেয়াল। ’ পরে তিনি ‘শীতল জলতরঙ্গ আর একটি পাখি’ শীর্ষক একটি লম্বা রচনা স্থানীয় পত্রিকায় লেখেন। তার মনের মাধুরী আর সমৃদ্ধ শব্দ সম্ভার দিয়ে রচিত এ রচনা থেকে অনেকে উদ্ধৃতি দেন, তবে প্রায় কেউই এ রচনার মর্মার্থ বুঝতে পারেন না।

সারা সকাল পাখিছানা শহরের সবগুলো স্তম্ভ, ভাস্কর্যগুলো ঘুরে দেখে। গির্জার ছাদে সে দেখে দু’টি চড়ুই ছানা পাখিছানাকে দেখিয়ে নিজেদের মাঝে বলছে, ‘এটা কী এক আজব চিড়িয়া। ’ পাখিছানা খুব মজা পায়।  
‘কিন্তু এখন আমার যাবার সময় হল। ’ পাখিছানা সুখী রাজপুত্তুরকে বলে, ‘মিশরে কি তোমার জন্য কোন কিছু করতে হবে, হলে বল। আমি এখন রওনা হচ্ছি। ’

‘পাখিছানা, ও পাখিছানা, তুমি কি আর একটা রাত আমার সাথে থাকবে না?’

‘মিশরে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে, কাল আমার বন্ধুরা আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্যে যাবে। নদীর ধরে তৃণলতা দিয়ে আমাদের আসন তৈরি করব। তারপর মেমন দেবতার ( মেমন ছিলেন একজন ইথিওপিয়ান রাজা, গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী মেমন রাজা  ট্রয় যুদ্ধে ট্রোজানদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন এবং একিলিসের হাতে নিহত হন) সমাধিতে গিয়ে বসব। জানো দেবতা মেমন সারারাত আকাশের তারা দেখে, যখন ভোরের তারাটি জ্বলজ্বল করে ওঠে তখন সে আনন্দে কেঁদে ওঠে, তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। রাতে হলুদ রঙের সিংহ নদীতে পানি খেতে আসে। সিংহের চোখ দু’টি সবুজ চকচকে পাথরের মতো,তাদের গর্জন জলপ্রপাতের আওয়াজকেও ছাপিয়ে যায়। ’

‘পাখিছানা, লক্ষী পাখিছানা, শহরের ঐ দূরের বাড়ির চিলেকোঠায় আমি একজন তরুণকে দেখতে পাচ্ছি। তার  ঘরে কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, কয়েকটা ফুল শুকিয়ে পড়ে আছে। তার মাথায় কী সুন্দর বাদামি চুল, ঠোঁটগুলো ডালিমের মতো টকটকে লাল, তার চোখ স্বপ্নে ভরা। সে একটি নাটক লেখা শেষ করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এই কনকনে ঠাণ্ডার কারণে সে লেখা শেষ করতে পারছে না। তার ঘর গরম করার জন্যে উনুনে একটুও আগুন নাই। শীত আর তার সাথে খিদাতে তারতো প্রায় মরমর অবস্থা। ’

পাখিছানার মনটা খুব নরম। সে বলে ‘আমি আজ রাতও তোমার সাথে থাকব। তোমার কাছ থেকে কি আরেকটা রুবি নিয়ে যাব?’

‘আমার কাছে তো আর কোনো রুবি নাই। কিন্তু আমার চোখ দুইটা দামী নীলা পাথরের। প্রায় হাজার বছর আগে ভারত থেকে আনা হয়েছিল। সেখান থেকে একটা পাথর তুলে ছেলেটাকে দিয়ে আস। সে এটা বিক্রি করে খাবার আর কাঠ কিনুক। আমি চাই সে তার নাটকটা লেখা শেষ করুক। ’

চলবে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।