ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

তিতলীর বর্ষবরণ | হাসনা হেনা

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৮
তিতলীর বর্ষবরণ | হাসনা হেনা তিতলি

পহেলা বৈশাখের আর একদিন বাকি। ভাবতেই তিতলির মনটা আনন্দে নেচে উঠলো। বাবা হাট থেকে বড় বড় দুটো ইলিশ মাছ কিনে এনেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও সকালের নাস্তায় পান্তা-ইলিশ আর পাঁচ রকমের ভর্তা হবে। এবার তিতলির আনন্দটা একটু বেশিই, কারণ ছোটমামা এসেছেন। খুব মজার মানুষ ছোটমামা।

বাচ্চাদের সঙ্গে আনন্দ হৈ-হুল্লোড় করতে ছোটমামা খুব ভালোবাসেন। আসার সময় শহর থেকে তিতলির জন্য লাল টুকটুকে একটি জামা, রঙিন ফিতে, কাচের চুড়ি, আরও কত কি এনেছেন।

এসব দেখে খুশিতে আত্মহারা তিতলি। রাতে ঘুমাতে গিয়ে রাতটা খুব বেশি দীর্ঘ মনে হচ্ছে আজ।  

অপেক্ষা কখন সকাল হবে? ভোরের অপেক্ষা করতে করতে চোখজুড়ে কখন ঘুম নেমে এলো বুঝতেই পারেনি সে। সকালে তিতলিকে দেখতে না পেয়ে ছোটমামা তিতলির খোঁজ করছেন। আমাদের তিতলি সোনা কই? মা বললেন তিতলি এখনও ঘুমোচ্ছে। ছোটমামা তিতলির শিয়রে এসে বসেছেন মাথায় হাত বুলাচ্ছেন আর ডাকছেন- তিতলি সোনা এখনও ঘুমাচ্ছিস যে! পান্তা-ইলিশ খাবি না? তিতলি হুড়মুড় করে উঠে বসলো।  

চোখ কচলাতে কচলাতে প্রশ্ন করলো- আমাকে রেখেই তোমরা খেয়ে নিয়েছো? 
না, তোর জন্যই তো অপেক্ষা করছি।

সকালের নাস্তা সেরে সেজেগুজে বাবার হাত ধরে চলে গেলো হাটে। দোকানে দোকানে চলছে হালখাতার উৎসব। দোকানগুলো কি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অবাক চোখে তিতলি দোকানের সাজসজ্জা দেখছে। বাবা তিতলিকে নিয়ে একটি দোকানে ঢুকলেন হালখাতার দাওয়াত খেতে। দোকানদারের সঙ্গে বাবা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন। কত রকমের মিষ্টি খেতে দিলেন দোকানদার। সাথে সুন্দর করে সাজিয়ে এক খিলি পানও দিলেন বাবাকে।

বাবা মিষ্টি আর পান খেয়ে দোকানদারকে কিছু টাকা দিলেন। দোকানদারের সামনে দু'টো মোটা মোটা খাতা। একটি পুরাতন আরেকটি নতুন। ব্যাপারটা কেমন যেন গোলমেলে মনে হলো তিতলির। ছোট্ট মাথায় একটা প্রশ্ন উঁকি দিতে লাগলো। বাড়ির ফেরার সময় বাবাকে প্রশ্ন করলো তিতলি- বাবা হালখাতা কী?

সারা বছরের পুরনো দেনা-পাওনার হিসাব মিলিয়ে নতুন বছরের প্রথমদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে আরেকটি নতুন হিসাবের খাতা খোলাকেই হালখাতা বলে।

ছোটমামা বলেছেন এবার তিতলিদের গাঁয়ের সবগুলো বৈশাখী মেলা ঘুরিয়ে দেখাবেন। ছোটমামা জিজ্ঞেস করলেন আজ কোন মেলায় যাবি? তিতলি বললো ছোটমামা আজ আমাদের স্কুল মাঠের মেলায় চলো।  

মেলায় যেতে যেতে তালপাতার ভেঁপুর আওয়াজ শুনে তিতলির মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। অনেক শিশু মেলা থেকে ফিরছে। কারো হাতে বাঁশি, কারো হাতে বেলুন, খেলনা। কারো হাতে মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া-পুতুল আরো কত কি! লোকজনের হৈ-হুল্লোড়ে মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। তিতলির অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো মেলায়। সবাই নতুন জামা পরে কত সুন্দর করে সেজেছে।

নাগরদোলার ঘূর্ণিপাক, খেলনা, মিঠাই, হাড়িকুড়ির বেসাতি, লোকশিল্প সামগ্রীর বেচাকেনা, বাউল গান ও লোকগীতির অনুষ্ঠান চলছে মেলায়। একটি তাঁতের শাড়ি দেখে তিতলির খুব পছন্দ হলো। মামাকে বললো- মামা এই শাড়িটা মায়ের জন্য কিনবো। মামা শাড়িটির দরদাম করে কিনে ফেললেন। তিতলি বললো- ছোটমামা মায়ের শাড়ির টাকাটা কিন্তু আমি দেবো। মামা অবাক স্বরে প্রশ্ন করলেন- তুই টাকা কোথায় পেলি?

তিতলি মিষ্টি করে হেসে বললো- সারা বছর টিফিনের টাকা থেকে জমিয়েছি। মাকে শাড়িটা দিলে মা খুব খুশি হবেন। তিতলির কথা শুনে ছোটমামা বেশ অবাক হলেন।

তিতলিকে নিয়ে মামা নাগরদোলায় চড়লেন। মিষ্টি কিনলেন। মাটির তৈরি ছোট ছোট হাড়ি-পাতিল, হাতি-ঘোড়া আর পুতুল কিনলেন। সন্ধ্যের পর একরাশ খুশি নিয়ে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলো তিতলি।

ichবাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল১৩, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।