ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

আমাদের প্রাণের উৎসব

আবীর ফেরদৌস মুখর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১১
আমাদের প্রাণের উৎসব

অক্টোবর ২০০৮ সাল। বন্ধুরা মিলে স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাটক করতাম।

হঠাৎ একদিন এক বন্ধু বলল, ‘ফিল্ম বানাবি?’ বলেই হাতে একটা পেপার কাটিং (বিজ্ঞাপন) ধরিয়ে দিল। বিজ্ঞাপনের প্রথম লাইন ‘ছিল গল্প লেখ, ছবি বানাও উৎসবে এসো’। মনে হলো আমিও পারব ।

দ্বিতীয়বারের মত চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি আয়োজন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব । চলচ্চিত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ ডিসেম্বর । ব্যস! শুরু হয়ে গেল তোড়জোড়। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম রোযার ছুটিতে শ্যুটিং শুরু করব । তখন একবারের জন্যও মাথায় আসেনি ফ্রেমিং কেমন হবে। এডিট কীভাবে করব? আসলে কোনো ধারণাই ছিল না। মাথায় ছিল শুধু বানাতে হবে।

শ্যুটিং-এ আমাদের ক্যামেরা ছিল বন্ধু শাহরিয়ারের ৮ মেগাপিক্সেল ডিজিটাল ক্যামেরা। রোযার মধ্যে শুরু হলো আমাদের কাজ। কিছু ছেলের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছিল আমাদের সেই ফিল্ম। যেহেতু পুর্বের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই অনেক ভুল ত্রুটি নিয়েই ফিল্ম জমা দিয়েছিলাম। সম্পাদনার কাজও আমরা নিজেরাই করেছিলাম। অনেক ভুল ছিল। জমা দেওয়ার সময় বেশ ভয়ে ছিলাম যে সিলেক্ট হয় কিনা ।

হঠাৎ একদিন আমার নামে একটি চিঠি আসে। চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি থেকে পাঠিয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্রটি উৎসবের জন্য মনোনীত হয়েছে। সেদিন আমাদের খুশি দেখে কে! এরপর ২০০৯ সালের জানুয়ারির ২২ তারিখের জন্য অপেক্ষা।

অবশেষে আসল সেই কাঙ্খিত দিন। সকাল বেলা চলে গেলাম উৎসব প্রাঙ্গন পাবলিক লাইব্রেরিতে। আমার মত অনেকেই এসেছিল। চলছিল রেজিস্ট্রেশন। অন্যরকম একটা উত্তেজনা অনুভূত হচ্ছিল মনের মধ্যে । সবার সাথে আলাপ হচ্ছিল কে কি দিয়েছে এই নিয়ে। বুঝতে পারছিলাম অন্যরকম সাতটি দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

মনে হচ্ছিল জীবনের সেরা সময় পার করছি । মোরশেদুল ইসলাম, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তারেক মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল যাদের সাথে কোনদিন দেখা হবে সেটাই যেখানে ভাবিনি সেখানে তাদের সামনে বসে তাদের কাছ থেকে শুনেছি চলচ্চিত্রের ইতিহাস, ফ্রেমিং, প্রি-প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশন ।

চলচ্চিত্র নির্মাণ দলবদ্ধ কাজ তাও জানতে পেরেছি তাদের কাছ থেকে । আর জাফর ইকবাল স্যারের সাথে কাটানো সময় তো ভুলার মত না। শুধু তাই নয় সাত দিন যে কত বিখ্যাত মানুষের সাথে দেখা হয়েছে তাদের মধ্যে ছিলেন মোস্তফা মনোয়ার, সৈয়দ শামসুল হক এবং সুলতানা কামাল।

শিশু চলচ্চিত্র উৎসব পরিণত হয়েছিল প্রাণের উৎসবে। শিশু প্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবীরা পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল খুব কাছের বন্ধু । কখনই মনে হয়নি তাদের সাথে এখানে এসে পরিচয় হয়েছে । মনে হচ্ছিল কত দিনের পরিচিত । ওই সাত দিনে আমরা ভুলেই গেছিলাম যে এখানে নির্বাচিত চলচ্চিত্র নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা হচ্ছে।

সেরা ৫ চলচ্চিত্রকে পুরস্কার দেওয়া হবে । আসলে এই উৎসবে এত কিছু জানতে পেরেছি, এত বিখ্যাত মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি আর এত বন্ধু পেয়েছি যে এর থেকে বড় আর কোন পুরস্কার হয় না। আর এজন্যই হয়তো প্রতি বছর আমরা অপেক্ষা করে থাকি আমাদের এই প্রাণের উৎসবের জন্য ।

তবে একটি কথা ভাবলে মন খারাপ হয়ে যায়। যার কাছ থেকে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিটি আসরে চলচ্চিত্র সম্পর্কে নতুন করে জেনেছি সেই তারেক মাসুদ স্যারকে আমরা আর পাবো না। তবে এতটুকু জানি স্যার যত দূরেই থাকুন না কেন তার আশীর্বাদ তিনি আমাদের দিয়ে যাবেন সবসময়।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।