ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

রাজকন্যা সিতারা | বিএম বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
রাজকন্যা সিতারা | বিএম বরকতউল্লাহ্

হটেনটট রাজ্যের রাজা-রানির একমাত্র মেয়ে সিতারা। তার আদরের শেষ নেই। সে যেদিকে তাকায় তার সবটুকু এনে দিতে চায় রাজা আর রানি।

এ রাজ্যের রাজার একটা অদ্ভুত শখ আছে। সেটা হলো বনের পশুপাখিদের ধরে এনে খাঁচায় পোষা।

রাজার দেখাদেখি রাজ্যের অনেক প্রজা এভাবে পশুপাখি পোষে।
রাজবাড়িতে খাঁচাবন্দি পশু-পাখিগুলো সারাদিন ছটফট করে। ছোট্ট রাজকন্যা এসব দেখে খুব কষ্ট পেলো। রাজা বললেন, এগুলো রাজবাড়ির বহুদিনের পুরনো ঐতিহ্য আর গৌরবের একটি অংশ। ওদের ছটফটানি দেখে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। ধীরে ধীরে সব সয়ে যাবে। রাজকন্যা চুপ করে রইলো।
রাজকন্যা সিতারার বয়স এখন এগারো বছর। বুদ্ধিমতি চটপটে ছোট্ট রাজকন্যা।
একদিন রাজকন্যা রাজাকে বললো, খাঁচাবন্দি পশু-পাখিগুলোকে ছেড়ে দাও বাবা।
আমি তোমার এ আবদার রক্ষা করতে পারবো না মা! বললেন রাজা।
কেন পারবে না বাবা? বনের পশু-পাখিদের খাঁচায় বন্দি করে কী সুখ পাও তোমরা? কী অপরাধ করেছে নিরীহ পশুপাখিরা? কেন এভাবে বন্দি থাকবে ওরা? 
রাজা বললেন, রাজবাড়ির ঐতিহ্যকে ভেঙে ফেলা যাবে না মা। তুমি আর যা বলবে তাই করবো, যা চাইবে তাই দেবো। তবু এ কথাটি আর মুখে এনো না তুমি।
এক সপ্তাহ পরে রাজকন্যা সিতারা রাজার সামনে গিয়ে বললো, তুমি বলেছিলে আমি আর যা চাই তাই দেবে। আমাকে এক মাসের জন্য রাজার ক্ষমতা দাও।
রাজা মনে মনে বললেন, এই তো চাই। দেখি, রাজ্যটা কেমন চালায় আমার কন্যেটি!
রাজা আনন্দের সঙ্গে এক মাসের জন্য রাজার ক্ষমতা রাজকন্যাকে দিয়ে দিলেন।  
রাজকন্যা প্রথমেই আদেশ করলেন, এক মাসের জন্য বন্দি করা হোক রাজা আর রানিকে। যেই আদেশ সেই কাজ।  
বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু দরকার সবই দেওয়া হলো রাজা-রানিকে।
রাজা-রানি বললেন, আমাদের কী অপরাধ যে, একমাস একটা কক্ষে এভাবে বন্দি হয়ে থাকতে হবে? এটা কি আদৌ সম্ভব?
সিতারা বললো, এটা খুবই সম্ভব।
শুরু হলো রাজা-রানির বন্দিজীবন।
এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই রাজা-রানি বন্দিদশা হতে মুক্তি লাভের জন্য রাজকন্যাকে অনুরোধ করতে লাগলেন।  
ছোট্ট রাজকন্যা এতে কান দিলেন না।
পনের দিন পর খবর এলো, রাজা-রানি কক্ষজুড়ে এলোমেলো ঘুরছেন আর অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। এসব শুনে রাজকন্যা সিতারা কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।  
রাজা বলছেন, মা এ বন্দিজীবন আর এক মুহূর্তও ভালো লাগছে না। বন্দি থাকার ভয়ংকর কষ্টের থেকে মরণও ঢের ভালো।
ছোট্ট রাজকন্যা বললো, কি অনুভব করলেন মহামান্য পশু-পাখিপ্রেমিক সৌখিন রাজা-রানি?
আমাদের মুক্তি দিন। তারপর দেখেন আমি কী করি, বললেন রাজা।
ছোট্ট রানী তাদের মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে দিলেন রাজ্যক্ষমতা।
রাজ্যের সব বন্দি পশু-পাখিকে মুক্ত করে দাও। আমরা কারো স্বাধীনতা হরণ করবো না। এমন আদেশ জারি করে দিলেন রাজা।
রাজার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হলো। মুক্ত করে দেওয়া হলো রাজ্যের বন্দি পশুপাখিদের।  
বন্দি পশু-পাখিরা মুক্তির আনন্দে দিশেহারা। মুক্তি দেওয়ার ও মুক্তি পাওয়ার আনন্দে টগবগ করছে গোটা হটেনটট রাজ্য। অসংখ্য হৃদয় থেকে বারবার উচ্চারিত হতে লাগলো, রাজকন্যা সিতারা দীর্ঘজীবী হোক।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।