ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ফাঁকি

সুমন কোড়াইয়া | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১১
ফাঁকি

বাবু, খোকন, কাজল তিন বন্ধু। একই স্কুলে পড়ে।

কাজল এক ক্লাশ নিচে। বাকিরা একই ক্লাশে পড়ে। গ্রামের সকলেই এই তিন বন্ধুকে চিনে। এরা এক সাথেই চলাচল করে। খেলাধুলা করে। স্কুলে যায়।

এদের তিনজনের বাড়িতেই গরু আছে। ছুটির দিনে এক সাথে বিলে ঘাস কাটতে যায়। তাদের স্কুল শুরু হয় সকাল এগারটায়। সকালে তারা তিনজন বাজারে দুধও বিক্রি করতে নিয়ে যায়।

দুধ বিক্রি করে এক দুই টাকা করে জমায় তারা। তারপর স্কুলে গিয়ে সেগুলো দিয়ে তিন বন্ধু টিফিন খায়। বেশ ভালই যাচ্ছিলো তাদের দিন কাল। তারা আলোচনা করে বড় হয়ে কে কি হবে। বাবু বলে সে হবে ডাক্তার, কাজল বলে সে হবে শিক্ষক আর খোকন বলে, সে অফিসে কাজ করবে। সেই মোতাবেক তারা পড়াশোনা করতে থাকে।

পাশ করে বাবু এবং খোকন উঠলো ক্লাশ সেভেনে। আর কাজল ক্লাশ সিক্সে। বড় ক্লাশ। তাই পড়াও বেশি। কাজল এবং খোকন পড়ার দিকে মনোযোগ দিলো।

এদিকে বাবু প্রায় ছুটির দিনেই সিনেমা হলে যায়। এখন সে আর টিফিনে বন্ধুদের সাথে মাঠে বসে বাদাম খায় না। সে খোকন এবং কাজলকে ছবির কাহিনী শোনায়। তাদের  ছবি দেখতে উৎসাহিত করে।

নাটোরের বনপাড়ায় তখন তিনটা সিনেমা হল। লোকজন দূর দূরান্ত থেকে এসে ছবি দেখে। প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন ছবি আসে সিনেমা হলে। বাবু স্কুলের দিনের ছবি দেখা শুরু করলো। সে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই স্কুল ফাঁকি দিয়ে ছবি দেখতে যায়।

একদিন খোকন এবং কাজলও গেল ছবি দেখতে। বাবু অনেক জোরাজুারি করে ওদের এনেছে। দুপুরে শো শুরু হয় সাড়ে বারটায়। তারা স্কুলের ড্রেস পরেই সিনেমা হলে এসেছে। স্কুলে যায়নি। বাবু বিড়ি কিনেছে। খোকন ও কাজলকেও সে বিড়ি কিনে দিয়েছে। বলেছে, খা দেখবি মজা পাবি।
 
কাজল বিড়িতে টান দিয়েই কাঁসি দেয়। তারপরও খোকন এবং পিন্টুর দেখাদেখি বিড়ি খায়। পরে  সিনেমার শো শুরু হয়। সিনেমা হলে বসেও সিগারেট খায় তারা। এতে কাজলের প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়।

তার মার কথা মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, ‘যদি কখনো বিপথে যাও দেখবে তোমার শরীর তোমাকে সিগন্যাল দিবে। আবার সঠিক পথে ফিরে আসার জন্য চাপ দিবে। ’ ছবি দেখতে দেখতে সে আবার মার কথা ভুলে যায়।

তাদের স্কুল ছুটি হয় বিকেল চারটায়। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে আধা ঘণ্টা লাগে। তারা তিন বন্ধু সিনেমা দেখে চারটার দিকে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে গিয়ে বলে, আজ এক পিরিয়ড আগে ছুটি দিয়েছে।

বাবু প্রতি সপ্তাহেই স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে লাগলো। কাজল এবং খোকন এক দিন স্কুল ফাঁকি দিয়ে হলে গিয়ে আর যায় না। এখন বাবু একাই যায়। খোকন বাবুকে বলে, আর স্কুল ফাঁকি দিস না। বাবু কথা শোনে না। সে স্কুলের সাময়িক পরীক্ষাগুলোতে ফল খারাপ করতে থাকে।

বছর শেষে বাবু ফেল করলো। কাজল আর খোকন পাস করে। বাবু নিজের ভুল বুঝতে পারে। সে ভাবে সত্যি কী ভুলই না  সে করেছে।   সে চেষ্টা করে পড়ায় মনোযোগ দিতে। তার মন চলে যায় সিনেমার দিকে। তার পড়াশোনা ভালোলাগে না।
 
১৫ বছর পরের ঘটনা। খোকন পড়াশোনা শেষ করে এখন একটি অফিসের বড় অফিসার। কাজল কলেজের শিক্ষক। আর বাবু এসএসসি পাশ করতে না পারাতে ভাল চাকুরিও পায়নি। সে একটি প্রতিষ্ঠানে দারোয়ানের চাকুরি পায়।

একদিন খোকন মিটিং এর জন্য বাবু যে অফিসে কাজ করে সেখানে যায়। গাড়ি থেকে নামতেই বাবু এসে দরজা খোলে দেয়। সালাম দেয়। খোকন অবাক হয় বন্ধুকে দেখে। মনে মনে কষ্টও পায়। বাবুও অবাক হয় এবং পায় লজ্জা।

খোকনের সাহেবী পোশাক দেখে নিজেকে কত ছোট মনে হয়। বলে, কেন যে স্কুলে ক্লাশ ফাঁকি দিয়েছিলাম? এখন মনে হচ্ছে নিজেকে নিজেই ফাঁকি দিয়েছি।

খোকন বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে কেমন আছিস? কুশল বিনিময় করে সে চলে যায় তার মিটিং এর উদ্দেশে। খোকন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ভাবে স্কুলের দিনগুলোর কথা। তারা তিনজন এক সাথে সব কিছু করেছে। কিন্তু এখন তিন জন তিনদিকে। শুধু সে নিজেই পিছিয়ে রইলো। এর জন্য দাযী আমি নিজেই।

পড়াশোনার প্রতি অবহেলা করা মানে নিজের প্রতি অবহেলা। আর তাই এখন ছোট চাকুরিতে আর্থিক কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।