ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ভালো থেকো ফুল কুড়ানি | সানজিদা সামরিন

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
ভালো থেকো ফুল কুড়ানি | সানজিদা সামরিন

সেদিন ছিল কুহুর জন্মদিন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাড়ির বাগানে চলে এলো সে। বাগানে পেয়ারা গাছের পাশেই বড় একটা শিউলি ফুলগাছ রয়েছে। শিউলিগাছের নিচটা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে। আশপাশের বাড়ির অনেক শিশুরাই আসে ফুল কুড়াতে। কুহুও মাঝে মাঝে ফুল কুড়ায়, মালা গাঁথে যখন তার ইচ্ছে হয়।

আজ তার জন্মদিন। এবার সে সাত পেরিয়ে আটে পা দেবে।

সন্ধ্যায় কেট কাটা হবে, সব বন্ধুরা আসবে। কত্ত মজা হবে! কিছুক্ষণ পর কুহু দেখলো কাজের আন্টি সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকছে। তার সঙ্গে ছোট্ট একটি মেয়ে, বয়সটা কুহুর মতোই হবে। কাজের আন্টি কাছে এসে সঙ্গে আসা মেয়েটিকে দেখিয়ে বললো, মামনি ও ফুল কুড়াতে আসছে। আমার বাড়ির পাশেই থাকে। কুহু মাথা নেড়ে বললো- আচ্ছা। কাজের আন্টির সঙ্গের মেয়েটিকে বললো, যাতে ফুল কুড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি চলে যায়। কাজের আন্টি ঘরে চলে গেলে কুহু মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো- কী নাম তোমার?

মেয়েটি হাঁটু ভাঁজ করে বসে ফুল কুড়াচ্ছিল। মুখ তুলে বললো- পিংকি। উত্তর দিয়েই সে ফের ব্যস্ত হয়ে পড়লো ফুল তুলতে। নীল রঙের হাতাকাটা একটা ফ্রক পরেছে সে। ফ্রকের এক কোণা তুলে তার ভেতরেই ফুল রাখতে লাগলো।  

কুহু হেসে বললো- আজকে আমার জন্মদিন। সন্ধ্যায় কেক কাটা হবে। তুমিও এসো কেমন?
পিংকি ফুল তুলে এবার দাঁড়ালো। হেসে বললো- শুভ জন্মদিন। কয়টায় আসবো?
-সাতটায় মনে হয় সবাই পৌঁছে যাবে। তুমিও চলে এসো এরমধ্যে।
পিংকি হেসে বললো- আচ্ছা।

...সন্ধ্যার মধ্যেই সব বন্ধুরা চলে এসেছে। মা টেবিল সাজাচ্ছে। একটু পরই কেক কাটা হবে। তবে কুহু এদিক-ওদিক পাঁয়চারি করছে। তার ভয় লাগছে। কারণ সে যে ফুল কুড়াতে আসা মেয়েটিকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসতে বলেছে তা মা জানে না। জানলে কী বলবে কে জানে! বকবে কিনা তাও বুঝতে পারছে না কুহু। এমন সময়ই কলিংবেল বাজলো। বাবা গিয়ে দরজা খুলে দিল। কুহু বাবার পাঞ্জাবির আড়াল থেকে দেখলো পিংকি দরজায় দাঁড়িয়ে।  

সাদা একটা জামা পরেছে যার হাঁটুর কাছে কালো বর্ডারের সেলাই খুলে খানিকটা ঝুলছে। হাতে র‌্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো একটা বাক্স। বাবা ফিরে তাকালো কুহুর দিকে। কুহু ইতস্তত করে বললো- বাবা ও পিংকি, আমার বন্ধু।  বাবা হেসে পিংকিকে ভেতরে আসতে বললেন। পিংকি সোফায় বললো কুহুর পাশে। সবাই পিংকিকে অদ্ভূতভাবে দেখছে। একরকম অস্বস্তি বা ভয়ে হচ্ছে কুহুরও। কিন্তু পিংকি স্বতঃস্ফূর্ত। হাত বাড়িয়ে উপহারটা কুহুর হাতে দিল সে।

....কুহু প্যাকেট খুলে দেখলো খুবই কমদামি প্লাস্টিকের একটি সবুজ গাড়ি। হেসে ধন্যবাদ দিল কুহু। এরপর কেক কাটার সময় হলো। সবাই কুহুকে উইশ করে গান গাইলো। কেক খেলো। পিংকির চোখে বিস্ময়। সে ভীষণ খুশি। যাওয়ার সময় কুহুকে জড়িয়ে ধরলো সে। বললো, আবার দেখা হবে। সেদিন রাতে সবাই চলে যাওয়ার পর মা কুহুকে ডাললেন, বললেন- এই মেয়েটা ফুল কুড়াতে এসেছিল না সকালে? ওকে অনুষ্ঠানে আসতে বলেছ কেন? সবাই কী ভেবেছে বলো?

কুহু মাথা নিচু করে বললো- জানি না মা। আমার ইচ্ছে হয়েছিল ওকে আসতে বলি। তাই।  
বাবা বললেন, ঠিক আছে মামনি, সমস্যা নেই। কিন্তু অপরিচিত কাউকে বাড়িতে আসার আগে মাকে বা আমাকে জানিও।

এর কিছুদিন পরই ছিল রোজার ঈদ। সকালবেলা হুট করে বাসায় হাজির পিংকি। সাদামাটা ঘিয়ে রঙের একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে সে। হাতভর্তি চুড়ি, টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়েছে। কানের পাশে চুলে তিনটে গোলাপও গুঁজেছে। একেবারে বড়দের মতো লাগছে ওকে। কুহু এবার ভয় পেল না। কারণ মা-বাবা তো ওকে চেনেই সেদিনের পর থেকে। তাছাড়া আজ ঈদের দিন নিশ্চয়ই মা রাগ হবেন না। কুহু-পিংকি কোলাকুলি করলো। পিংকির সামনে একবাটি লাচ্ছা সেমাই আর পানির গ্লাস এনে রাখলেন মা। কিন্তু কোনো কথাই বললেন না। পিংকি সেমাই খেতে খেতে বললো- জানো অনেক টাকা সেলামি পেয়েছি। হাতের ছোট্ট ব্যাগের চেন খুলে দেখালো সে কুহুকে। কুহু বললো- বাহ্! আচ্ছা শোনো বিকেলে আমি বাবার সঙ্গে শিশুপার্কে যাবো। তুমিও এসো কেমন!

পিংকির চোখ আনন্দে জ্বলে উঠলো। সে খুশি হয়ে বললো- আচ্ছা! 

কথা শেষে পিংকি চলে গেলো। কুহু আর বাবা দুপুরে খেয়েদেয়ে তৈরি হলো শিশুপার্কে যাবে বলে। এমন সময় কলিংবেল টিপলো পিংকি। এবার মা দরজা খুললেন। পিংকিকে দ্বিতীয়বারের মতো দেখে বললেন, কী ব্যাপার কিছু লাগবে? পিংকি উত্তর দিলো- না খালা, কুহুর সঙ্গে শিশুপার্ক যাবো। মা পিংকিকে কিছুই বললেন না, শুধু পেছন ফিরে কড়াচোখে তাকালেন কুহুর দিকে। কুহুকে বললেন, কুহু আমার ঘরে এসো। কুহু পিংকিকে ড্রইংরুমে বসতে বলে মার ঘরে গেল।  

মা বললেন, এসব কী শুরু করেছ কুহু। তুমি ওকে আর ওর বাবা মাকে ভালো করে চেনো যে বারবার বাড়িতে আসতে বলছো? এখন নাকি শিশুপার্কেও যাবে তোমার সঙ্গে? কুহু মাথা নিচু করে বললো, মা ও তো ভালো মেয়ে, নিয়ে গেলে কী হবে? মা কড়াভাবে বারণ করলেন। বললেন, কুহু যেন এক্ষুণি পিংকিকে চলে যেতে বলে। একথা শুনে কুহুর কান্না পেয়ে গেল। ঈদের দিন এভাবে সে কী করে বলবে ওকে চলে যেতে। যাই হোক, কুহু অনেক কষ্টে পিংকিকে বললো-তুমি বাড়ি ফিরে যাও। আমরা যাচ্ছি না। পিংকি চিন্তিত হয়ে বললো- বাসায় তো কেউ নেই। মা আমার বড় বোনের বাসায় গেছে দরজায় তালা দিয়ে। আমি এখানে আসবো তো তাই।  

কুহু বললো- প্লিজ আজ না, আরেকদিন। এখন যাও। পিংকির মুখ অন্ধকার মেঘে ছেয়ে গেল। সে বললো, আচ্ছা। সে চলে গেল। এরপর আর কখনোই এলো না কুহুদের বাড়ি। এরমধ্যে পিংকিরা ঠিকানাও পাল্টে ফেলেছে। একবার কাজের আন্টির খোঁজে বাবার সঙ্গে কুহু গিয়েছিল পিংকিদের বাসায় সেও। কিন্তু সেখানে গিয়েও তার খোঁজ মেলেনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।