ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

মা হাতি ও মায়াবতী | সানজিদা সামরিন

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২০
মা হাতি ও মায়াবতী | সানজিদা সামরিন

একদিন সকালে খাবারের সন্ধানে বনের পথ ধরে হাঁটছিল সন্তানসম্ভবা এক হাতি। সারারাত কিছুই খায়নি সে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই পেটের ভেতর বসে থাকা ছানা হাতিটিরও ভীষণ খিদে পেয়েছে। কিন্তু আশপাশে তেমন কোনো খাবারই পেলো না মা হাতিটি।

জলাশয় থেকে একটুকানি জল পান করে সে হাঁটতে লাগলো গাঁয়ের পথে। সে গাঁয়ের লোকেরা ভীষণ ভালো।

বনে এরা কাঠ কাটতে আসে, নিতে আসে ওষুধি গাছ আর ফল। কিন্তু কখনোই বনের প্রাণীদের ক্ষতি করে না। মা হাতি ভাবলো নিশ্চয়ই ওখানে গিয়ে খাবার পাওয়া যাবে। হাঁটতে হাঁটতে একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো সে। মাটির দেয়াল তোলা সে বাড়ির বারান্দার একটা কোণায় অনেকগুলো আনারস রাখা। মা হাতিটির ভীষণ ইচ্ছে হলো খেতে।

মনে মনে বললো- ইস্ কেউ যদি আমায় দুয়েকটা আনারস খেতে দিতো কী ভালোই না হতো! সে প্রাণভরে পাকা আনারসের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। ঘ্রাণ পেয়ে পেটের ভেতর থেকে ছানা হাতিটি বলে উঠলো- বাহ্ কী সুন্দর গন্ধ মা! কীসের গন্ধ এটা? মা হাতিটি আস্তে করে বললো- এটা একটা ফল, নাম আনারস। ভীষণ মিষ্টি আর সুস্বাদু খেতে। ছানা হাতিটি নড়েচড়ে উঠলো। বললো- দাও না মা একটু খাই। রাত থেকে কিচ্ছু খাইনি। মা হাতিটির মনটা একটু খারাপ হলো। সে বললো-দেখছি বাছা, আরেকটু কষ্ট করো। একথা বলে মা হাতিটি উঠোনে একটা গাছের ছায়ায় বসলো।  

ভীষণ গরম পড়েছে। কাঠফাটা রোদ্দুর। এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে একগাদা থালাবাসন হাতে বাড়ির গিন্নি বেরিয়ে এলেন। দেখলেন গাছের নিচে একটা হাতি বসে। ভীষণ দুর্বল আর ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। গিন্নি থালাবাসন রেখে হাতির কাছে এসে গায়ে হাত বোলালো। সামনে একপাত্র পানি দিল।  

...হাতিটি বললো- আমায় কিছু খাবার দেবে? রাত থেকে কিচ্ছুই খাইনি। গিন্নি বললো- নিশ্চয়ই। তুমি বসো আমি এক্ষুণি নিয়ে আসছি। একথা বলে বারান্দা থেকে দুটো আনারস নিয়ে এলেন। মা হাতি ভীষণ খুশি হলো। সে পেটপুরে মিষ্টি আনারস খেলো। খেয়েদেয়ে শুঁড় তুলে গিন্নিকে প্রণাম জানিয়ে সে হাঁটতে লাগলো বনের পথে।  

এরপর যখনই মা হাতি কোনো খাবার পেতো না তখনই গাঁয়ে ফিরে আসতো। আর গায়ের লোকেরা তাকে কলা, কলাগাছ, ফলসহ নানান জিনিস খেতে দিতো। খেয়েদেয়ে সে ফিরে যেত বনে। সেও পারলে টুকটাক জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সাহায্য করলো গাঁয়ের মানুষদের।

এভাবেই চলছিল। হঠাৎ একদিন রাতেরবেলা মা হাতিটির ভীষণ শরীর খারাপ করলো। পেটে খুব চাপ বোধ করছিল সে। আশপাশে তার কোনো সঙ্গীও ছিল না। সে বুঝতে পেরেছিল সে সন্তান প্রসব করতে চলেছে। যন্ত্রণায় এদিক-ওদিক ছটফট করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। এমন সময়েই বনের ধার দিয়ে বাড়ি ফিরছিল সে গাঁয়েরই এক লোক। তিনি দেখলেন একটা হাতি ছটফট করছে। এদিক ওদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে আর জোরে জোরে চিৎকার করছে। লোকটি দৌড়ে গাঁয়ের কয়েকজন লোককে ডেকে নিয়ে এলেন। তারা এলেন মশাল হাতে। হাতিটিকে দেখেই তারা চিনলো যে এটিই সেই হাতি যে প্রায়ই গাঁয়ে আসে, তাদের সাহায্য করে। তারা বুঝলো এখন হাতিটির সন্তান প্রসবের সময়।

তার সাহায্য প্রয়োজন। খবর পেয়ে ধীরে ধীরে গাঁয়ের বৌয়েরাও এলো সাহায্যের উপকরণ নিয়ে। সবার সহায়তায় জন্ম নিল ছোট্ট ছানা হাতিটি। ততক্ষণে আকারে ভোরের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। মা হাতিটি ক্লান্ত চোখে কৃতজ্ঞতা জানালো সবাইকে। তার চোখে প্রশান্তির জল গড়িয়ে পড়লো। গিন্নিরা ব্যস্ত হয়ে পড়লো ছানা হাতিটির পরিচর্যায়। ছানা হাতিটির মায়াবি চেহারা দেখে গিন্নিরা প্রত্যেকেই তাকে জড়িয়ে নিলো পরম মমতায়। তারা ওর নাম দিল মায়াবতী।  

এরপর থেকে মায়ের সঙ্গে মায়াবতীও মাঝে মধ্যে গাঁয়ে আসতো। তাকে নিয়ে খেলায় মাততো গাঁয়ের ছোট্ট শিশুরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।