ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

উত্তর আমেরিকান রূপকথা: পর্বত জয়

অনুবাদ: রানাকুমার সিংহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
উত্তর আমেরিকান রূপকথা: পর্বত জয়

উত্তর আমেরিকান দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো মরুভূমিতে কাহিল্লান ভারতীয় আদিবাসীরা বাস করে। তাদের ঠিক উত্তরে, দূরে পর্বতের খুব উঁচু পরিসীমা ছিল যাকে এখন সান বার্নার্ডিনো পর্বতমালা বলে।

এই পর্বতে আরোহণ করতে সক্ষম হওয়া একটি দুর্দান্ত ও গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচিত হতো। গ্রামের সমস্ত অল্পবয়স্ক ছেলেদের বয়স যখন যথেষ্ট হতো তখন তারা পর্বত জয় করার অপেক্ষায় থাকতো।

এক রাতে বছরের শেষ মৌসুমে গ্রামপ্রধান সব ছেলেদের ডেকে বললেন; এখন ছেলেরা, তোমরা এই চ্যালেঞ্জটি মেনে নেওয়ার উপযুক্ত বয়সে রয়েছো। তোমরা আগামীকাল থেকে পর্বত জয়ের চেষ্টা করতে পারো। আমার আশীর্বাদ নিয়ে এই পর্বতটিতে আরোহণ করো। প্রাতঃরাশের ঠিক পরেই যাত্রা শুরু করো এবং তোমরা প্রত্যেকেই যতটা সম্ভব পার হয়ে যাবে এবং ক্লান্ত হয়ে গেলে ফিরে এসো।

ছেলেরা এ কথা শুনে এত উত্তেজিত ছিল যে তারা রাতে খুব কমই ঘুমাতে পারলো।

পরের দিন সকালে তারা সবাই চলে গেলো। আশা ও স্বপ্নে পরিপূর্ণ সবাই। প্রত্যেকের অনুভূতি এক, যে সে অবশ্যই শীর্ষে পৌঁছে যেতে পারবে।

শিগগিরই মোটা-গাট্টা একটি ছেলে ধীরে ধীরে ফিরে আসে ঘামে জবুথবু হয়ে। সে যখন তার প্রধানের সামনে দাঁড়ালো, তখন তিনি দেখলেন, ছেলেটা এক টুকরো সবুজ বিভারটেল ক্যাকটাস ধরে রেখেছে। অবিশ্বাসে মুচকি হেসে বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছাতে পারোনি। বাস্তবে তুমি প্রান্তর পেরিয়ে এমনকী আরোহণ শুরুও করোনি।

এক ঘণ্টা কেটে গেলো। তারপর আর একটি ছেলে ব্ল্যাক সেজব্রাশ নিয়ে এলো। চিফ বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছেছো, তবে তুমি আরোহণ শুরু করোনি।

আর এক ঘণ্টা কেটে গেলো এবং তৃতীয় ছেলেটি ফিরে এলো। সে একটি তরুণ কটনউড চারা ধরেছিল। চিফ বললেন, ভালো কাজ, তুমি ঝরনা পর্যন্ত উঠেছিলে! খুব ভালো!

এরপর কিছুটা দীর্ঘ অপেক্ষা। একটি বালক এলো কিছু বাকথর্নের অংশ নিয়ে। চিফ তা দেখে মুচকি হেসে বললেন, তুমি আসলে আরোহণ করছিলে! আমি দেখতে পাচ্ছি এখন পর্যন্ত তুমিই প্রথম রক-স্লাইডে এসেছিলে। তুমি কঠোর পরিশ্রমী ছেলে। পরে বিকেলে, একটি ছেলে ধূপ সিডার ফ্রন্ড নিয়ে এলো। ‘ভাল হয়েছে আমার ছেলে, চিফ বললেন। ‘তুমি পর্বতের অর্ধেক জয় করেছো! তুমি পাহাড়ের হৃদয়টি দেখেছো। খুব ভালো কাজ। ’

তার এক ঘণ্টা পরে পন্ডেরোসা পাইনের একটি শাখা নিয়ে একজন এলো এবং চিফ বললেন, ভালো কাজ, তুমি তৃতীয় লাইফ জোনে গিয়েছিলে। দেখে মনে হচ্ছে তুমি তিন চতুর্থাংশ জয় করেছো। চেষ্টা করো, পরের বছর তুমি নিঃসন্দেহে শীর্ষে পৌঁছে যাবে!

আলো কমে আসছিল। চিফ কিছুটা চিন্তায় পড়লেন। পর্বতমালাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য অনেক সমস্যা ছিল এবং তার শেষ ছেলেটি তখনও শিবিরের বাইরে ছিল। গ্রিজলি ভালুক কি তাকে আক্রমণ করতে পারে? বা হতে পারে সে কোথাও লম্বা একটা পাথর থেকে পড়ে গেছে। হয়তো সে পথ হারিয়ে ফেলেছিল, বা জলের বাইরে চলে গেছে।

ঠিক যখন ছেলেটির সন্ধানের জন্য চিফ একটি অনুসন্ধান দল পাঠাতে যাচ্ছিলেন তখনই ছেলেটি ফিরে এলো। ছেলেটি মহৎ চরিত্রের লম্বা ও জমকালো ছিল। সে চিফের কাছে গিয়ে হাত বাড়ালো। হাত দুটো  খালি ছিল, তবে তার মুখটি আনন্দের সঙ্গে জ্বলজ্বল করছিল। ছেলেটি বললো, চিফ, আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে কোনো গাছ ছিল না। আমি কোনো ডালপালা, কোনো জীবন্ত জিনিস দেখিনি। চূড়ায় উঠে আমি সমুদ্রে ঝলমলে রোদের দৃশ্য দেখলাম।

চিফের মুখটাও এখন জ্বলজ্বল করতে লাগলো! তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং প্রায় বাদ্যযন্ত্রের সুরে জোরে বললেন, আমি এটি জানতাম! আমি যখন তোমার মুখের দিকে তাকালাম তখনই আমি এটি বুঝলাম তুমি সমস্ত দিক থেকে শীর্ষে! এটি তোমার চোখে লেখা আছে! এটি তোমার কণ্ঠে বাজে! আমার পুত্র, টোকেনের জন্য তোমার কোনো ডালপালা লাগবে না। তুমি পর্বতের গৌরব দেখেছো বলে টোকেনের প্রয়োজন অনুভব করোনি! 

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২০
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।