ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

খুলনার ২০৪ বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১২
খুলনার ২০৪ বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল

খুলনা: ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার। দিনটি গুটুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল একটু অন্যরকম।

কারণ এদিন শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় ভোট উৎসবে।

আর এই উৎসবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নির্বাচন কমিশনার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। সব মিলিয়ে শিশু বয়সেই তারা পরিপূর্ণ নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে বেজায় খুশি।

নির্বাচনের দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সারিবদ্ধ হয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছে।   স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তীর্থ ফৌজদারকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করেন। পরে তীর্থ ফৌজদার শিক্ষকদের সহায়তা ও পরামর্শে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে মনোনীত করেন ৫ম শ্রেণীর আরেক ছাত্র রাশিদুল ইসলামকে। একই সঙ্গে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে কল্লোল মণ্ডলকে মনোনীত করা হয়। পোলিং অফিসার ছিলেন গৌতম মণ্ডল ও কাজী আরাফাত হোসেন।

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মিসেস জয় শ্রী ইচ্ছেঘুড়িকে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি পরিপূর্ণ নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মধ্যে বেশ সাড়া জেগেছে।

তিনি আরও জানান, স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর তোজাউন্নেছাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পানিসম্পদ বিষয়ে, পুস্তক লিখন সামগ্রী বিষয়ে দায়িত্ব পেয়েছে ৪র্থ শ্রেণীর সোমা মণ্ডল, স্কুলের পরিবেশ ও বন বিষয়ে দায়িত্ব পেয়েছে ৫ম শ্রেণীর শেখ মোঃ মেহেদী হাসান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি বিষয়ে দায়িত্ব পেয়েছে ৩য় শ্রেণীর ছাত্র গাজী হাদিউজ্জামান, ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী রুমা পারভীন পেয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক দপ্তর, বৃক্ষরোপন ও বাগান তৈরি বিষয়ে দায়িত্ব পেয়েছে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সৌমিত্র মণ্ডল এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন বিষয়ক দায়িত্ব পেয়েছে ৩য় শ্রেণীর ছাত্র সুমিত মণ্ডল। শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পানিসম্পদ বিষয়ে দায়িত্ব পাওয়া ৪র্থ শ্রেণীর তোজাউন্নেছা ইচ্ছেঘুড়িকে জানায়, বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা যাতে বিশুদ্ধ পানি পেতে পারে সে বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুস্তক লিখন সামগ্রী বিষয়ে দায়িত্ব পাওয়া ৪র্থ শ্রেণীর সোমা মণ্ডল জানায়, সরকার থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে নতুন বই দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে এই বইয়ের সুষ্ঠু যত্ন নেয় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
স্বাস্থ্য বিষয়ক দপ্তর পাওয়া ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী রুমা পারভীন জানায়, শিশুরা নিজেদের শরীরের যত্ম নিতে পারে না। অভিভাবকদের এ বিষয়ে বেশি সচেতন হতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে হাত পায়ের নখ কাটা, পায়খানায় যাওয়ার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্কুলের পোশাকসহ সকল পোশাক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেতন করা হবে নিয়মিত।

নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ৫ম শ্রেণীর ছাত্র রাশিদুল ইসলাম জানান, শিশু বয়সে নির্বাচন পরিচালনা করতে পেরে আমি খুব খুশি। নির্বাচনের ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নাম লেখা ছিল। ভোটাররা তাদের পছন্দমতো প্রার্থীর নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।

নির্বাচন কমিশনার ৫ম শ্রেণীর ছাত্র তীর্থ ফৌজদার জানায়, গুটুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণীর মোট ১২৬ জন শিশু ভোটার  রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন ভোটার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে মনোনয়ন পত্র জমা দেন। তার মধ্যে ১২টি মনোনয়ন পত্র বৈধ বলে বিবেচিত হয়।   ১১৮ জন ভোটার ভোটারাধিকার প্রয়োগ করে। ১২টি ভোট বাতিল হয়।

অভিভাবক কাজী এমদাদুল হক জানান, আমরা যখন লেখাপড়া করেছি তখন এমন উদ্যোগ ছিল না। শিশু বয়সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া। ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি মনোনীত করার এই পদ্ধতি প্রশংসনীয়। স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজেরা ভোট দিয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করেছে। এতে তাদের মাঝে গণতান্ত্রিক মনোভাব শিশু বয়স থেকেই গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।

খুলনা জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ ওহিদুল ইসলাম জানান, খুলনা জেলায় ২০৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচালনায় ও তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিশু ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে ৭ জন করে শিশু স্টুডেন্ট কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে। এই ৭ জনের মধ্যে একজন প্রধান কাউন্সিলর ও ৬ জন কাউন্সিলর রয়েছে। এসব কাউন্সিলরা স্কুলের পরিবেশ, পুস্তক লিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি, বৃক্ষরোপন ও বাগান তৈরি, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নসহ  স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখাশোনা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক সমাদ্দার জানান, সর্বস্তরের গণতন্ত্রচর্চার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে শিশুদের ভোটের প্রতি আগ্রহী করতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে শিশু প্রার্থীরা কেউই পোস্টার বা লিফলেট না ছাপিয়ে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।