ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জাহাঙ্গীরের বিষয়ে ৬ মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
জাহাঙ্গীরের বিষয়ে ৬ মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করতে নির্দেশ

ঢাকা: গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে থাকাকালে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।

জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারোয়ার হোসেন।

পরে আমিন উদ্দিন মানিক জানান, ছয় মাসের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে চলমান অনুসন্ধান শেষ করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রিটটি নিষ্পত্তি করে বলেছেন- এ বিষয়ে প্রতিবেদন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দিতে।

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘গ্রাফ্ট ইজ হিজ মিডল নেইম’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পশ্চিম ভিরুলিয়া সরকার বাড়ির ওসমান গণি সরকারের ছেলে মো. আব্দুর রহিম সরকার হাইকোর্টে এ রিট করেন।

রিটে জাহাঙ্গীর আলম মেয়র থাকাকালীন আসা দুর্নীতির অভিযোগ দুদক আইনে বেধে দেওয়া সময়ে অনুসন্ধান শুরু বা শেষ করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং অবিলম্বে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন ও আইন অনুসারে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।

পাশাপাশি তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশনাও চাওয়া হয়।

রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার সচিব, অতিরিক্ত সচিব মোস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, বিএফআইউ, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও জাহাঙ্গীর আলমকে বিবাদী করা হয়।  

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ও তার অনুসারীরা কিছুই ছাড়েননি। এমনকি জাতীয় শোক দিবসে দুস্থদের খাওয়ানোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও তারা নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) প্রতিটি ক্ষেত্র ছুঁয়েছে তাদের দুর্নীতির হাত। অনুদান বিতরণ, বালু ভরাট, সড়ক প্রশস্তকরণ- এমনকি নালা-নর্দমা পরিষ্কার থেকে বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের জন্য দেওয়া খাবারের মতো ছোট আকারের কর্মকাণ্ডেও ভাগ বসিয়েছেন জিসিসির বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার অনুসারীরা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও এর বাইরে ছিল না।

জিসিসির অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এমন অজস্র অভিযোগের বিশদ বিবরণ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গঠিত একটি তদন্ত কমিটির তৈরি এ প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন দুর্নীতি-অপকর্মের তথ্যসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশন গত ৩ অর্থবছরে (২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২০২১) আটটি এলাকায় বর্জ্য অপসারণে ব্যয় করেছে ১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অথচ সেসব এলাকার কোনো আবর্জনা পরিষ্কার না করেই এর বিল পরিশোধ করা হয়েছে। জিসিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে যে কীভাবে জাহাঙ্গীরের তত্ত্বাবধানে সব আইন উপেক্ষা করে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছিল।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল তাকে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়। এরপর তার দুর্নীতি ও অপকর্মের বিষয়গুলো আবারও সামনে আসে।

২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হলে জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ভিডিওতে তাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করতে এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

দল থেকে বহিষ্কারের সাত দিন পর ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সে সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ভূমি দখল, ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগকে জাহাঙ্গীরের স্থগিতাদেশের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে।

পরে মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এদিকে দলের পক্ষ থেকে সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার পর জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছেন। দলের ভেতরকার সূত্রগুলো বলছে, তারা এখন জাহাঙ্গীরের মেয়র পদ পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন।

তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপরেই নির্ভর করছে এ সিদ্ধান্ত।

গত সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রী বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা তা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। '

এ ব্যাপারে কথা বলতে ডেইলি স্টার তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তদন্ত কমিটির সদস্য মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, কমিটি এখনও মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়নি।  

তিনি বলেন, ‘আমরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। এখন আমরা সেই নথিগুলো বিশ্লেষণ করছি। আমরা শিগগিরই প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ করব। ’

এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে বলে ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।