ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই: খোকন-কাজলের জামিন 

স্পেশল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে ব্যালট ছিনতাই: খোকন-কাজলের জামিন  খোকন ও কাজল

ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই, হামলা-ভাঙচুরের মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন বিএনপি সমর্থিত সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।

সোমবার (২০ মার্চ) বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দুই আইনজীবীসহ ১৩ জনকে আগাম জামিন দেন।

এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্ত থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পন্থীরা দ্বিমুখী অবস্থানে ছিল। প্রথমেই দু’পক্ষ দুটি নির্বাচন উপ-কমিটি ঘোষণা করে। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল ও সিনিয়রদের বৈঠকের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল চৌধুরীকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়। উভয় পক্ষ এ কমিটিকে মেনে নেয়। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন তার পদত্যাগের খবর আসায় সংকটের সৃষ্টি হয়। ফের দু’পক্ষ দুটি কমিটি গঠনের কথা জানায়।

আওয়ামীপন্থীরা মো. মনিরুজ্জামানকে এবং বিএনপিপন্থীরা এ এস এম মোক্তার কবির খানকে আহ্বায়ক করেন। ভোটের আগের দিন রাতে মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ আইনজীবীরা ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে দেন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের  প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোল, হাতাহাতিতে ভোট শুরু হয় দুপুর পৌনে ১২টায়। প্রথম দিনে দুই হাজার ২১৭টি ভোট পড়ে। বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দেননি।

তবে বুধবার সকাল ১০টায় ভোটগ্রহণের সময় বিএনপি সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন। নতুন করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তারা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এরপর আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থীরাও ভোটকেন্দ্রে ঢুকলে শুরু হয় হট্টগোল, এক পর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি। এ সময় শতাধিক পুলিশ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে লাঠিপেটা শুরু করে। কেন্দ্রের বাইরেও আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

এ সময় পুলিশের লাঠিপেটার সময় ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা সাংবাদিকদের ওপরও চড়াও হয় পুলিশ। সাংবাদিকদের এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা শুরু করে তারা। এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন।

ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ল' রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঞার নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি লিখিত অভিযোগ নিয়ে যেতে বলেন, সে অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। লিখিত অভিযোগের পর প্রধান বিচারপতি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এলআরএফ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ভোটগ্রহণের মধ্যে বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের সামনে নির্বাচন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সেখান থেকে মিছিল করে এসে নির্বাচনী প্যান্ডেল, আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বিকেল প্রায় সোয়া ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে শুরু হয়ে তা ৫টা পর্যন্ত চলে।   এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপিপন্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় তিনটি মামলা হয়।

বিএনপিপন্থীদের দাবি সাধারণ আইনজীবীদের ডেকে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে ভোটগ্রহণ করতে হবে। তা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বৃহস্পতিবার সকাল দশটার পর থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে শেষ দিনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিএনপিপন্থীরা ভোটে না গিয়ে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন। এরপর প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডাকেন।

আলাদাভাবে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, বারের দু’জন সাবেক সম্পাদক গিয়েছিলেন কথা বলতে। যারা বর্তমানে সভপতি ও সম্পাদক প্রার্থী। প্রধান বিচারপতি বলেছেন- আমি তাদের বলেছি যেহেতু এটা বারের বিষয়, আমাদের করণীয় নাই। প্রধান বিচারপতির এখানে করার কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র যারা আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ করে সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে করেন। পরিবেশ সবাই মিলে ঠিক রাখার চেষ্ট করেন। এটা প্রাইভেট সংগঠন। বার অ্যাসোসিয়েশনের বিষয় প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই। এদিনও দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।

দু’দিন ব্যাপী নির্বাচনে ভোটার ছিল ৮ হাজার ৬০২ জন। ভোট পড়েছে ৪ হাজার ১৩৭টি।

সমিতির দক্ষিণ হলে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির তিন হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে সভাপতি এবং মো. আবদুন নূর দুলাল তিন হাজার ৭৪১ ভোট পেয়ে সম্পাদক পদে পুর্ননির্বাচিত হন।

সহ-সভাপতির দুটি পদে মো. আলী আজম ও জেসমিন সুলতানা, কোষাধ্যক্ষ পদে এম. মাসুদ আলম চৌধুরী, দুটি সহ-সম্পাদক পদে এ বি এম নূর-এ-আলম উজ্জ্বল ও মোহাম্মদ হারুন-উর রশিদ জয়ী হয়েছেন।

সাতটি সদস্য পদে জয়ীরা হচ্ছেন- মহিউদ্দিন আহমেদ (রুদ্র), মনিরুজ্জামান রানা, শফিক রায়হান শাওন, মো. সাফায়েত হোসেন (সজীব), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. নাজমুল হুদা ও সুভাষ চন্দ্র দাস।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩ 
ইএস/জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।