ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশ কর আরোপের রিট নিষ্পত্তির নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৩
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ শতাংশ কর আরোপের রিট নিষ্পত্তির নির্দেশ

ঢাকা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা ১৩টি রিট হাইকোর্ট বিভাগে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।

এ সংক্রান্ত আগের আদেশের অংশ বিশেষ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির বেঞ্চ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। আর রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ওমর সাদাত ও মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।

এ আদেশের পর কর আদায় নিয়ে দুই ধরনের মত দিয়েছে দুই পক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, বেসরকারি বিশ্বিবিদ্যালয়গুলোকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে। আর রিটকারী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টে রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দিতে হবে না।

২০০৭ সালের ২৮ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অপরাপর বিশ্ববিদ্যালয় যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাদের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পুনঃনির্ধারণ করা হলো। ১ জুলাই থেকে এটা কার্যকর হবে। ’

২০১০ সালের ১ জুলাই এনবিআরের আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ ও উদ্ভূত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। ’

এরপর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৪৬টি রিট করা হয়েছিল।

পৃথক ৪৬টি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আর ওই দুই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ হারে রিট আবেদনকারী যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর বাবদ অর্থ আদায় করেছে, তা ফেরত দিতে সরকার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে অর্থ ফেরতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন। তবে এ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ১৫ শতাংশ আয়কর নেওয়া থেকে এনবিআরকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে ২০২১ সালের ৩০ জুন অর্থ আইনের তফসিলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যুক্ত করে গেজেট জারি করে সরকার। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ফের ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ হয়। ২০২১ সালের এ গেজেট চ্যালেঞ্জ করে বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টে ১৩টি রিট করে। হাইকোর্ট সেসব রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রুলসহ আদেশ দেন। রুলে গেজেটটি কেন অসাংবিধানিক, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে গেজেটটি ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের আদেশর লঙ্ঘন উল্লেখ করে এর কার্যকারিতা স্থগিত করেন।

হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আদেশে আপিল বলেন, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের আদেশের সঙ্গে হাইকোর্টের ১৩ রিট ও আদেশের কোনো আদেশের কোনো যোগসূত্র নেই। তাই আপিল বিভাগের আগের আদেশের (২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি) `নজির বা উদাহরণ’ না টেনে এই রিট (১৩টি রিট) আবেদন নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হলো। এই `নজির বা উদাহরণ না টানার’ আদেশ পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদনে করলে বৃহস্পতিবার সেসব আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ।

এ আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ২০২১ সালের ৩০ জুন অর্থ আইনের একটি গেজেট জারি করা হয়। যেখানে কর আরোপ করা হয়। ২০২১ সালের আইনের বিরুদ্ধে নতুন করে হাইকোর্টে রিট করে বিশ্ববিদ্যালয়। তখন হাইকোর্ট বিভাগ আদেশ দেন যে, আপিল বিভাগে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আয়কর আদায় করা যাবে না। হাইকোর্ট বিভাগের ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে যায়। তখন আপিল বিভাগ বললো—এইটার (২০২১ সালের রিটের) সাথে ওইটার (২০২১ সালের রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের) সম্পর্ক নেই। এটা স্বতন্ত্রভাবে হাইকোর্ট বিভাগ শুনবে। আপিল বিভাগের এই আদেশের বিরুদ্ধে ওনারা রিভিউতে আসলেন। আমরা শুনানিতে বললাম—আপিল বিভাগে পেন্ডিং থাকাটার সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ২০২১ সালে নতুন আইনে করা হয়েছে। এটা আলাদা। আপিল বিভাগ রিভিউ খারিজ করে দেওয়ায় এখন হাইকোর্ট বিভাগে রিটগুলো শুনানির পথ সুগম হলো। এখন নতন আইন অনুসারে আয়কর দিতে হবে।

তবে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ওমর সাদাত জানান, ২০২১ সালের ৩০ জুন ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপের কার্যকারিতা ওই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর স্থগিত করেন হাইকোর্ট। সে স্থগিতাদেশের ওপর চেম্বার আদালত বা আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ নেই। আজকেও কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।