ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা জসিম হত্যায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা জসিম হত্যায় ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান জসিম হত্যা মামলায় আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২৯ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনা ফারহিন এ রায় দেন।

রায় শুনে আসামি ও তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, এ মামলায় ১২ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। তাই তাদের বাদ দিয়ে বাকি আট আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলেন আদালত।  

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মোবারক উল্যা (৬৬), আলী হোসেন বাচ্চু (৫০), হিজবুর রহমান স্বপন (৪৫), কবির হোসেন রিপন (৩০), একই বাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে মো. খোকন (৫০), মো. মোস্তফা (৭০), আবুল হোসেন (৫০) ও করইতোলা গ্রামের বাগবাড়ির জাফর আহম্মদ (৫৫)।  তাদের মধ্যে হিজবুর রহমান স্বপন পলাতক। বাকি সবাই রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।  

ভিকটিম জসিম চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে।  

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, শ্রীরামপুর গ্রামের বাগবাড়ির মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর জের ধরে মোবারকরা ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এরপর থেকে মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য মফিজ উল্যাকে হুমকি দিচ্ছিল প্রতিপক্ষ। তা না করলে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন।  

এদিকে প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সেই সময়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে মেহেদী হাসান জসিমের নাম বাদ দেওয়ায় মোবারকরা চরম ক্ষিপ্ত হন। এর মধ্যে জসিম সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে ছুটিতে বাড়িতে ফিরলে মোবারকরা তাদের হুমকি দেন। এরপর জসিম বাড়িতে না থেকে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে আত্মীয় গোলাম মাওলার বাড়িতে আত্মগোপনে যান।  

২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে জসিমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওই সময় প্রতিপক্ষের লোকজন জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢুকে জসিমের বুকে গুলি করেন। এতে বাধা দিতে গিলে তারা অন্যদেরও মারধর করেন এবং গুলি করার হুমকি পালিয়ে যান। পরে জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন জসিমের বাবা মফিজ উল্যা বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার সে সময়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু নাছের ১২ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরে আবার মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। লক্ষ্মীপুর জেলা সিআইডি পুলিশের সেই সময়ের এসআই আফসার আহমেদ ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর আবার আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেন। এতে ওই ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।  

এর মধ্যে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা গেছেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সোমবার এ রায় দেন আদালত।

মামলার বাদী মফিজ উল্যা বলেন, আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতদের ফাঁসির রায় হয়েছে। রায়ে আমি সন্তুষ্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।