ঢাকা, শনিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আন্দোলন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
আন্দোলন নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রেক্ষাপটে বর্তমান পরিস্থিতিতে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই পক্ষ। বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এ দুই সংবাদ সম্মেলন হয়।

প্রথমে সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি সমর্থক চারজনের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক সরকার সমর্থক ১০ জনের উপস্থিতিতে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মোট কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ জন সদস্যের মধ্যে গত নির্বাচনে ১০টি পদ পেয়েছিল সরকার সমর্থকরা। আর বাকি চারটি পায় বিএনপি সমর্থকরা।    

সংবাদ সম্মেলনে শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, গত ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের দেশবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের সময় সাধারণ ছাত্রদের ওপর ভর করে বিএনপি-জামায়াত-শিবির সারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করে। বর্তমানে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী বিএনপি-জামায়াত দেশ ও জনগণের জানমালের ক্ষতি করে বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে তৎপর।  

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে সরকার আন্তরিকভাবে দাঁড়িয়েছে এবং ছাত্রদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যেন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়, সে জন্য সরকার ও বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ।

‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি বাংলাদেশের জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, আইনশৃঙ্খলা ও জনজীবন রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। তাই স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। ’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, মেট্রোরেল, সেতুভবন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা ও নরসিংদী কারাগারে কারা হামলা চালিয়েছে, তাদের এখনো কেন চিহ্নিত করা যায়নি? এসবের কোনো ভিডিও ফুটেজ সরকার প্রকাশ করছে না কেন? 

তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে, তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন তা প্রতিরোধ করতে পারেনি, কেন সরকারি ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি, সে প্রশ্নের উত্তর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, সরকার এরইমধ্যে কয়েক লাখ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, প্রায় ১৩ হাজার ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ছাত্রদের গ্রেপ্তার করছে। এ আন্দোলনকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।  

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিচারপতি আবদুল মতিন ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের নেতৃত্বে গঠিত গণতদন্ত কমিশনকে আমরা সর্মথন জানাচ্ছি এবং এ কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য আইনজীবীসহ দেশের সব নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।  

তিনি বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে কোটা আন্দোলনে প্রতিটি হত্যাকাণ্ড ও আহতদের ব্যাপারে তদন্তের দাবী জানাচ্ছি এবং আমরা মনে করি যে, এই আন্দোলনে শতশত মানুষকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও বেকার যুবক এবং শিশুদের আহত করা হয়েছে এবং সরকার একই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রেখেছে।

এই সকল গণহত্যা ও গুলি করার নির্দেশ দাতা মন্ত্রীরা, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ জড়িত সকল ব্যক্তিদের বিচার করার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ দমন আইন সংশোধন করে মানবতাবিরোধী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করার জোর দাবী জানাচ্ছি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহবুব উদ্দিন খোকন আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনে নিহতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ, আহত ও কারাবন্দি মিথ্যা মামলায় জড়িতদেরকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আমাদের আইনজীবীরা প্রস্তুত এবং সারাদেশের আইনজীবীদের তাদের আইনগত সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করছি।

‘দ্রুত কারফিউ প্রত্যাহার ও সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবিসহ সব বিশেষ বাহিনী প্রত্যাহার, ইন্টারনেট পুরোপুরি চালু করা, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। গ্রেপ্তার আইনজীবী ও বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তি দাবি করছি। অবিলম্বে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি করছি। লাখো জীবনের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশে রক্তের হোলি খেলা বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
ইএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।