ঢাকা, শনিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

গুলি না চালানোর রিট খারিজ, আদেশে যা বলেছেন হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২৪
গুলি না চালানোর রিট খারিজ, আদেশে যা বলেছেন হাইকোর্ট

ঢাকা: শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। তবে সহিংস মিছিল-সমাবেশের ক্ষেত্রে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি ও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গলের বিধি অনুসরণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি (লাইভ রাউন্ড) না চালাতে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কথিত আটক’ ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রোববার (৪ আগস্ট) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারা হোসেন, জেড আই খান পান্না ও অনীক আর হক।

আদালত বলেছেন, সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভা করার অধিকার রয়েছে। মানুষের জীবন সবচেয়ে দামি সম্পদ। মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যেখানে কঠিনভাবে প্রয়োজন কেবল সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফোর্স ব্যবহার করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে হবে এবং সবার মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার বৈষম্য করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনের বাধ্যবাধকতা মানতে হবে এবং ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বেআইনিতে (সহিংস, দাঙ্গা) পরিণত হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট আইন ও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ব্যবহার শুরু করবে। এ অবস্থায় পুলিশকে সংবিধানের ৩২,৩৩ (আই) (এম), ৩৬, ৩৭ ও ৩৮, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭-১৩২, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) এর ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৫৭ ও দণ্ডবিধির ৯৬-১০৬ পর্যন্ত অনুসরণ করতে হবে।

তবে কেউ যদি আইন অমান্য করে তখন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, ব্যবহার করতে পারে এবং পরে লাইভ রাউন্ড। কিন্তু যদি কোনো অমান্য না হয় বা কোনো দাঙ্গা না হয় তাহলে লাইভ রাউন্ড ব্যবহার করতে পারবে না।

উচ্চ আদালত আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এটা প্রয়োজনীয় যে, পুলিশ আইনের চারটি কর্নার (সংবিধান, পিআরবি, সিআরপিসি ও দণ্ডবিধি) অনুসারে দায়িত্ব পালন করবে এবং সংবিধানের জনগণের দেওয়া অধিকার অনুসারে। আর আবেদনের দ্বিতীয় অংশ (ছয় সমস্বয়কের মুক্তি) এখন অকার্যকর হয়েছে। তাই বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে না।  

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রিট করার একটা রুলস আছে। সেই রুলস ব্যত্যয়ের কারণে আমরা রিটটি খারিজ চেয়েছি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে পিটিশনটি সামারিলি খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ সরাসরি এটা খারিজ হয়ে গেছে। তবে আদালত কয়েকটি অবজারভেশন দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, আইন ও সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। আদালত বলেছেন, যদি কোনো সভা-সমাবেশ থেকে সহিংসতা-অরাজকতা হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ সিআরপিসি, পিআরবি অনুসারে অ্যাক্ট (কাজ) করতে পারবে। তবে সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। আইন অনুযায়ী করতে পারবে। আইন যেন মেনটেইন করে।  

তিনি বলেন, খুলনায় একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মেরেছে সেটা সম্পর্কে আবেদনে (রিট আবেদনে) কিছু ছিল না। একজন পুলিশকে যাত্রাবাড়ীতে ঝুলিয়ে মারা হয়েছে। একজন নাগরিককে উত্তরায় মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সেটা সম্পর্কে তাদের (রিট কারীদের) কোনো বক্তব্য ছিল না। আমরা বলছি যে কথা বললে সবার জন্য বলতে হবে। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওনাদের (আবেদনকারীদের) রাজনৈতিক বিবৃতি দেখেছি। সেটা আমরা আদালতে দেব না? ওনাদের উদ্দেশে আদালতে জানিয়েছি। ওনাদের উদ্দেশ্য এক দফার আন্দোলন। আরেকজন বলছে তুমি কবে বাংলা ছাড়বা। ওনারা পলিটিক্যাল উদ্দেশে এসেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আদালত বলেছেন- এটা তো একদফার আন্দোলন হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে এটাকে আপনারা কীভাবে ডিপেন্ড করেন। আপনারা চালাকি করতেছেন। একদফা বানাতে চাচ্ছেন।  

এর আগে ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী এ রিট করেন। তারা হলেন আইনজীবী মনজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।

রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

রুলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি তাজা গুলির ব্যবহার কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং তাজা গুলি ব্যবহার না করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।  

একইসঙ্গে তথাকথিত নিরাপত্তার নামে হেফাজতে নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দ্রুত মুক্তি দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রিটে সে মর্মেও রুল চাওয়া হয়েছে।

২৯ জুলাই ও ৩০ জুলাই এ রিটের ওপর শুনানি হয়। গত ৩১ জুলাই রিটটি আদেশের জন্য বেঞ্চটির কার্যতালিকায় ওঠে। তবে বেঞ্চের একজন বিচারপতি অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় সেদিন দ্বৈত বেঞ্চ বসেনি। একই কারণে গত বৃহস্পতিবার দ্বৈত বেঞ্চ বসেনি। তাই শুনানি হয়নি।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২৪
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।