ঢাকা, শনিবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

খুন-গুমের শিকার আত্মা প্রধান বিচারপতির কাছে ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
খুন-গুমের শিকার আত্মা প্রধান বিচারপতির কাছে ন্যায় বিচারের প্রতীক্ষায়

ঢাকা: অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান বলেছেন, খুন-গুম-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সব আত্মা ন্যায় বিচারের প্রতিক্ষায় প্রধান বিচারপতির দিকে তাকিয়ে আছে।  
সোমবার সোমবার (১২ আগস্ট) রেওয়াজ অনুযায়ী নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেওয়া সংবর্ধনায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গোটা দেশবাসীর মতো আমিও আশা করি আপনি (প্রধান বিচারপতি) তাদের বিমুখ করবেন না।
আপিল বিভাগের এক নং এজলাস কক্ষে এ সময় সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতি, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতিসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, দ্বিতীয় মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আপনি। আপনাকে রাষ্ট্রপতিই শুধু পছন্দ করে নিয়োগ দেননি, আপনার নিয়োগের পেছনে রয়েছে এদেশের শত শত ছাত্রের বুকের তাজা রক্তে ভেজা রাজপথের কালজয়ী অমর কাব্যের এক বীরত্ব গাঁথা উপাখ্যান। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল।  
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো গুম হওয়া মানুষের আত্মা, অসংখ্য মানুষের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার বেদনা, অগনিত মানুষের নির্যাতন-নীপিড়নের গল্প, অনেক মৃত মানুষের মামলায় আসামি হওয়ার অভিশাপ, অনেক পরিবারের নিঃস্ব হওয়ার হাহাকার থেকে উৎসারিত প্রতিবাদের ভাষা থেকে প্রতিরোধে রূপ নেওয়ার অন্য অবয়ব আজকের বাংলাদেশ।  
এই দেশকে, এই দেশের সংবিধানকে, এদেশের মানুষের অধিকার রক্ষার্থে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে আপনার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবকত্ব প্রকাশ পাক এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ-ফারাজসহ শত শহীদের প্রত্যাশা ছিল, তাদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত কারণ ছিল।  

আশা করি আপনার নেতৃত্বে সবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি আরও বলেন, গোটা জাতি প্রত্যাশা করে, বিচার বিভাগ সিন্ডিকেট মুক্ত হোক। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের ভেতর শুদ্ধি অভিযান করে সকল ধরনের দুর্নীতি নির্মূল করার প্রত্যাশা রাখছি।  

গত দেড় দশকের কথা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কারাগার, ব্যবসা পাড়া, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একটি ধারণা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, সরকারি দলের সংশ্লিষ্ঠতা থাকলে বিচাররকদের নিকট থেকে আনুকূল্য পাওয়া যায়। এটা আর ধারণার পর্যায়ে নেই, এটি আজ বিচার বিভাগ ধ্বংসের এক নির্মম বাস্তবতা। দুর্নীতির প্রচলিত ধারণায় অর্থনৈতিক লেনদেনকে বুঝালেও, বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি ডিনামাইটের চেয়েও ধ্বংসাত্মক, এটম বোমার চেয়েও ভয়াবহ, ক্যানসারের চেয়েও মরণঘাতি।  

তিনি বলেন, দেশ আজ গণতন্ত্রহীন, মানুষ অধিকারহীন, গণমাধ্যমের কন্ঠরুদ্ধ। ওইসব মরণঘাতি বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির কারণে এই অঙ্গনে মেধাবী আইনজীবীরা অনেকেই শুরুতেই ঝরে যায়, ফুটে ওঠে দূবৃত্তায়িত রাজনীতির কিছু বিবেকহীন আইনজীবী, যার ফলে ভালো আইনজীবী তৈরি হচ্ছে না।

ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। তারপর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এরপর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

বাংলাদেশ সময় ১৩২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২৪
ইএস/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।