ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাড়িভাড়া না দেওয়ায় বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে নোটিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
বাড়িভাড়া না দেওয়ায় বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে নোটিশ

ঢাকা: সরকারি বাড়ির ভাড়া পরিশোধ না করায় সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর (মানিক) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।

বুধবার (২১ আগস্ট) দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, তদন্ত কমিশনার, অনুসন্ধান কমিশনার ও সচিব বরাবর এ নোটিশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত ১৫ আগস্ট ‘সরকারি বাড়ির ভাড়া পরিশোধ করছেন না শামসুদ্দিন চৌধুরী’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রতিবেদন ছাপা হয়।  

প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশে বলা হয়, অবসরে যাওয়ার পর এক বছরের বেশি সময় রাজধানীর গুলশানে একটি সরকারি বাড়ি দখলে রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।  

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বাড়িটি ছাড়ার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছিল। তারপরও তিনি বাড়িটি ছাড়ছিলেন না। অবশেষে ২০১৭ সালের মে মাসে শামসুদ্দিন চৌধুরী বাড়িটি ছাড়েন। তবে বাড়িভাড়া, গ্যাস ও পানি বিল বাবদ সরকারের পাওনা ১৪ লাখ ১৯ হাজার ২০০ টাকা তিনি এখনো পরিশোধ করেননি।

‘সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের নথি অনুযায়ী, শামসুদ্দিন চৌধুরী বিচারপতি হিসেবে ঢাকার গুলশানে ৩৫ নম্বর সড়কে সরকারি একটি বাড়ি বরাদ্দ পেয়ে সেখানে ওঠেন ২০১২ সালের নভেম্বরে। তিনি অবসরে যান ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর। অবসরের পর বাড়িটিতে আরও দুই বছর থাকবেন বলে জানিয়ে সরকারি আবাসন পরিদপ্তরকে চিঠি দেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।  

আবাসন পরিদপ্তর সূত্র জানায়, তাকে ছয় মাস থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। সে হিসেবে বিচারপতি মানিকের বাড়ি ছাড়ার কথা ২০১৬ সালের এপ্রিলে। কিন্তু ওই সময়ে তিনি বাড়ি ছাড়েননি। ছাড়েন আরও এক বছরের কিছু বেশি সময় পর (২০১৭ সালের মে মাসে)।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন উল্লেখ করে নোটিশে আরও বলা হয়, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, শামসুদ্দিন চৌধুরী বেঁধে দেওয়া সময়ের চেয়ে যত দিন বেশি সময় ওই বাড়িতে ছিলেন, সেই সময়ের বাড়িভাড়া, পানি বিল ও গ্যাস বিল বাবদ সরকারের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ টাকা।  

এর বাইরে সরকারি চাকরিরত অবস্থায় তিন বছর ওই বাড়িতে থাকার সময় তার বেতন থেকে বাড়িভাড়া, পানি বিল ও গ্যাস বিল কাটার বিবরণীর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার কাছে ওই তিন বছরে পরিষেবা বিলের বিবরণী চাওয়া হয়েছিল। তবে তিনি তা দেননি।

আবাসন পরিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ওই তিন বছরে কত টাকা পাওনা, সে হিসাব তারা করেননি।

অবসরে যাওয়ার পর সরকারি বাড়ি ছাড়তে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছিল সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। নথিপত্র বলছে, চিঠির জবাবে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিরা ১২ মাস বিনা ভাড়ায় সরকারি বাড়িতে বসবাস করতে পারেন।  

এর জবাবে আবাসন পরিদপ্তর থেকে জানানো হয়, বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পর এক বছর বিনা ভাড়ায় থাকতে পারার সরকারি কোনো আদেশ, নির্দেশ বা পরিপত্র নেই।  

সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বকেয়া টাকা চাইতে গেলে শামসুদ্দিন চৌধুরী অস্বীকৃতি জানাতেন। বাজে ব্যবহারও করতেন। পরে তার কাছে টাকা চাওয়া বন্ধ করে দেন কর্মকর্তারা।

নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি বাসা ছেড়ে দেওয়ার পর সব কর্মকর্তাকে আবাসন পরিদপ্তর থেকে না-দাবি সনদ নিতে হয়। শামসুদ্দিন চৌধুরী এ সনদের জন্য আবেদনই করেননি।

শামসুদ্দিন চৌধুরী সরকারি ওই বাড়ি ছাড়ার পর সেখানে ওঠেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনি ওই বাড়ি ছেড়ে দেন। বাড়ি ছাড়ার পর তার বাড়িভাড়াসহ সব পরিষেবা বিলের বিবরণী আবাসন পরিদপ্তরে জমা দেন। বাড়ি ছাড়ার পর এসব বিবরণী জমা দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু শামসুদ্দিন চৌধুরী তা দেননি।

নোটিশে বলা হয়, পত্রিকার এই প্রতিবেদন থেকে জনমনে এ বিশ্বাস জন্মানোর যথেষ্ট অবকাশ থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) সরকারি বাড়ির ভাড়া এবং পরিষেবা বিল পরিশোধ না করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যা স্পষ্টত দুর্নীতি।  

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশন দুদক আইন, ২০০৪ এর ১৭(গ) ধারা অনুসারে এ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে স্ব-উদ্যোগে অনুসন্ধান শুরু করতে পারে।

এ অবস্থায়, রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) কর্তৃক সংঘটিত এরকম অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হলো। এ বিষয়ে নেওয়া পদক্ষেপ নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে নোটিশে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৪
ইএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।