ঢাকা, সোমবার, ৫ কার্তিক ১৪৩১, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘সাহস থাকলে দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হন, এটা সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই কথা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
‘সাহস থাকলে দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হন, এটা সাবেক প্রধানমন্ত্রীরই কথা’ অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান

ঢাকা: প্রত্যেক আসামির উচিত আদালতের সামনে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া, আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়তো সেটাই করবেন।

আওয়ামী লীগ প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে এক প্রশ্নে রোববার (২০ অক্টোবর) এমন মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছেন। ওনার নিজের বক্তব্য আপনারা এক্সামিন (পর্যালোচনা) করে দেখেন। ওনারা (বিভিন্ন সময়ে অন্যদের) বলেছেন, ‘সাহস থাকলে বাংলাদেশে এসে আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বিচারের মুখোমুখি হন। ’ আশা করি উনি এটা বিশ্বাস করেন এবং এটা ওনার জন্য ভালো হবে। ”

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘ওনার বক্তব্য, উনি যে দর্শনে বিশ্বাস করেন, প্রত্যেকটা আসামির উচিত আদালতের সামনে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া, উনি হয়তো সেটাই করবেন। ’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালানো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।  

মামলার পরবর্তী তারিখ ১৮ নভেম্বর রেখে এই সময়ের মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।  

অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রথমবারে মতো ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কাজ শুরু হয়। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোর্টের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর মামলার আবেদন পড়ে শোনান।

এ সময় সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে গুম, খুন, তথ্য প্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলার পরিসংখ্যান, অর্থ পাচারের পরিসংখ্যান এবং সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনে বলপ্রয়োগের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

চিফ প্রসিকউটর আদালতে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে তদন্তে গণহত্যার প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি প্রভাবশালী। এখনো দেশের বিভিন্নস্থানে আসামির লোকজন বিভিন্ন পজিশনে আছে। তাই আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মামলার তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করছি।

এক পর্যায়ে আদালত জানতে চান, রাষ্ট্রীয়ভাবে আসামির অবস্থান জানেন কি না। জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, না।

তারপর আদালত চিফ প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আর ১৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করতে বলেন।

পরে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে এই আদালতে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর বরাবরে আবেদন করা হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরাও এর আওতায় থাকবেন। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে।

অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, এক থেকে নয় নম্বর আসামির নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্যান্য আসামিরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে।

গণহত্যার অভিযোগে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য, র‌্যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৪
ইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।