ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সুপেয় পানি: যে সংকটের মুখোমুখি বিশ্ব

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
সুপেয় পানি: যে সংকটের মুখোমুখি বিশ্ব

পানির সংকট একটি বৈশ্বিক সংকট। যতোই দিন যাচ্ছে এ সংকট আরো তীব্র হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এ সংকট। বিশ্বের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী পানি সংকটে মধ্যে রয়েছে। আর সুপেয় পানির  সংকটে রয়েছে ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ।

পানির অপর নাম জীবন। জীবনের অধিকার মানে পানির অধিকার। পানি থাকলেই জীবন থাকবে। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায়না।  

এক পরিসংখ্যান বলছে, সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে বিশ্বে প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৪০০ শিশুর মৃত্যু ঘটছে। অন্য পরিসংখ্যান বলছে, এ সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার হবে। তার মানে শিশুরা পানি সংকটের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।

সুপেয় পানির প্রাপ্তির সুযোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ পানি অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও এখনো এ অধিকার থেকে বঞ্চিত ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ। তাই সুপেয় পানির অধিকার রক্ষা করা আজ জরুরি। না হলে সংকটাপন্ন এলাকাগুলো আরো বেশি ঝুকির মধ্যে পড়বে।

নিরাপদ পানির অধিকারবঞ্চিত এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আবার চরম দরিদ্র। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাস করে গ্রামে। সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে নারী ও শিশুরা। এশিয়া ও আফ্রিকার সংকট ভয়াবহ।  

ইউনিসেফের এক জড়িপ বলছে, চীনের ১০ কোটি ৮০ লাখ; ভারতের ৯ কোটি ৯০ লাখ ও নাইজেরিয়ার ৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে ইথিওপিয়ায় ৪ কোটি ৩০ লাখ; ইন্দোনেশিয়ায় ৩ কোটি ৯০ লাখ ও পাকিস্তানে ১ কোটি ৬০ লাখ সুপেয় পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের দেশেও আছে চরম সংকট। এখানে প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ জনগোষ্ঠী পানি সংকটের মধ্যে জীবন যাপন করে।

বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানির অভাব এখানে ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। পৃথিবীতে যতো মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার চেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে। পানিবাহিত রোগের প্রভাবে মৃত্যুর পরিমান এখনো বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে প্রতিদিন মৃত্যু বরণ করে হাজারো মানুষ। এদের অধিকাংশই আবার শিশু।

ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে সুপেয় পানির সুযোগবঞ্চিত জনসংখ্যার দিক দিয়ে আমাদের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। অথচ ধান-নদী-খালের দেশে বাংলাদেশ। কিন্তু মানুষের বিভিন্ন পরিবেশ বিপন্নকারী কাজের ফলে সব আজ মরতে বসেছে।

আমাদের একটি পানি অধিকার বিষয়ক আইন রয়েছে। এ আইনে সুপেয় পানি এবং পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার্য পানি অধিকার হিসেবে বিবেচিত। পানির অধিকার যেমন সবারই রয়েছে তেমনি পানির অপচয় ও অপব্যবহার  রোধ করা সবারই দায়িত্ব। কিন্তু পানির ‍অধিকার আইন দিয়ে রক্ষা করা যায়না। প্রথমে চাই পানির সরবরাহ। এর পর অধিকারের প্রশ্ন। তাই পানি প্রাপ্তির বিষয়ে আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে। আসলে এখানে অধিকারের আগে দায়িত্বের বিষয়টিই চলে আসে।

১১ নম্বর অনুচ্ছেদে উন্নত জীবন যাত্রার মান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে ৷ জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ হয় পর্যাপ্ত পানি পায় না। বলা হচ্ছে, আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ ৯শ’ ৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৭শ’ কোটিই পানির সমস্যায় পড়বেন। কাজেই এ সমস্যা মোকাবেলা করতে হলে পানির অপচয় রোধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।