ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘তাদের ছেড়ে দিলে যেকোনো ব্যক্তি আদালত অবমাননা করবেন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৬
‘তাদের ছেড়ে দিলে যেকোনো ব্যক্তি আদালত অবমাননা করবেন’

ঢাকা: দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননার আদেশ ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘তারা প্রধান বিচারপতি ও সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিচার বিভাগের মর্যাদাহানি করেছে। বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন।

যদি তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে যেকোনো ব্যক্তি বিচার বিভাগ সম্পর্কে একইরকম অবমাননাকর বক্তব্য দেবেন’।
 
রোববার (২৭ মার্চ) দুই মন্ত্রীর অর্থদণ্ড ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতের সব বিচারকরা বেশ কয়েকদিন ধরে তাদের বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করেছি। দৈনিক জণকণ্ঠ পত্রিকায় যাদের নাম এসেছে আমরা তাদের সবাইকে ইচ্ছাকৃতভাবে ডাকিনি। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা নেইনি। নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেইনি। আমরা এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাইনি। শুধুমাত্র দুইজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে বিচারিক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এর কারণ গোটা দেশবাসীর কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, কেউ যদি এর পুনরাবৃত্তি করেন, তবে আমরা কতো কঠোর হতে পারি’।
 
‘দুই মন্ত্রী আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন। তাদের এই আবেদন গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করছি। তারা মন্ত্রী। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত। তারা সংবিধান রক্ষায় শপথ নিয়েছেন। তারা প্রধান বিচারপতি ও সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার বিচার বিভাগের মর্যাদাহানি করেছেন। বিচার প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন’।
 
প্রধান বিচারপতি বলেন,‘যদি তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে যেকোনো ব্যক্তি বিচার বিভাগ সম্পর্কে একই রকম অবমাননাকর বক্তব্য দেবেন। তাদের বক্তব্য গুরুতর আদালত অবমাননামূলক। তাই তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করছি। যেহেতু তারা শুরুতেই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছেন। তাই তাদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে। তাদের আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হলো। ’ 
 
‘বির্তর্কিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কেন মন্ত্রীরা?’
 
আদালত অবমাননার শুনানির এক পর্যায়ে খাদ্যমন্ত্রীর আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাদের সঙ্গে মন্ত্রীরা বক্তৃতা করেছেন, তারা তো বিতর্কিত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে মন্ত্রীরা কেন গেলেন? এটাতো নৈতিকতার প্রশ্ন’।
 
‘কে কতো টাকা নিয়েছেন, জানা যাবে রায়ে’
শুনানির আরেক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, রায়তো (মীর কাসেম আলী) চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা জানি, টাকা কোন দিকে ফেলা হয়েছে? কার কাছ থেকে কতো টাকা নেওয়া হয়েছে, এটা রায়ে দিয়ে দেবো। আজ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা হয়েছে। যতো ক্ষমতাধর ব্যক্তিই হোক না কেন, হাউজিং কোম্পানি, বুড়িগঙ্গা দখল ইত্যাদি মামলায় হাইকোর্ট যে রায়ই দিন না কেন, আজ পর্যন্ত এই আদালত(আপিল বিভাগ) মাথানত করিনি। করবোও না’।
 
গত ৫ মার্চ রাজধানীর ধানমণ্ডিতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি আয়োজিত ‘৭১ এর গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ বক্তারা প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের সমালোচনা করেন। তারা প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে মীর কাসেম আলীর আপিল মামলায় পুনরায় আপিল বিভাগে শুনানির দাবি জানান।
 
এরপর ৮ মার্চ দুই মন্ত্রীকে তলব করে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। তাদের ১৪ মার্চের মধ্যে রুলের জবাব দাখিল এবং ১৫ মার্চ আদালত হাজির থাকার নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত। নির্ধারিত ১৪ মার্চের মধ্যে উভয় মন্ত্রী আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের ব্যাখ্যা দাখিল করেন। ১৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আদালতে হাজির হলেও খাদ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন জানান। আদালত ২০ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় ২০ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে সম্পূরক ব্যাখ্যা দাখিল করেন। এদিন আদালত খাদ্যমন্ত্রীর জবাব দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালত ২৭ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করে এদিন দুই মন্ত্রীকে ফের হাজির থাকতে নির্দেশ দেন।

রোববার হাজির হওয়ার পর দুই মন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আপিল বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।