ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বাড়ি হারাচ্ছেন মওদুদ, তবে দুদকের মামলা বাতিল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৬
বাড়ি হারাচ্ছেন মওদুদ, তবে দুদকের মামলা বাতিল

ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের একটি বাড়ি নিয়ে মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা বাড়ি আত্মসাতের মামলা বাতিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে তার ভাই মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন (নামজারি) করার জন্য হাইকোর্টের দেওয়া রায়ও বাতিল করে রাজউকের আপিল গ্রহণ করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।

 

এর ফলে বাড়িটি মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে নামজারি করতে হবে না। ফলে ভাইয়ের নামে দখল করা বাড়িটি মওদুদকে ছাড়তে হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

 

মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, মনজুর আহমদের নামে নামজারি করতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিলে রাজউকের করা আপিল মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে দুদকের মামলাটির অভিযোগ আমলে নেওয়া বৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে মওদুদ ও তার ভাই মনজুরের করা আপিল নিষ্পত্তি করে মামলাটি বাতিলের আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

রায়ের পরে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সাত বছর পর প্রতিহিংসা বশত সরকার আপিল করেছে। ১৯৮১ সাল থেকে আমরা এ বাড়িতে থাকি। এটি ক্রয় করা বাড়ি, সরকারের বাড়ি নয়। আপিল বিভাগের রায় দেখে আমরা অবশ্যই রিভিউ করবো’।

মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আপিল বিভাগে একই বিষয়ে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুদক মামলা করেছিলো। তাই সেটা আজকে বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ’।

রাজউকের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘মওদুদ আহমদের ভাইকে উচ্ছেদের জন্য সরকার মামলা করেনি। মওদুদ আহমদের ভাই নিজেই মামলা করেছেন। কাজেই এখানে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও উদ্দেশ্য নেই। নিম্ম আদালতে তারা হেরে গিয়ে উচ্চ আদালতে এসেছেন। সেখানে মওদুদ আহমদরা জিতেছেন। এবং হাইকোর্ট মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে বাড়িটি নামজারি করতে রাজউককে নির্দেশ দিয়েছিলেন’।

‘হাইকোর্টের আদেশের পর আমি অস্ট্রিয়ায় যাই। সেখান থেকে বাড়ির মালিক অস্ট্রিয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর সনদ নিয়ে আসি। আমরা আপিল বিভাগে দেখাতে সক্ষম হয়েছি যে, মওদুদ আহমদের ভাই যে তারিখে চুক্তিনামা করেছিলেন, তার আগেই মারিয়া মারা গেছেন’।

তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে মওদুদ আহমদকে বাড়িটি দেখাশোনা করার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছিলেন মারিয়া। কিন্তু তিনি তার ভাইয়ের নামে ডিক্রি ও মিউটেশনের (নামজারি) আদেশ নিয়ে নিয়েছেন। আজকে এ দু’টি বিষয় আপিল বিভাগ বাতিল করেছেন’।

মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘রাজউকের মূল আপিল তামাদি হওয়ার কারণে খারিজ হয়েছিলো। আমরা এ খারিজাদেশের বিষয়ে রিভিউ করেছি। সেটা মঞ্জুর হয়েছে’।

‘এ রায়ের ফলে মওদুদের ভাইয়ের সম্পত্তির (বাড়ি) দাবি অগ্রাহ্য। তারা যে এখন বসবাস করছেন, তা অবৈধ দলখদার বলে গণ্য হবে’।

উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাজউক আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেবে। তিনি (মওদুদ) রিভিউ করবেন, সেটি আইনের বিষয়। রাজউক ও সরকার পদক্ষেপ এগিয়ে নেবে’।

নামজারি
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেন।

রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে ২০১১ সালের ০৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১৪ সালের ০৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর চলতি বছর এ মামলার শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন।  

দুদকের মামলা
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত। এর বিরুদ্ধে তাদের আবেদন গত বছরের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ। এ আবেদনের শুনানি শেষ হওয়ার পর রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার দু’টি বিষয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।

দুদকের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়,‘বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয় নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।

এরপর ১৯৭৩ সালের ০২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন বলে মামলায় অভিযোগ করে দুদক।

আদালতে মওদুদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত মাহমুদুল ইসলাম, আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও এ জে মোহাম্মদ আলী।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৬/আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা
ইএস/এএসআর

** রিভিউ আবেদন জানাবেন মওদুদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।