ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

৩৪ কোম্পানির ওষুধ প্রত্যাহারের আদেশ হাইকোর্টের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৬
৩৪ কোম্পানির ওষুধ প্রত্যাহারের আদেশ হাইকোর্টের

ঢাকা: মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০ ওষুধ কোম্পানি ও অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদনকারী ১৪ কোম্পানির যেসব ওষুধ এখনও বাজারে আছে তা দ্রুত বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ওই ৩৪ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও সেসব ওষুধ এখনও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

এর প্রেক্ষিতে করা একটি আবেদনের শুনানি শেষে সোমবার (০৮ অাগস্ট) বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শশাঙ্ক শেখর সরকার।

উৎপাদন বাতিল হওয়া ২০টি ওষুধ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করা ১৪টি কোম্পানি হলো, আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।

মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ হওয়া ওই ২০টি কোম্পানির সব ধরনের ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদন বন্ধে গত ০৭ জুন আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ। কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত।

সাতদিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালককে বলেছিলেন আদালত।

এছাড়াও আদালত রুল জারি করেন। এসব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং লাইসেন্স বাতিলে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।      

এরপর ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ও এমএসটি ফার্মা’র পক্ষে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানানো হয়। চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত গত ১৩ জুন শুনানি শেষে এ আবেদনে নো অর্ডার দিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন এবং ১৫ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন।  

এ আবেদনের শুনানি শেষে ১৫ জুন হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

একই সঙ্গে হাইকোর্টের জারি করা রুল আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেন সর্বোচ্চ আদালত।

এরপরও দৈনিক পত্রিকায় মানহীন ৩৪ কোম্পানির ওষুধ এখনও বাজারে শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ বিষয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন রিটকারী পক্ষ। এ আবেদনে সাড়া দিয়ে সোমবার ওই কোম্পানিগুলোর ওষুধ প্রত্যাহারের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।  

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত ০৫ জুন রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

মনজিল মোরসেদ জানান, ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

এ কমিটিতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো. সাহাবুদ্দিন কবীর চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী।

এ বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন গত ১ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দেন। যাতে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা ছাড়াও ১৪টি কোম্পানির সব ধরনের অ্যান্টিবায়েটিক (নন-পেনিসিলিন, পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন গ্রুপ) ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল চান।

কিন্তু ওই সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয় বলে জানান মনজিল মোরসেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৬
টিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।